শনিবার, ২ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
ঢাকায় কেন এত আগুন

নজরদারির অভাবেই এত অগ্নিঝুঁকি

অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নজরদারির অভাবেই এত অগ্নিঝুঁকি

নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেছেন, প্রতিটি দুর্ঘটনার পর জানা যায় ওই ভবনটি নিয়ম মেনে তৈরি হয়নি, পর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না, বিভিন্ন আইনকানুন মানা হয়নি। অথচ সারা বছর ধরে আর কোনো নজরদারি দেখা যায় না। নজরদারির ঘাটতি থাকাতেই এত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন তৈরি হচ্ছে। অগ্নিকাণ্ডসহ নানা দুর্ঘটনা ঘটছে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ঢাকায় যেসব জায়গায় আগুন লাগতে দেখেছি, তাতে মূল কারণ হিসেবে সামনে এসেছে ভবনের মিশ্র ব্যবহার। একই ভবনে আবাসিক, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ব্যাংক, কাপড়ের দোকান সবই চলছে। চুড়িহাট্টা বা নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডে দেখলাম, সেখানে আবাসিক এলাকার মধ্যে দাহ্যবস্তু মজুত করা ছিল। গত পরশু বেইলি রোডে রেস্টুরেন্ট থেকে আগুন লাগল। বাণিজ্যিক ভবনে রেস্টুরেন্ট থাকে। সেখানে যে পরিমাণ মানুষের জমায়েত হয়, তাতে আগুন লাগলে ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। আমরা দেখছি এই বহুতল ভবনগুলোয় যে ধরনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকার কথা, তা ছিল না। এ কারণেই এত জানমালের ক্ষতি। পর্যাপ্ত নজরদারি ও আইনের কঠোর প্রয়োগ থাকলে এসব দুর্ঘটনা অনেকাংশে এড়ানো যেত।

আমরা দেখছি ঢাকা শহরে বিএনবিসি (বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড) তৈরি হয়েছে। সেখানে ইমারত নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ তৈরির কথা বলা ছিল। বিএনবিসি তৈরি হয়েছে কিন্তু কর্তৃপক্ষ তৈরি হয়নি। ফলে বিএনবিসি প্রয়োগে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। একটা বিল্ডিং তৈরি হবে, তার নজরদারি থাকবে, নির্দেশনাগুলো মানা হচ্ছে কি না তা দেখভাল হবে, এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু ঢাকা শহরে একটি দুর্ঘটনা ঘটলে বের হয় বিল্ডিংটিতে নানা নির্দেশনা মানা হয়নি। নিয়মমাফিক তৈরি হয়নি। কোনো একটি দুর্ঘটনা ঘটার পর যে তৎপরতা দেখা যায়, সারা বছর ধরে আর কোনো তৎপরতা দেখা যায় না। এটা বাড়ানো দরকার।

তিনি বলেন, দুর্ঘটনা ঘটার পর শোনা যায় ফায়ার সার্ভিস ওই ভবনকে নোটিস দিয়েছিল। কিন্তু নোটিস দিয়ে তো কোনো কাজ হয়নি! নিয়মের ব্যত্যয় করলে নির্দিষ্ট সময় দেওয়ার পর ভবনটি বন্ধ করে দিতে হবে। তখন ভবন মালিকরা নিয়ম মানতে বাধ্য হবে। বাধ্য না করলে তো আইনের প্রয়োগ করা যায় না। আকতার মাহমুদ বলেন, ভবনগুলোতে অগ্নিনিরাপত্তার আইনকানুন মানার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডের যথাযথভাবে প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) লোকবল ও নজরদারিতে ব্যাপকভাবে পরিবর্তন আনা দরকার। টেকনিক্যাল লোকজন যে পরিমাণ থাকা দরকার, সেখানে মনে হয় যথেষ্ট ঘাটতি আছে।

সর্বশেষ খবর