শনিবার, ৯ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভোটের লড়াই লালমনিরহাট মুন্সীগঞ্জে

আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নিজেদের মধ্যে, উৎসাহ নেই বিএনপিতে, জাতীয় পার্টি পর্যবেক্ষণে

লালমনিরহাট ও মুুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

ভোটের লড়াই লালমনিরহাট মুন্সীগঞ্জে

লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় বইতে শুরু করেছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের হাওয়া। প্রার্থিতার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের অনেকেই। বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে কোনো ঘোষণা না দিলেও দলের কেউ কেউ ভোটে অংশ নিতে প্রচার শুরু করেছেন। জাতীয় পার্টিরও কয়েকজন রয়েছেন তৎপর।

গত নির্বাচনে জেলার পাঁচটি উপজেলার দুটিতে দলীয় প্রার্থী এবং তিনটিতে বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পান। এবার দলীয় প্রতীক না থাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্প্রতি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগে গ্রুপিং দেখা দেওয়ায় উপজেলা নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা এড়াতে নানা নির্দেশনাও দিয়ে যাচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগ।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও লালমনিরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিভেদ সৃষ্টি হলেও কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। উপজেলা নির্বাচনও উৎসবমুখর হবে বলে আশা করছি। সদর উপজেলা পরিষদে গত নির্বাচনে জয় পান স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা কামরুজ্জামান সুজন। তার কাছে নৌকার প্রার্থীর ভরাডুবি হয়। এবারও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন সুজন। প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা স্বপনও। এ ছাড়া বিএনপি নেতারা উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে মাঠে কাজ করেছেন।

আদিতমারী উপজেলায় এবার প্রার্থীর ছড়াছড়ি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ সমর্থক ইমরুল কায়েস ফারুক গত নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নৌকার মাঝি রফিকুল আলমকে হারান। এ ছাড়া প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন জামায়াত নেতা ফিরোজ হায়দার লাভলু ও বিএনপি নেতা নুরে আলম সিদ্দিকী।

কালীগঞ্জে সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী বর্তমান লালমনিরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান আহম্মেদের ছোট ভাই বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুবুজ্জামান আহমেদ এবং ছেলে লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুজ্জামান আহমেদ প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন। চাচা-ভাতিজা উভয়ই মাঠে প্রচারণা শুরু করেছেন। এ ছাড়া বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলম কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

হাতিবান্ধা উপজেলায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মামুন এবারও লড়বেন বলে প্রচারণা শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত হোসেন বাচ্চু, আওয়ামী লীগ থেকে সদ্য পদত্যাগ করা মুজিবুল আলম সাদাতসহ অর্ধ ডজন আওয়ামী লীগ নেতা প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন বলে জানা গেছে। বিএনপি নেতা সায়েদুজ্জামান কোয়েল, জামায়াত নেতা হাবিবুর রহমান সাতাসহ বিএনপি নেতা ও জাতীয় পার্টির উপজেলা পর্যায়ের চার নেতা প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন।

জেলার পাটগ্রাম উপজেলায় প্রার্থী হিসেবে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুল এবারও আলোচনার শীর্ষে। এ ছাড়া ওয়াজেদ আলী শাহীনসহ বিভিন্ন দলের প্রায় ডজন খানেক নেতা প্রার্থী হতে পারেন আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে।

লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বাবলা বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত নেই। ব্যক্তিগতভাবে কেউ অংশ নিলে সেটি তার দায়।

লড়াই হবে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই মুন্সীগঞ্জে উপজেলা নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। জেলার ছয়টি উপজেলার শহর ও গ্রামীণ হাটবাজারে চায়ের আড্ডায় চলছে নির্বাচনি আলাপচারিতা। সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিভিন্নভাবে নিজেদের প্রার্থিতার কথা জানান দিচ্ছেন। মে মাসে তিন ধাপে মুন্সীগঞ্জের ছয় উপজেলায় ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রথম ধাপে সদর ও গজারিয়া, দ্বিতীয় ধাপে লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলা, তৃতীয় ধাপে শ্রীনগর ও সিরাজদিখান উপজেলা। আগামী মাসেই তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। এবার দলীয় প্রতীক না থাকায় উৎসাহী প্রার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক বাড়ছে। পুরনোদের পাশাপাশি নতুন প্রার্থীদের তৎপরতাও বেড়েছে। তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। এ নির্বাচন কেন্দ্র করে ছয় উপজেলায় সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন অর্ধশতাধিক। এ ছাড়া মহিলা ও পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদের জন্য তালিকায় রয়েছেন শতাধিক প্রার্থী। সদর উপজেলায় রয়েছেন দুজন হেভিওয়েট প্রার্থী। এর মধ্যে একজন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি মো. আনিছুজ্জামান আনিছ এবং অপরজন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও চরকেওয়ার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী মো. আফসার উদ্দিন ভূইয়া। গজারিয়া উপজেলায় বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম ও অপর প্রার্থী রয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও দলটির সহসভাপতি মো. রেফায়েত উল্লাহ তোতা। টঙ্গীবাড়ি উপজেলায় রয়েছেন একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী। তার মধ্যে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার কাজী আবদুল ওয়াহিদ, দিঘিরপাড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আরিফুল ইসলাম হালদার, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. রাহাত খান রুবেল। লৌহজং উপজেলায়ও রয়েছেন একাধিক প্রার্থী। প্রচার-প্রচারণায় মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. আবদুর রশিদ শিকদার, দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট শিল্পপতি বি এম শোয়েব, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. ওসমান গনী তালুকদার ও আওয়ামী লীগ নেতা নিপু। শ্রীনগর উপজেলায়ও রয়েছেন একাধিক প্রার্থী। তার মধ্যে রয়েছেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ওয়াহিদুর রহমান জিঠু, কোলাপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি এস এম মাহাবুব উল্লাহ কিসমত ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মামুন। এ ছাড়া সিরাজদিখান উপজেলায়ও একাধিক প্রার্থী চেয়ারম্যান পদের জন্য লড়াই করবেন। তার মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আবুবক্কর সিদ্দিক, উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মইনুল হাসান নাহিদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আওলাদ হোসেন মৃধাসহ রয়েছেন একাধিক প্রার্থী। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলায়ও অংশ নেবে না বিএনপি। ফলে দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ নেই।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ লুৎফর রহমান জানান, আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী দল। দলের ঐক্য ধরে রেখে আওয়ামী লীগ উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনে আগ্রহী।

 

সর্বশেষ খবর