শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
করোনা-পরবর্তী গবেষণা ও জরিপ

যুক্তরাষ্ট্রে মানসিক অসুস্থ ৬৫ ভাগই এশিয়ান

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি

করোনা থেকে জেগে ওঠার পর নিউইয়র্ক অঞ্চলের বাংলাদেশিসহ এশিয়ান-আমেরিকানদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে অঞ্চল ও জাতিগত বিদ্বেষমূলক হামলা। এশিয়ান-আমেরিকান ফেডারেশনের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারীর মধ্যে ৬৫ ভাগ এশিয়ানই মানসিক অসুস্থতায় ভুগছে। তারা একাকিত্ব বোধ করছে এবং এর এক তৃতীয়াংশ সব সময় সন্ত্রস্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করছে।

‘সাহায্য চাই, আশার সন্ধানে : মানসিক স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ এবং নিউইয়র্কের এশিয়ান-আমেরিকানদের জন্য সমাধান’ শীর্ষক এ গবেষণা জরিপের ফলাফল গত সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। এটি পরিচালনা করা হয় বাংলা, চীনা, হিন্দি, উর্দুসহ এশিয়ান ১০ ভাষায়। গবেষণায় উঠে এসেছে, নিউইয়র্ক সিটির এশিয়ানরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে করোনাকালে। অনেকের লিগ্যাল স্ট্যাটাস না থাকায় সরকারপ্রদত্ত অর্থসহায়তা, বেকারভাতার কোনোটিই ন্যায্য হিস্সা অনুযায়ী তারা পায়নি। প্রশাসন ও রাজনীতিতে তেমন প্রতিনিধিত্ব না থাকায় এখনো সেবামূলক অনেক কিছু থেকেই তারা বঞ্চিত। এমনকি চলতি পথে ধর্ম-জাতি গত বিদ্বেষী হামলার শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কখনো কখনো পুলিশ প্রশাসন সরব থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভিকটিম প্রশাসনিক কোনো সহায়তা পায় না বলে অভিযোগ রয়েছে। একই ধরনের অবজ্ঞা-অবহেলা হাসপাতালগুলোয়ও ইদানীং দেখা যাচ্ছে। সিটি ও স্টেটের সব হাসপাতালেই বিভিন্ন ভাষার অনুবাদক রাখা হয়েছে দাবি করা হলেও প্রয়োজনের সময় কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। এর ফলে মানসিক চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে যাওয়া রোগীরা সত্যিকারের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জরিপে উদ্ঘাটিত হয়েছে, ৬৫ ভাগ এশিয়ানই দুশ্চিন্তায় দিনাতিপাত করছে। একইকত্ব তাদের কুরে কুরে খাচ্ছে। এমন ভীতির পরিস্থিতি তাদের গ্রাস করেছে করোনা প্রাদুর্ভাবের সময় থেকেই। জরিপে অংশ নেওয়া ৮০ ভাগ বলেছে, তারা মানসিক বিষণ্নতা, ক্রমাগত ক্লান্তি, অনিদ্রা, হৃৎস্পন্দন, মাথাব্যথা, প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্যের সংকটসহ মানসিক যন্ত্রণায় রয়েছে। মাত্র ৪৫ ভাগ জানিয়েছে, তারা মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। ৪৪ ভাগ জানিয়েছে, নিউইয়র্ক সিটিতে মানসিক চিকিৎসা যথাযথ নিতে প্রয়োজনীয় অর্থ তাদের নেই। জরিপের বিষয়ে এশিয়ান-আমেরিকান ফেডারেশনের নির্বাহী পরিচালক জো-অ্যান ইয়ো বলেন, ‘ভাষাগত দুর্বলতা এবং সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতার কারণে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পরিপূর্ণভাবে গ্রহণে সক্ষম হচ্ছে না এশিয়ান-আমেরিকানরা।’ নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটে মেন্টাল হেল্্থ কমিটির চেয়ার সিনেটর স্যামরা ব্রোউক বলেন, ‘আমরা যে কালচার বহন করছি তা শুধু মানসিক চিকিৎসার ক্ষেত্রেই প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা দিচ্ছে না, আমাদের সংস্কৃতির পরিপূরক গুণগত মানসম্পন্ন সেবা পেতেও সমস্যা তৈরি করছে।’ নিউইয়র্ক স্টেটের সিনেটর লিওয়েন চু উল্লেখ করেন, ‘মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিতদের সচেতন করতে আমাদেরও সরব থাকতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে কমিউনিটিভিত্তিক সংগঠনগুলোকে।’ নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের স্পিকার আদ্রিয়েন অ্যাডামস বলেন, ‘সব নিউইয়র্কবাসীর স্বার্থে স্বাস্থ্যসেবা ঢেলে সাজানোর প্রয়াস ত্বরান্বিত করতে হবে। এটাই সময়ের দাবি।’

সিটি কাউন্সিলে মানসিক স্বাস্থ্য, ডিজঅ্যাবিলিটি, মাদকাসক্ত বিষয়ক কমিটির চেয়ারপারসন কাউন্সিলওম্যান লিন্ডা লি বলেন, ‘এ সিটিতে বসবাসরত এশিয়ান-আমেরিকান অ্যান্ড প্যাসিফিক আইল্যান্ডারসদের চিকিৎসা নিয়ে বিরাজিত বৈষম্য অবসানের ক্ষেত্রে এ রিপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

 

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর