রবিবার, ১০ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান

আজ আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করছে বাংলাদেশ

জিন্নাতুন নূর

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে আজ রবিবার বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এবার সাগরের ২৪টি ব্লকে অনুসন্ধান চালাতে এই দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে। বাংলাদেশ তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, আজ দেশের জাতীয় দৈনিকগুলোয় দরপত্র আহ্বান সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে এ দরপত্রের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। আগামীকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলা কার্যালয়ে এ বিষয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে। এতে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকবেন। জানা যায়, এরই মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক কোম্পানি এতে অংশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই দরপত্র আহ্বানের মধ্য দিয়ে দেশের সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশি কোম্পানিগুলোর পুনরায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। গভীর বঙ্গোপসাগরে নিজ সীমানায় অনুসন্ধান চালিয়ে এরই মধ্যে বড় সাফল্য পেয়েছে ভারত ও মিয়ানমার।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, সমুদ্রে বহুমাত্রিক জরিপ চালিয়ে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা গেছে। দরপত্রে অংশ নিতে ৫৫টি কোম্পানিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সমুদ্রে গ্যাস প্রাপ্তির প্রাথমিক সম্ভাবনা যাচাই করতে জার্মানির কোম্পানি স্লামবার্জার বহুমাত্রিক জরিপ চালিয়েছে। এ জরিপের তথ্য কিনে নিতে পারবে দরপত্রে আগ্রহী যেকোনো কোম্পানি। এ ছাড়া কনোকোফিলিপসের পরিচালিত দ্বিমাত্রিক জরিপের তথ্যও আছে পেট্রোবাংলার কাছে। এতেও বঙ্গোপসাগরে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। জানা যায়, এবার বিডিং রাউন্ডে বিভিন্ন পর্যায়ে কয়েকভাগে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দরপত্র আহ্বান শুরুর পর জমা দেওয়ার জন্য ছয় মাস সময় রাখা হয়েছে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশে গ্যাসের স্থানীয় উত্তোলন বৃদ্ধির জন্য ১০ মার্চ আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে আগ্রহী কোম্পানিগুলো দরপত্রে অংশগ্রহণ করছে। এর আগে যারা বঙ্গোপসাগরে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য যোগাযোগ করেছে তা অনানুষ্ঠানিক ছিল। এটা প্রকাশ হওয়ার পর যারা আগ্রহী আমরা তাদের তথ্য দিব। এর ১৫ দিন থেকে এক মাস পর অগ্রগতি জানানো সম্ভব হবে। বঙ্গোপসাগরের ২৪ ব্লকে (অফশোর ব্লক) তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য দরপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা থাকবে সেপ্টেম্বরের ৯ তারিখ পর্যন্ত।

ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিজয়ের পর দীর্ঘ সময় পার হলেও বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। এর আগে চারটি বিদেশি কোম্পানি কাজ শুরু করলেও তিনটি চলে গেছে। ২০১২ সালে ভারতের সঙ্গে ও ২০১৪ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা-বিরোধ নিষ্পত্তি হয়। এখন গভীর সমুদ্রে ১৫টি ও অগভীর সমুদ্রে ১১টি ব্লক আছে বাংলাদেশের। এর মধ্যে ২০১০ সালে গভীর সমুদ্রে দুটি ব্লকে কাজ নেয় কনোকোফিলিপস। তারা দ্বিমাত্রিক জরিপ চালালেও পরে গ্যাসের দাম বাড়ানোর দাবি পূরণ না হওয়ায় কাজ ছেড়ে চলে যায়। একইভাবে চুক্তির পর কাজ ছেড়ে চলে যায় অস্ট্রেলিয়ার স্যান্তোস ও দক্ষিণ কোরিয়ার পস্কো দাইয়ু। বর্তমানে একমাত্র কোম্পানি হিসেবে অগভীর সমুদ্রের দুটি ব্লকে অনুসন্ধান চালাচ্ছে ভারতের কোম্পানি ওএনজিসি। এ দুটি বাদ দিয়ে এবার ২৪টি ব্লকে দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে।

এর আগে সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে সব শেষ দরপত্র ডাকা হয়েছিল ২০১৬ সালে। ২০১৯ সালে নতুন উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি) করা হলেও দরপত্র ডাকা হয়নি। প্রায় চার বছর পর গত বছরের জুলাইয়ে নতুন পিএসসি চূড়ান্ত অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। বিদেশি কোম্পানির আগ্রহ বাড়াতে এতে আগের চেয়ে সুবিধা বাড়ানো হয়েছে।

এবার দরপত্রে অংশ নিতে আগ্রহী কোম্পানিগুলোর মধ্যে আছে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি এক্সনমবিল। তালিকায় আরও আছে দেশের গ্যাস উৎপাদন কাজে জড়িত আরেকটি মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন। কোম্পানিটি মৌলভিবাজার ও হবিগঞ্জের তিনটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে দেশে প্রতিদিন মোট গ্যাস উৎপাদনের ৫৫ শতাংশ সরবরাহ করে। এবার শেভরনও সমুদ্রের গ্যাস অনুসন্ধানে অংশ নিতে আগ্রহী। এরই মধ্যে শেভরন পেট্রোবাংলার কাছ থেকে বহুমাত্রিক জরিপের তথ্য কিনেছে। নতুন করে আবার আগ্রহ দেখাচ্ছে মার্কিন কোম্পানি কনোকোফিলিপস। দরপত্রে অংশ নিতে আগ্রহী চীনের কোম্পানি সিনোপ্যাকও। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. নূরুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের পিএসসি পৃথিবীর অন্যতম সেরা পিএসসির একটি। আমরা এই দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম নিয়ে আশাবাদী হতে চাই। প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি হয় মিয়ানমারের। এরপর ২০১৩ সালে এখান থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু করে দেশটি। এরপর ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তি হয় ২০১৪ সালে। এরই মধ্যে এ নিষ্পত্তির ১০ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু দীর্ঘ এ সময়ের মধ্যে গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস উত্তোলন ও অনুসন্ধানে কোনো সাফল্যের দেখা পায়নি বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর