রবিবার, ১০ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

থমকে আছে জীবনজীবিকা

প্রমত্তা তিস্তা নদী শুকিয়ে এখন বিপন্ন। বর্ষার পানিতে ফুলেফেঁপে ওঠা তিস্তা এখন পানির অভাবে ধু-ধু বালুচর

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

থমকে আছে জীবনজীবিকা

বর্ষা এলেই বন্যা আর ভাঙনের মুখে পড়েন তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা। ভাঙন আর প্রবল স্রোতে ভেসে যায় ফসলি জমি, বসতভিটাসহ সব স্থাপনা। সেই প্রমত্তা তিস্তা নদী শুকিয়ে এখন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। হেঁটেই নদী পারাপার হচ্ছেন স্থানীয়রা। বর্ষার পানিতে ফুলেফেঁপে ওঠা তিস্তা এখন পানির অভাবে ধু-ধু বালুচর। এতে থমকে গেছে তিস্তাপাড়ের মানুষের জীবনজীবিকা। লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা চরাঞ্চলের চর গোকুণ্ডা গ্রামে দেখা গেছে, তিস্তার বুক এখন ধু-ধু বালুচর। নেই নৌকা বা ট্রলার, মাঝি-মল্লাদের হাঁকডাক। নেই জেলেদের মাছ ধরার ব্যস্ততা। নদীপাড়ের জেলেরা জানান, একসময় তিস্তায় প্রচুর মাছ ধরা পড়ত। সেই মাছ বিক্রি করেই তারা সংসার চালাতেন। সেই সময় তিস্তার মাছকে ঘিরে সদর উপজেলার তিস্তা বন্দরে শুঁটকির আড়ত ছিল। যেখান থেকে সারা দেশে যেত তিস্তা নদীর শুঁটকি। এখন মাছই পাওয়া যায় না। তাই শুঁটকির অভাবে তিস্তা বন্দরের আড়তেরও নেই আগের জৌলুস। যা আছে তা বাইরের শুঁটকি। পানিশূন্য তিস্তায় মাছের আকাল পড়েছে। অনেক জেলে পেশা পরিবর্তন করেছেন। যারা রয়েছেন তাদের সংসার চলে অনাহারে-অর্ধাহারে। তিস্তার বাম তীরে সদর উপজেলার গোকুণ্ডা ইউনিয়নের পাঙ্গাটারী গ্রামের জেলে জীতেন্দ্রনাথ বলেন, আগে এ নদীতে দিনভর মাছ ধরে বিক্রি করে সংসার সুখেই চলত। মাছের শুঁটকি করেও সারা বছর বিক্রি করতাম। এখন নিজের খাবার মাছও পাওয়া যায় না। আশপাশের গর্তে থাকা মাছ ধরে কোনো রকম খেয়ে, না খেয়ে কাটছে দিন। অনেকেই পেশা বদল করেছেন। অন্য কাজের অভিজ্ঞতা না থাকায় এ পেশাতেই রয়েছি। পানির ন্যায্য হিস্সা আদায় করে তিস্তার প্রাণ ফেরানো জরুরি। তিস্তা চরাঞ্চলে গোবর্ধ্বন গ্রামের কৃষক নজির হোসেন বলেন, শুষ্ক মৌসুমে যখন চাষাবাদের জন্য পানির প্রয়োজন তখন তিস্তায় পানি পাই না আমরা। পানির ন্যায্য হিস্সা পেলে শুষ্ক মৌসুমেও পানি থাকত তিস্তায়। তখন মাছই শুধু নয়, নদীর পানি ব্যবহার করে চরাঞ্চলের অনাবাদি জমিগুলোতে চাষাবাদ করা যেত। এখন অনেক টাকা খরচ ও প্রচুর পরিশ্রম করে কোনো রকম চাষাবাদ করছি। যার উৎপাদন খরচও ওঠে না। খেয়াঘাটের মাঝি সফিকুল বলেন, এখন নদীর মূল পানিপ্রবাহ যেখানে, সেখানে পানি হাঁটুর নিচে। হেঁটেই পাড়ি দেওয়া যায়। বাকিটুকু ধু-ধু বালুচর। নৌকা চালানোর সুযোগ নেই। হাঁটুপানি ভেঙে সবাই নদী পাড়ি দিচ্ছে। তাই যাত্রীর অভাবে নৌকা তুলে রেখেছি। তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদৌলা জানান, নদীতে মাত্র ২ হাজার কিউসেক পানি রয়েছে, যা দিয়ে ৪৫ হাজার হেক্টর জমির চাষ হচ্ছে। পানি কম থাকায় মূল স্রোতধারার সব জলকপাট বন্ধ রয়েছে। ফলে পানিশূন্য রয়েছে মূল নদী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর