শনিবার, ৯ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

মাছ নয়, আশুড়ার বিলে চলছে ধান চাষ

দিনাজপুর প্রতিনিধি

মাছ নয়, আশুড়ার বিলে চলছে ধান চাষ

ঐতিহাসিক আশুড়ার বিলে মাছ নয়, এখন চলছে ধান চাষ। বিলজুড়ে সবুজের সমারোহ। উত্তরবঙ্গের বৃহৎ দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ ক্ষেত্র, এক সময়ের গভীর আশুড়ার বিলের প্রায় অর্ধেকের বেশি জায়গাজুড়ে এ ধান চাষ করছেন কৃষক। অবস্থা এমন যে, বিলে শুকনো মৌসুমে ধান চাষ আর বর্ষাকালে মাছ চাষ হয়।

তবে ঐতিহাসিক আশুড়ার বিলে পানি ধরে রাখতে একটি স্লুইসগেট এবং খননের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। তদারকি আর মাছ সংরক্ষণে ব্যবস্থা গ্রহণসহ খনন করলে এ ঐতিহাসিক আশুড়া বিলে দেশীয় মাছ যেমন সংরক্ষণ করা যাবে তেমনি উত্তরবঙ্গে দেশীয় মাছের চাহিদা পূরণ সম্ভব এবং কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ বিল থেকে মৌসুমে কমপক্ষে ১২০ মেট্রিকটন মাছ পাওয়া যায় বলেও মৎস্য কর্মকর্তা জানান। এদিকে, বাসটেক গ্রামের কৃষকরা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ মওসুমে কম খরচেই এক একরে ১১০ মণ ধান পাওয়া যাবে আশা করি। এখানে কম খরচে ধানের ফলন ভালো হয়। অপরদিকে ইয়ামিনসহ কয়েকজন পর্যটক জানান, পানি না থাকায় দৃষ্টিনন্দন কাঠের সেতুতে দাঁড়িয়ে দুই পাশে দেখা যায় সবুজের সমারোহ। তবে বিলটিতে পানি ধরে রাখতে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। বর্ষা মৌসুমে এ বিলে লাল, সাদা শাপলা ফুল বিলের সৌন্দর্য দেখে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ভ্রমণপিপাসুরা মুগ্ধ হয়। এ কারণে বন বিভাগও এটিকে পর্যটকদের দর্শনীয় করতে পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।

উত্তরবঙ্গের বৃহৎ এ বিলটি লম্বায় ৫ কিলোমিটার। আশুড়ার বিল নিয়ে রয়েছে পৌরাণিক বিচিত্র কাহিনি। অতি প্রাচীনকালে দেবতা ও অসুরদের মধ্যে লড়াই চলছিল আধিপত্য বিস্তার নিয়ে। সেখানে দেবতাদের নিকট অসুরেরা পরাজিত হয়েছিল। দেবতাদের খঞ্জরের আঘাতে অসুরদের ঝরা রক্ত তাদেরই পায়ে দেবে যাওয়া গর্তে ভরে গিয়েছিল বলে অসুরের বা আশুড়ার বিল নামকরণ করা হয়। অনেকে বলেন, ওই বিলের চারপাশ থেকে ৮০টি দ্বার বা নালা চতুর্দিকে ছড়িয়ে গেছে বলে আশি নালা নামের উৎপত্তি হয়েছে। বিশাল ওই বিলের গভীরতা ও কাদার তলানি এবং চারপাশ বেষ্টিত শালবন এক সময় নানা কিংবদন্তির জন্ম দেয়। বিলের মাঝে কতিপয় স্থানের নাম আছে যেগুলোকে কেন্দ্র করে আরও কিছু চমৎকার কাহিনিও রয়েছে। যেমন- পাতিলদহ, বুড়িদহ, কাজলাদহ, পীরদহ, মুনির আইল ও মুনির থান ইত্যাদি। পৌরণিক কাহিনি যাই থাক ঐতিহাসিক আশুড়ার বিলে মৎস্য সম্পদের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। টেংরা, কই, মাগুর, পুটি, চিংড়ি, আইড়, শোল, গজার, বাইমসহ নানা প্রজাতির মাছ এখনো পাওয়া যায় বলে স্থানীয়রা জানান।

নবাবগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. হানিফ উদ্দিন জানান, শুষ্ক মওসুমে পানি না থাকার কারণে ধান চাষ করে কৃষক। আশুড়ার বিলের নবাবগঞ্জ ও বিরামপুরের এলাকা নিয়ে আয়তন ৩১৯ হেক্টর। এর মধ্যে নবাবগঞ্জে ২৫১ হেক্টর অবস্থিত। এ বিলটিতে হারিয়ে যাওয়া অনেক প্রজাতির মাছ এখনো ধরা পড়ে। তবে পানি ধরে রাখতে দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড খনন প্রকল্প নিচ্ছে বলে জানান তিনি। খনন করা হলে হারিয়ে যাওয়া অনেক প্রজাতির মাছও পাওয়া যাবে এখানে।

সর্বশেষ খবর