শনিবার, ২ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
রাখাইনে জান্তার শেষ ঘাঁটি পতনের মুখে

বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দে প্রকম্পিত সীমান্ত

কক্সবাজার, টেকনাফ ও বান্দরবান প্রতিনিধি

কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত এলাকা মাঝে মাঝেই ওপার থেকে বিস্ফোরণ এবং গোলাগুলির শব্দে প্রকম্পিত হচ্ছে। এদিকে বিভিন্ন সূত্রের খবর অনুযায়ী, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পাহাড়ের ওপর অবস্থিত জান্তা বাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটিটি পতনের মুখে রয়েছে। এটি দখলের জন্য বিদ্রোহীরা ছয় দিন ধরে লড়াই করে যাচ্ছে।

এদিকে কক্সবাজার উপজেলার হ্নীলা সীমান্তের ওপার থেকে গতকাল গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা গেছে। টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী সকালে জানান, তিন দিন পর সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। গতকাল সকাল থেকে থেমে থেমে গোলাবর্ষণের বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। রাতেও গোলাগুলির শব্দে কেঁপেছে সীমান্ত এলাকা। তিনি আরও জানান, মিয়ানমারের বলিবাজার ও নাকপুরা পাড়ার দিকে আকাশে বিমানের চক্কর দিতে দেখা গেছে। বিমান থেকে গুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটেছে। গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের ঘটনা সীমান্ত থেকে মিয়ানমারের ৪/৫ মাইল ভিতরে ঘটেছে বলে মনে হয়েছে।

টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী উনচিপ্রাং, কাঞ্জরপাড়া এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত নাফ নদের ওপারে ২ থেকে ৩ কিলোমিটার ভিতরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বলিবাজার ও নাকপুরা এলাকায় সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির মধ্যে তীব্র সংঘর্ষের কথা জানা গেছে। সীমান্তের সূত্রগুলো জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্যে সীমান্ত চৌকি দখল-পুনরুদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশটির সরকারি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করছে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। আরাকান আর্মির দখলে থাকা একটি সীমান্ত চৌকি পুনরুদ্ধারে হেলিকপ্টারে করে মর্টার শেল ও গুলি ছোড়ে সরকারি বাহিনী। শক্তি ও উপস্থিতি জানান দিতে গুলি ছুড়ে পাল্টা জবাব দেয় আরাকান আর্মিও। টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র-২ মুজিবুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার পর থেকে রাখাইনের মংডু শহরের পাশের বলিবাজার, পেরাংপুরুসহ কয়েকটি এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। মর্টার শেলের বিকট শব্দে টেকনাফের মানুষের ঘুম হারাম করে দেয়। আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটান অনেকে। হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ শাহ জালাল জানান, তাঁর এলাকার মানুষজনও রাতভর ওপারের গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছেন।

এদিকে বিদ্রোহীদের মুখপত্র দ্য ইরাবতী জানিয়েছে, বিদ্রোহী গেরিলাদের সঙ্গে তীব্র লড়াইয়ে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা রাখাইনে তাদের সর্বশেষ ঘাঁটিটিও হারাতে বসেছে। বিভিন্ন দিক থেকে গেরিলারা পাহাড়ের ওপরে অবস্থিত এই ঘাঁটিটির ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে। এ ঘাঁটির পতন ঘটলেই রাখাইন থেকে পুরোপুরিভাবে বিতাড়িত হবে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী।

গতকালের সর্বশেষ খবরে বলা হয়, জান্তা বাহিনী কাচিন রাজ্যের জেড মাইনিং হাবের বড় পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত শেষ ঘাঁটিটি রক্ষার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিদ্রোহী কাচিন ইন্ডিপেনডেন্স আর্মি (কেআইএ) এবং পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) টানা ষষ্ঠ দিনের মতো যৌথ আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। রাখাইনের তর মা খান গ্রামের কাছে জান্তার নিয়ন্ত্রণে থাকা এটিই জান্তা বাহিনীর শেষ পাহাড়ি ঘাঁটি। এর আগে মঙ্গলবার কেআইএ এবং পিডিএফ নান্ট ইয়া তাং পাহাড়ে একটি ছোট পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে নেয়।

সর্বশেষ আক্রমণ সম্পর্কে গতকাল কেআইএর একজন যোদ্ধা গণমাধ্যমকে বলেন, জান্তা বাহিনীর এই পাহাড়ি ঘাঁটিটি অত্যন্ত সুরক্ষিত। জান্তা সেনারা এটিকে রক্ষার জন্য আশপাশের এলাকায় বোমা বর্ষণে ফাইটার জেট ব্যবহার করছে। বিমান হামলায় দুটি ব্যাপ্টিস্ট চার্চ, বাড়ি এবং অন্যান্য ভবন ধ্বংস হয়। এ ছাড়া হাপাকান্ট শহরে এবং তার কাছাকাছি জান্তা সামরিক ঘাঁটিগুলো থেকেও মা খান গ্রামে গোলা বর্ষণ করা হচ্ছে। প্রতিরোধ যোদ্ধারা জানান, এ ঘাঁটিটি পতনের মুখে রয়েছে। এটি দখল করতে আরও কিছু সময় লাগতে পারে। পাঁচ দিনে এখানে জান্তা বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তারা এক ডজনেরও বেশি সৈন্য হারিয়েছে। আরেক খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার থেকে রাখাইন রাজ্যের পোন্নাগিউন টাউনশিপে সংঘর্ষ তীব্র হয়েছে। আগের দিন বুধবার মংডু টাউনশিপের উত্তরে কাইইন চাং-ইয়ান অং পাইন রোডে ৮০ জন জান্তা সৈন্যের একটি সামরিক ইউনিটের সঙ্গে বিদ্রোহী এএ গেরিলাদের সংঘর্ষ হয়। পরে সংঘর্ষের স্থান থেকে সাতজন জান্তা সেনার লাশ সামরিক অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।

 

সর্বশেষ খবর