বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

সিতওয়ের দ্বারপ্রান্তে বিদ্রোহীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক ও টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পোন্নাগিউনের কাছে সামরিক জান্তার সর্বশেষ ঘাঁটি দখল করে নেওয়ার দাবি করেছে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। স্থানীয় সময় সোমবার সামরিক জান্তার ৫৫০তম পদাতিক ব্যাটালিয়নকে পরাজিত করে রাজ্যের রাজধানী সিতওয়ে থেকে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে শহরটির নিয়ন্ত্রণে নেয়। এই মুহূর্তে তারা রাজধানী সিতওয়েকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে। খবর দ্য ইরাবতীর।

এএ জানিয়েছে, পোন্নাগিউন শহরের দখল নিয়ে লড়াইয়ের সময় জান্তা বাহিনী যুদ্ধবিমান ও নৌবাহিনীর যুদ্ধযান থেকে বোমা হামলা করে। আরাকান আর্মির বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়। তারপরও তারা শহরটি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। একপর্যায়ে পোন্নাগিউনের পতনের পর জাই তি পিয়ান সেতু ধ্বংস করে দেয় সামরিক বাহিনীর যুদ্ধবিমান। এই সেতুটি পোন্নাগিউন ও রাথেডাংকে সংযুক্ত করেছিল। এখন রাখাইনের রাজধানী সিতওয়ের দিকে তাদের দৃষ্টি বলে জানিয়েছে এএ। ইরাবতীর খবরে বলা হয়, সোমবার স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা থেকে সেখানে ১২ বার হামলা চালায় সামরিক জান্তা। গতকাল পর্যন্ত আরাকান আর্মির কাছে আটটি শহরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে সামরিক বাহিনী। এর মধ্যে আছে চিন রাজ্যের পালেতোয়াও। এর বাইরে বিপুল পরিমাণ বড় ঘাঁটি, আউটপোস্ট ও নৌ যানের দখল হারিয়েছে সরকারি বাহিনী। এদিকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধের প্রভাব গতকালও সীমান্ত ছাড়িয়ে এপারে এসে পড়েছে।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বুধবার ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত রাখাইনের মংডু শহরের উত্তরে কুমিরখালী, বলি বাজার, নাকফুরা, নাইচাডং, কোয়াচিডং, কেয়ারিপ্রাং, পেরাংপুরুসহ কয়েকটি এলাকায় ব্যাপক গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যায়। এ সময় শক্তিশালী বিস্ফোরণে টেকনাফ সীমান্ত বারবার কেঁপে ওঠে। এতে টেকনাফ পৌর শহর, সাবরাং, হ্নীলা, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের মানুষ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, আরাকান আর্মিকে লক্ষ্য করে কয়েকদিন ধরে মর্টার শেল নিক্ষেপ করছে সরকারি বাহিনী। পাল্টা গুলি ছুড়ে জবাব দিচ্ছে আরাকান আর্মি। দুই পক্ষের তুমুল লড়াই এবং শক্তিশালী গ্রেনেট, বোমা ও মর্টার শেলের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে মংডুর দক্ষিণাংশের যোগাযোগ ব্যবস্থা। স্থলপথে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর টহল সীমিত হয়ে পড়েছে।

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, রাখাইনের চলমান যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত সীমান্তঘেঁষা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত ১২ হাজার বাংলাদেশিকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মতো রেশনিং ব্যবস্থায় নিয়ে আসা জরুরি হয়ে পড়েছে। রাখাইনের যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

টেকনাফ ব্যাটালিয়নের-২ অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, অস্ত্র ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধে সীমান্তে কড়া নিরাপত্তা জোরদার রাখা হয়েছে।

আমাদের বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তমব্রুর এপার-ওপার এখন অনেকটা শান্ত। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অংশে গতকালও কোনো গোলাগুলির ঘটনা ঘটেনি। এ নিয়ে গত আট দিন ধরে সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর