শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভিআইপিদের স্বাগত জানাতে পদ সৃষ্টির দাবি

ইউএনওদের ৫ লাখ টাকার তহবিলের আবদার, পর্যটন জেলায়ও পদ সৃজন চান আমলারা

ওয়াজেদ হীরা

এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের জন্য ঝুঁকি ভাতা আর উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের (ইউএনও) স্বেচ্ছাধীন তহবিলে বার্ষিক ৫ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা। শুধু তাই নয়, ডিসিদের কাজের সুবিধার অংশ হিসেবে ২০ জেলায় সহকারী কমিশনার পদ তৈরির কথাও বলেছেন তারা। জেলা-উপজেলায় ড্রাইভার নিয়োগও তারা নিজেরা দিতে চান। সম্প্রতি শেষ হওয়া ডিসি সম্মেলনে নীতি-নির্ধারকদের কাছে এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন ডিসিরা। মন্ত্রিপরিষদের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সম্মেলনে বেশিরভাগ প্রস্তাবই যাচাই-বাছাই করে উঠানো হয়। তারপরও গ্রহণযোগ্য না হলে দু-একটি বাদ দেওয়া হয় সম্মেলন শেষে। বেশিরভাগ প্রস্তাব বাস্তবায়নযোগ্য দেখেই উঠানো হয়। দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, এবার চার দিনের সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের জন্য ঝুঁকি ভাতার প্রস্তাব দিয়েছেন নড়াইলের ডিসি মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী। প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি দিয়ে নড়াইলের ডিসি বলেছেন, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটরা নির্বাচনি দায়িত্ব পালন করেন, তারা দাঙ্গা অবৈধ সমাবেশ ছত্রভঙ্গ, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, বাজার মনিটরিংসহ নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত থাকে। ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটরা ঝুঁকি ভাতার আওতাভুক্ত না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে দায়িত্ব পালনের উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। অর্থ বিভাগের কাছে তিনি এই দাবি করেন। অর্থমন্ত্রী-অর্থসচিবসহ সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রস্তাব শুনেছেন। অর্থ বিভাগ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে বলেও বাস্তবায়নের সুপারিশে উল্লেখ করেছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রলায়রের কাছেও নিজেদের অনেক দাবি করেন ডিসিরা। এর মধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের (ইউএনও) স্বেচ্ছাধীন তহবিলে বার্ষিক ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়েছেন দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ। প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে দিনাজপুরের ডিসি বলেছেন, ইউএনওকে তার নিজ উপজেলার সব মানুষের সুখ-দুঃখের খোঁজখবর রাখতে হয়। অনেক গরিব-দুঃখী মানুষ ইউএনও-এর কাছে বিশেষ বিশেষ সময়ে খাদ্য সহায়তা, কন্যা দায়গ্রস্ত পরিবারকে সাহায্য, অসুস্থতায় ওষুধ কেনার সহায়তাসহ বিভিন্ন সমস্যা উত্তরণে সহায়তা প্রদান করতে হয়। এসব কাজে ইউএনও-এর নিজস্ব কোনো স্বেচ্ছাধীন তহবিল না থাকায় ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা প্রদান করতে হয়।

ভিআইপি প্রটোকল দিতে ১১ পদ সৃজনের প্রস্তাব : আটটি বিভাগীয় জেলায় ও গোপালগঞ্জ, কক্সবাজার ও নীলফামারী জেলায় সহকারী কমিশনার (প্রটোকল) পদ সৃজনের প্রস্তাব দিয়েছেন গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক।

প্রস্তাবে যুক্তিতে গোপালগঞ্জের ডিসি কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, আটটি বিভাগীয় জেলা ও গোপালগঞ্জ, কক্সবাজার ও নীলফামারী জেলামিলে মোট ১১ জেলায় ভিআইপিসহ অতিথিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিমানবন্দরে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানানো প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া গোপালগঞ্জে জাতির পিতার সমাধি সৌধ কমপ্লেক্স হওয়ায় শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বিভিন্ন নেতারা, সরকারি কর্মকর্তা ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের আগমন হয়। জেলার প্রটোকলের দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে জেলার ডিসি নিজে বা তার পক্ষে প্রটোকলের ব্যবস্থার কাজ করেন। উল্লেখিত ১১ জেলায় ভিআইপিদের স্বাগত জানাতে বা প্রটোকলের পরিমাণ বেশি হওয়ায় বিভিন্ন ইউএনওদের বা এসিল্যান্ডদের সম্পৃক্ত করতে হয়। ফলে ইউএনও-এসিল্যান্ডদের দাফতরিক কাজে ব্যাঘাত হয়। তাই এসব জেলায় সহকারী কমিশনার (প্রটোকল) পদ সৃজনের প্রস্তাব দেন তিনি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ উদ্যোগ নিতে পারে বলেও মত দেন তিনি।

পর্যটন জেলায়ও পদ সৃজন চান আমলারা : ভিআইপি প্রটোকলের বাইরেও পর্যটনের কথা উল্লেখ করে আরও ৯ জেলায় সহকারী কমিশনার (পর্যটন) নামে একটি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব দিয়েছেন কক্সবাজারের ডিসি মুহম্মদ শাহীন ইমরান। কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজার, পটুয়াখালী, খুলনা এবং গাজীপুর জেলায় তিনি এই পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি দিয়ে ডিসি মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেছেন, এসব জেলায় পর্যটন-সংক্রান্ত ব্যাপক কার্যক্রম প্রয়োজন হয়। পর্যটন স্পট ব্যবস্থাপনা, পর্যটকের নিরাপত্তা, আবাসন ও অভিযোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসনে সহকারী কমিশনার (পর্যটন) নামে পদটি প্রয়োজন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে বলেও বাস্তবায়নের সুপারিশে উল্লেখ করেন তিনি।

তবে অতিরিক্ত পদ সৃজন বাড়াবাড়ি বলে উল্লেখ করে সাবেক এক সচিব বলেন, এসব নিজেদের সুবিধা নেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। জেলায় এত কর্মকর্তা অথচ পর্যটনের নামে, প্রটোকলের নাম লোক চাওয়া হাস্যকর।

মাঠ প্রশাসনে গাড়ি চালক নিয়োগ দিতে চান ডিসিরা : মাঠ প্রশাসনে অর্থাৎ ডিসি ও ইউএনও কার্যালয়ে গাড়িচালক নিয়োগে ডিসিরা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হতে চান। এ প্রস্তাব করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডিসি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে গাড়ি চালক নিয়োগের কারণে এক জেলার ড্রাইভার দূরের জেলায় পদায়ন করলে সেখানে চাকরি করতে তাদের আগ্রহ থাকে না। তাই নিজেরাই ড্রাইভার নিয়োগের ক্ষমতা চান ডিসিরা।

নিরাপত্তায় ব্যাটালিয়ন আনসারের প্রস্তাব : ডিসি কার্যালয় ও সার্কিট হাউসের নিরাপত্তায় ব্যাটালিয়ন আনসার চেয়েছেন ময়মনসিংহ ও নড়াইলের ডিসি। প্রস্তাবের পক্ষে তারা বলেন, নাইট গার্ড দিয়ে ডিসি কার্যালয় ও সার্কিট হাউসের নিরাপত্তা নিশ্চিত বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ডিসি কার্যালয়ে ট্রেজারি, রেকর্ড রুমের মূল্যবান রেকর্ড, নির্বাচনি মালামাল, রাষ্ট্রীয় গোপনীয় দলিল দস্তাবেজ, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, আদালতে আসা সেবা প্রার্থী, বিজ্ঞ কৌঁসুলি, বিজ্ঞ বিচারকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সার্কিট হাউসে অতিথিদের নিরাপত্তায় নিশ্চিত করার প্রয়োজনে ব্যাটালিয়ন আনসার প্রয়োজন মনে করেন তারা। এ ছাড়া তিন পার্বত্য জেলায় জ্বালানির জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়েছেন বান্দরবানের ডিসি। পাশাপাশি তিনি তিন পার্বত্য জেলার আইন-কানুনগুলো প্রশিক্ষণ মডিউলে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আলাদা প্রস্তাব দেন তিনি।

ডিসিদের সঙ্গে সম্মেলন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ডিসিরা অনেক বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছেন। যেগুলো প্রয়োজন সেগুলো মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ভেবে দেখে করণীয় ঠিক করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর