শনিবার, ৯ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

রমজানের বাজারে শঙ্কা

চিনির দামে লাফ, খেজুর নিয়ে তেলেসমাতি, মুরগির বাজার চড়া, দাম বেড়েছে বেগুন-আলুর

নিজস্ব প্রতিবেদক

রমজানের বাজারে শঙ্কা

পবিত্র রমজান মাস প্রায় চলেই এসেছে। সে হিসাবে গতকাল ছিল রোজা শুরু হওয়ার আগে শেষ শুক্রবার। এ কারণে বেশির ভাগ ক্রেতাই রোজার বাজার সারতে বাজারে আসেন। কিন্তু বরাবরের মতোই এবারও রোজার বাজার নিয়ে ক্রেতারা স্বস্তিতে নেই। বাজার ঘিরে শঙ্কা দেখা দিয়েছে ক্রেতাদের মধ্যে। ক্রেতাদের বেশির ভাগই নিত্যপণ্যের অতিরিক্ত দাম নিয়ে অভিযোগ করেন। কারণ, রোজার জন্য কাঁচা বাজারের অধিকাংশ পণ্যের দাম ছিল বাড়তি। বিশেষ করে আলু, দেশি রসুন, বেগুন, সব ধরনের মুরগির মাংস, গরুর মাংস এবং ডাল বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়েছে চিনি ও খেজুরেরও। ক্রেতাদের অভিযোগ, সরকার রোজায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকবে বললেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। এর বিপরীতে বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদা বেশি থাকার কারণে সবকিছুর দাম বাড়তি।

মিরপুর-১ নম্বর কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা যায়, কিছু সবজির দাম কমেছে। এর মধ্যে আছে মটরশুঁটি, ঢেঁড়স, পটোল ও উচ্ছে। এ সবজিগুলোর দাম গড়ে ২০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। অন্যদিকে রোজায় চাহিদা বেশি থাকায় কিছু সবজির দাম বেড়েছে। এর মধ্যে আছে আলু ও বেগুন। এ দুই সবজির দাম যথাক্রমে বেড়েছে ৫ টাকা ও ২০ টাকা। এগুলো ছাড়া অন্য সবজির দাম সামান্য বেড়েছে বা কমেছে আর কিছু সবজির দাম অপরিবর্তিত আছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, শিম ৬০, টমেটো ৫০, পিঁয়াজ কলি ৪০, মটরশুঁটি ৮০, সাদা মুলা ৬০, দেশি গাজর ৪০, লম্বা বেগুন ৮০, শসা ৬০ থেকে ৮০, ক্ষীরা ৪০, উচ্ছে ১০০, করল্লা ১৬০, পেঁপে ৪০, মিষ্টিকুমড়া ৩০, ঢেঁড়স ১০০, পটোল ১০০, চিচিঙ্গা ৬০, ধুন্দল ৬০, বরবটি ১২০, কচুর লতি ১০০, সজিনা ডাঁটা ২০০, কচুরমুখী ১২০, কাঁচা মরিচ ১০০ এবং ধনেপাতা ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর লাউ প্রতি পিস ১০০, ফুলকপি ৫০, বাঁধাকপি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজার করতে আসা স্কুলশিক্ষক সজীব আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সরকার বলেছিল যে, রোজায় নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় থাকবে। কিন্তু বাস্তবে এমন কিছু দেখছি না। উল্টো রোজার সময় যেসব সবজি বেশি ব্যবহৃত হয় সেগুলোর দাম বেড়েছে। আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে জিনিস কিনতে হচ্ছে।’

এনজিও কর্মী শাফিনাজ শরিফা অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘শাকসবজি কিনতে গিয়ে বাজারের অর্ধেক বাজেট শেষ হয়ে গেছে। মাছ-মাংস কীভাবে কিনব বুঝতে পারছি না।’

সবজি বিক্রেতাদের সুর ভিন্ন। তারা বলছেন, বেশির ভাগ ক্রেতাই রোজা শুরুর সঙ্গেই একসঙ্গে সব পণ্য কিনে নিতে চান। এতে বাজারে নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। ক্রেতাদের এই মনোভাব বুঝতে পেরে পাইকারি ব্যবসায়ীরাও জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়। যদি ক্রেতারা আগে-পরে মিলিয়ে পণ্য কিনতেন তাহলে এমন পরিস্থিতি হতো না।

এ ছাড়াও বাজারে মানভেদে দেশি পিঁয়াজ ৯০ থেকে ১১০, লাল ও সাদা আলু ৩৫, নতুন দেশি রসুন ১৫০, চায়না রসুন ২০০, ভারতীয় আদা ২২০, চায়না আদা ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের তুলনায় দেশি রসুনের দাম ১০ টাকা এবং আলুর দাম ৫ টাকা বেড়েছে। আর ছোট মসুরের ডাল ১৪০, মোটা দানা মসুরের ডাল ১১০, বড় মুগডাল ১৫০ থেকে ১৬০, ছোট মুগডাল ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। বুটের ডাল ১১০ থেকে ১১৫, ছোলা ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে বড় মুগডাল ১০, ছোট মুগডাল ২০, খেসারির ডাল ৫, বুটের ডাল ৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর বাজারগুলোতে বেশি দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, চিনির দাম আরও বাড়তে পারে। চিনিতে শুল্ক কমলেও দাম না কমে ১০ টাকা বেড়ে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মুদি দোকানের বিভিন্ন পণ্যের দাম অপরিবর্তিত আছে। গতকাল প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৩ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৯ টাকা, ২ কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা ২ কেজির প্যাকেট ১৩০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম কমেছে প্রতি লিটারে ১০ টাকা করে।

ইফতারে ব্যবহৃত খেজুরের দামও কেজিতে ১০০ থেকে ৪০০ টাকা বেড়েছে। বাজারে এখন ১ কেজি সাধারণ মানের খেজুরের দাম ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। গত বছর রোজার আগে এই মানের খেজুরের কেজি ছিল ২০০ থেকে ২২০ টাকা। এ ছাড়া ভালো মানের খেজুর ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে, যা গত রোজায় ছিল ৪০০ টাকার কিছু বেশি।

বাজারে গতকাল ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৪০০ থেকে ২২০০, রুই মাছ ৩৮০ থেকে ৫৫০, কাতলা মাছ ৪০০ থেকে ৭০০, কালিবাউশ ৫০০ থেকে ১ হাজার, চিংড়ি ৬০০ থেকে ১২০০, কাঁচকি ৪০০, কই ৬০০ থেকে ১২০০, পাবদা ৫০০ থেকে ৮০০, শিং ৪০০ থেকে ১২০০, টেংরা ৬০০ থেকে ১ হাজার, বোয়াল ৭০০ থেকে ১৪০০, রূপচাঁদা ১ হাজার থেকে ১২০০, শোল ৭০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে সব ধরনের মাংস বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে দেশি মুরগির দাম এক লাফে ১৮০ টাকা বেড়েছে। গতকাল ব্রয়লার মুরগি ২২০, দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৬৮০, গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। মুরগির লাল ডিম ডজন ১৩৫ এবং সাদা ডিম ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্য সময় ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকার মধ্যে থাকলেও গতকাল বেশি দামে বিক্রি হয়। কক মুরগির ক্ষেত্রেও একই চিত্র। ৩০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হলেও গতকাল বেশি দামে বিক্রি হয়।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর