বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

ডলার আনা উৎসাহিত করবে অফশোর ব্যাংকিং আইন

♦ বিদেশিরা বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন ♦ অ্যাকাউন্ট খোলায় ভোগান্তির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে ডলার আনা উৎসাহিত করতে একের পর এক সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতদিন অফশোর ব্যাংকিং নীতিমালার আলোকে এ কার্যক্রম পরিচালিত হলেও ডলার প্রবাহ বাড়াতে এবার অফশোর ব্যাংকিং আইন করেছে সরকার। গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে অফশোর ব্যাংকিং বিল-২০২৪। আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, তফসিলি ব্যাংকগুলো ব্যাংকের ভিতরে আলাদাভাবে অফশোর ব্যাংকিং সেবা দেবে, যেটা প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের মতো নয়। এ জন্য ব্যাংকে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থাকবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। দেশে কার্যরত তফসিলি ব্যাংক ছাড়া কোনো ব্যক্তি অফশোর ব্যাংকিং ব্যবসা করতে পারবে না। ব্যাংকাররা বলছেন, বিধিনিষেধ সহজ করায় দেশে বিদেশি মুদ্রার প্রবাহ বাড়বে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন অফশোর ব্যাংকিং আইন সম্পর্কে সম্প্রতি গণমাধ্যমে বলেন, এটা এখন সর্বাধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা। পৃথিবীর বহু দেশ এ পদ্ধতি অনুসরণ করে তাদের বৈদেশিক রিজার্ভ ও আর্থিক কাঠামোকে সমৃদ্ধ করেছে। এতে করে তারা শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, এখানে একটা সুবিধা হবে বিদেশিরা ব্যবসা করে যে লভ্যাংশ পাবেন, সেটা এখন ব্যাংকে রাখবেন। কারণ এখন ব্যাংকে টাকা রাখলেই লাভ দেওয়া হচ্ছে। যেটা আন্তর্জাতিক মানের। সুতরাং এখানে বিদেশিরা বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। ব্যাংকাররা জানান, অফশোর ব্যাংকিং-এর আওতায় ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। অনাবাসী বাংলাদেশিরা বিদেশ থেকে যখন দেশে থাকা অফশোর ব্যাংকিং-এর অ্যাকাউন্টে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাবে, তখন সেই মুদ্রাতেই লেনদেন করবে। এ ছাড়া এ ধরনের অ্যাকাউন্টধারীদের সরকার প্রচুর ট্যাক্স বেনিফিট দিয়ে থাকে। কোনো অনাবাসী ব্যক্তি বা কোম্পানি যখন বাংলাদেশের অফশোর অ্যাকাউন্টে বিদেশি মুদ্রা পাঠাবে তখন সে নিজের প্রয়োজনে এই অর্থ নিতে পারবে। পরিবারের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবে। আবার টাকায় এনক্যাশ করে শেয়ার বা বন্ড কিনতে পারবে।

এদিকে দেশে ডলার অ্যাকাউন্ট খোলায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে অনেককেই। ব্যাংকে গিয়ে কাগজপত্রের জটিলতার পাশাপাশি কর্মকর্তাদের অসহযোগীতায় তারা অ্যাকাউন্ট না খুলেই ফিরে যাচ্ছেন বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন।

আইনে বলা হয়েছে, ইপিজেড, পিইপিজেড, অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কগুলোর শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের আমানত নেওয়ার পাশাপাশি উল্লিখিত অঞ্চলের প্রতিষ্ঠানকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ ও অগ্রিম বা বিনিয়োগ, ঋণপত্র গ্যারান্টি সুবিধা প্রদান করতে পারবে। এ ছাড়া বিল ডিসকাউন্ট, বিল নেগোশিয়েটিং এবং অন্যান্য বৈদেশিক বাণিজ্য-সংশ্লিষ্ট বহিঃলেনদেনের সুবিধা প্রদান করবে। বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড ঋণ ও অগ্রিম বিনিয়োগ করতে পারবে। অনিবাসী ও বিদেশি ব্যক্তির কাছ থেকেও শুধুমাত্র আমানত সংগ্রহ করতে পারবে। ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে নিবাসী বাংলাদেশিকে ব্যাংক অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রমে আমদানি এবং প্রত্যক্ষ ও প্রচ্ছন্ন রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে ইউজেন্স বা ডেফারড রপ্তানি বিল ডিসকাউন্ট বা ক্রয় করার সুবিধা দিতে পারবে। আইনে বলা হয়েছে, নিবাসী বাংলাদেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে মধ্যম বা দীর্ঘমেয়াদে ঋণ অগ্রিম বা বিনিয়োগ মঞ্জুর করতে পারবে। বিদেশে যে বাংলাদেশি বসবাস করছেন তার পক্ষে দেশে অবস্থানরত কোনো বাংলাদেশি নাগরিক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। সহায়তাকারী হিসেবে তারা অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে পারবেন। এই হিসাবে শুধু ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে প্রাপ্ত অন্তর্মুখী রেমিট্যান্স জমা হবে। হিসাবে জমার বিপরীতে সুদ বা মুনাফা দেওয়া হবে। সুদ বা মুনাফাসহ জমাকৃত অর্থ রেমিট্যান্স প্রেরণকারীর অনুকূলে পুনরায় বিদেশে পাঠানো যাবে। দেশে প্রয়োজনে পরিশোধ ও বিনিয়োগের জন্য অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং ইউনিটে স্থানান্তর করা যাবে। আইনে বলা হয়েছে, অফশোর ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট পরিচালনার জন্য কোনো সুদ বা চার্জ দিতে হবে না। অর্জিত সুদ বা মুনাফার ওপর কোনো কর আরোপ করা হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং ইউনিটে তহবিল স্থানান্তর করা যাবে না। অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের নামে আমানতকারী চেক, ড্রাফট, পে-অর্ডার বা অন্য কোনো দলিলের বিপরীতে চাহিদার ভিত্তিতে পরিশোধযোগ্য আমানত বা ঋণ গ্রহণ করা যাবে না। অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার আলোকে ব্যাংকের পর্ষদের অনুমোদিত নীতিমালা থাকতে হবে। এ বিষয়ে বেসরকারি ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, এ কার্যক্রমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো দেশে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়বে। কারণ যারা এতে অংশ নেবে তাদের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রেই তাদের রেস্ট্রিকশন কম থাকবে। কারণ ফরেন কারেন্সির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ অনেক উদার করা হয়েছে। বাংলাদেশে অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রমের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ১৯৮৫ সালে। ২০১৯ সালের আগ পর্যন্ত কোনো ধরনের নীতিমালা ছাড়াই এ কার্যক্রম চলেছে। ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো অফশোর ব্যাংকিং পরিচালনায় আলাদা নীতিমালা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশে কার্যরত ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে বর্তমানে ৩৭টির অফশোর ব্যাংকিং রয়েছে।

সর্বশেষ খবর