শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

টেকনাফ সীমান্তে আবারও গুলির শব্দ, আতঙ্ক

মিলিটারি স্কুলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আরাকান আর্মি

নিজস্ব প্রতিবেদক

তিন দিন বন্ধ থাকার পর আবারও কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এতে নতুন করে সীমান্তের বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক বেড়েছে, উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার হ্নীলা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের সীমান্তের ওপারে বিস্ফোরণের পাশাপাশি বিমান থেকে গোলাবর্ষণের মতো ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের জেরে সর্বশেষ গত সোমবারের পর থেকে আর কোনো বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। হোয়াইক্যং ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী উনচিপ্রাং, কাঞ্জরপাড়া এবং হ্নীলা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, নাফ নদের ওপারে অন্তত দুই থেকে তিন কিলোমিটারের ভিতরে রাখাইন রাজ্যের বলিবাজার ও নাকপুরা এলাকায় দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘাত চলছে। গতকাল ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা গেছে। আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ নেওয়া বলিবাজার এলাকায় মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সদস্যরা হামলা চালিয়েছে বলে ধারণা স্থানীয়দের। টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, তিন দিন পর ভোর থেকে সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত বিকট শব্দ ভেসে আসে। দুপুরের পর থেকে শব্দ কমলেও থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজালাল বলেন, আবারও গোলাগুলির শব্দে সীমান্তের লোকজন আতঙ্কে রয়েছেন। বিজিবির টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ জানিয়েছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি সদস্যদের টহল জোরদার করা হয়েছে।

মিলিটারি ট্রেনিং স্কুলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আরাকান আর্মি : রাখাইন রাজ্যের মিনবিয়া টাউনশিপে অবস্থিত মিয়ানমার সরকারের সর্বশেষ বড় ঘাঁটি নবম সেন্ট্রাল মিলিটারি ট্রেনিং স্কুলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আরাকান আর্মি। ১০ দিনের তীব্র লড়াইয়ের পর গত মঙ্গলবার মিলিটারি ট্রেনিং স্কুলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে দাবি করেছে তারা। দ্য ইরাবতীর এক প্রতিবেদনে জানায়, তারা মিনবিয়া শহরের জান্তা বাহিনীর একটি সামরিক প্রশিক্ষণ স্কুল ঘাঁটির পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। আরাকানের ইয়োমা পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত প্রশিক্ষণ বিদ্যালয়টি ছিল মিনবিয়া টাউনশিপের সর্বশেষ প্রধান জান্তা দুর্গ। এটি এক ডজনেরও বেশি ঘাঁটি এবং ফাঁড়ি দ্বারা বেষ্টিত এবং সুরক্ষিত ছিল। আরাকান আর্মি গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে স্কুলটির চারপাশে আক্রমণ শুরু করেছিল। আরাকান আর্মি বলছে, ঘাঁটি থেকে তারা বিশাল সংখ্যায় অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। এ সময় সেখানে জান্তা সৈন্যদের অসংখ্য লাশ পড়েছিল। আরাকান আর্মির যোদ্ধারা মিনবিয়া শহরের বাইরে অবস্থিত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর তিনটি ঘাঁটি লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ৩৮০, ৩৭৯ ও ৫৪১ এরও দখলে নিয়েছে। এসব ঘাঁটি দখলের পর মিনবিয়া শহরের নিয়ন্ত্রণও এখন নিজেদের হাতে রয়েছে বলে এক বিবৃতিতে দাবি করেছে আরাকান আর্মি। মিনবিয়ায় সর্বশেষ ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ হারানোর পর জান্তা সৈন্যরা মঙ্গলবার রাত পৌনে ২টায় মিন ফু গ্রামের একটি সরকারি হাসপাতালে যুদ্ধবিমান থেকে বোমা হামলা চালিয়েছে। বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে চালানো এই হামলায় অনেক রোগী ও হাসপাতালের কর্মী আহত হয়েছেন। জান্তার হামলায় হাসপাতালের একাধিক ভবনও ধ্বংস হয়েছে।

আরাকান আর্মি বলেছে, বিমান হামলার সময়ও হাসপাতালটিতে আটককৃত জান্তা সৈন্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা চলছিল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর