মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

উদ্যোগ নেই ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা সংরক্ষণে

♦ সংস্থাগুলোর আলাদা আলাদা তালিকা ♦ প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের ১০৬টির মধ্যে ৯৭টি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে ♦ ঝুঁকিপূর্ণ অনেক ভবন ♦ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন দুটির সংস্কার করেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

উদ্যোগ নেই ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা সংরক্ষণে

পুরান ঢাকার ৭৪টি স্থাপনাকে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হিসেবে ঘোষণা করে ২০২০ সালে গেজেট প্রকাশ করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। নগর উন্নয়ন কমিটির অনুমোদন ব্যতীত তালিকাভুক্ত ভবন ও স্থাপনা কাঠামো আংশিক বা সম্পূর্ণ অপসারণ, পুনর্নির্মাণ, পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন, সংযোজনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হয়। অথচ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এসব ভবনের সংস্কার করে কাঠামো বদলে দেওয়া হচ্ছে। স্থাপনাগুলো সংরক্ষণে নীতিমালার কোনো প্রয়োগ নেই। একই সঙ্গে পুরনো অনেক ভবন ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় রয়েছে। এ ছাড়া পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক স্থাপনার রাজউক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরে আলাদা আলাদা তালিকা রয়েছে। এ তিন সংস্থার তালিকায় কিছু পার্থক্যও রয়েছে। একই সঙ্গে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের তালিকা অনুযায়ী ১০৬টি স্থাপনার মধ্যে ৯৭টি বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, মসজিদ কমিটি ও বিভিন্নভাবে অবৈধ দখলে রয়েছে। এগুলো সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে। সংরক্ষণেও নেই সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর উদ্যোগ।

জানা যায়, ২০০৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চারটি অঞ্চলকে ঢাকার ঐতিহ্য বা হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে রাজউক। গেজেটে ৯৩টি স্থাপনা ও ১৩টি সড়ককে ঐতিহ্যবাহী এলাকা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ২০১৭ সালে হেরিটেজের সংখ্যা ৭৪টিতে নামিয়ে আনা হয়। ১৩টি সড়কও বাদ দেওয়া হয় তালিকা থেকে। রাজউকের এই তালিকার মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এলাকায় রয়েছে ৬৬টি স্থাপনা। যদিও ডিএসসিসির মালিকানায় থাকা ঢাকা গেট ও লালকুঠি সংস্কার কাজ করছে সেবাদাতা এ সংস্থাটি। একই সঙ্গে ঢাকা বিভাগে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের খসড়া তালিকায় রয়েছে ১০৬টি স্থাপনার নাম। এর মধ্যে সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী মাত্র ৯টি স্থাপনা তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাকি ৯৭টি স্থাপনা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও অবৈধ   দখলে রয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো নিয়ন্ত্রণে আনতে মামলা করেছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর। মামলার রায় পেলে তাদের নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান। রাজউকের বিধি অনুযায়ী, এসব স্থাপনা ও এসব এলাকায় অবস্থিত ইমারত, উন্মুক্ত জায়গা, রাস্তা ও গলির প্রকৃত অবস্থার পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংস্কার, অপসারণ ও ধ্বংসের ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হয়। অথচ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এসব ভবনের সংস্কার করে কাঠামো বদলে দেওয়া হচ্ছে। স্থাপনাগুলো সংরক্ষণে নীতিমালার কোনো প্রয়োগ নেই। অন্যদিকে তা বর্তমান ব্যবহারকারীদের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু এই স্থাপনাগুলোর দেখভালের দায়িত্ব ঢাকা জেলা প্রশাসন এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের। এসব স্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি হেরিটেজ হিসেবে সংরক্ষণ করার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অযত্ন-অবহেলা বা দেখভালের অভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে এবং দুর্ঘটনা ঘটলেই ভবনগুলোকে ভেঙে ফেলার কথা বলা হয়; এমন দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থাপনা নিয়ে কাজ করে আরবান স্টাডি গ্রুপ নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। তারা ২ হাজার ২০০টি বাড়িকে প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ উল্লেখ করে উচ্চ আদালতে রিট করেছিল। এসব বাড়ি অক্ষত রেখে সেগুলোর প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য নির্ণয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরকে ২০১৮ সালে নির্দেশ দেন হাই কোর্ট। মাঠপর্যায়ে জরিপ করে সেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাঁচ বছরেও দাখিল করতে পারেনি প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর। একই সঙ্গে সর্বশেষ ২০২০ সালে পুরান ঢাকার ৭৪টি স্থাপনাকে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে রাজউক। বিধি অনুযায়ী, এসব স্থাপনা ও এসব এলাকায় অবস্থিত ইমারত, উন্মুক্ত জায়গা, রাস্তা ও গলির প্রকৃত অবস্থার পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংস্কার, অপসারণ ও ধ্বংসের ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হয়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক আফরোজা খান মিতা বলেন, ঢাকা জেলার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার জরিপ কাজ চলছে। খসড়া হিসেবে ঢাকা বিভাগে ১০৬টি স্থাপনা রয়েছে। তবে এগুলো এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। এর মধ্যে কিছু স্থাপনা আংশিক দখলে রয়েছে। পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে নেই। তবে চূড়ান্ত তালিকা করতে কাজ চলছে। আরবান স্টাডির প্রধান নির্বাহী তাইমুর ইসলাম বলেন, অধিদফতর এত বছরেও প্রতিবেদন না দেওয়ায় সংকটের সমাধান হয়নি। ঐতিহাসিক এসব স্থাপনা নষ্ট হওয়াও থেমে নেই। এর মধ্যে ব্যক্তিমালিকানাধীন বহু বাড়ি ভাঙা হয়েছে, যেগুলো তালিকাভুক্ত হতে পারত। এ ছাড়া কিছু ভবন সংস্কার করা হয়েছে যেগুলো পুরনো নকশার সঙ্গে কোনো মিল নেই। দেখে মনে হবে এগুলো নতুন ভবন। পুরনো কোনো ঐতিহ্যের চিহ্ন নেই। আমেরিকার একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আমেরিকার ওকালাহামায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একটি সভা হয়েছে। যে ভবনটিতে সভা হয়েছে সেটা ছিল শতবর্ষীয় পুরনো অডিটোরিয়াম। সেটার ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে তারা অডিটোরিয়ামের কার্যক্রম ঠিক রেখেছে। একই সঙ্গে তারা ঐতিহ্যবাহী ভবন সম্পর্কে সভায় আগত অতিথিদের অবহিত করেছে। আমরাও লালকুঠি ভবনের অডিটোরিয়ামকে ঐতিহ্যবাহী হিসেবে ব্যবহার করতে পারতাম।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর