বুধবার, ১৩ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গেল আরও ভয়ংকর

সরাসরি প্রভাব ফেলবে বাংলাদেশে, বৃদ্ধি পাবে অস্ত্র ও মাদক পাচার

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গেল আরও ভয়ংকর

বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তের ‘ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গেল’ হয়ে উঠছে আরও ভয়ংকর। মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার জন্য কয়েক হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাটি এরই মধ্যে পেয়েছে কুখ্যাতি। কিন্তু ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গেলের মিয়ানমার অংশের সিংহভাগ আরাকান আর্মি দখলে নেওয়ার পর সম্প্রসারণ হতে শুরু করেছে অবৈধ মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা। বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গেলের অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসার সরাসরি প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে। বাড়বে দুর্গতি।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের ত্রিদেশীয় সীমান্তের কয়েক হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় কোনো দেশেরই কার্যত নিয়ন্ত্রণ নেই। এ সুযোগে এ এলাকায় অস্ত্র ও মাদক ব্যাপক হারে বেচাকেনা হচ্ছে। এলাকাটি স্থিতিশীল না হলে বাংলাদেশের জন্য অদূর ভবিষ্যতে দুর্গতির কারণ হবে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের ত্রিদেশীয় দুর্গম পাহাড়ি এলাকার ৩০ হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম অপরাধপ্রবণ এলাকা ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গেলের। বাংলাদেশের রাঙামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজারের কিছু অংশ ছাড়াও ভারতের মিজোরাম রাজ্য এবং মিয়ানমারের চীন ও রাখাইন রাজ্যের ভূমি নিয়ে গঠিত ‘ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গেল’। যার বেশির ভাগ পড়েছে আবার চীন ও রাখাইন রাজ্যে। একসময় আরাকান আর্মি, ব্রাদারহুড, কাচিন ডিফেন্স আর্মি (কেডিআই), কাচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (সিএনএফ), আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা), চীন ন্যাশনাল আর্মি, কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ), চীন ডিফেন্স ফোর্স (সিডিএফ), চীন লিবারেশন আর্মি, মিজু ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ)সহ কমপক্ষে ১৫টি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গেল নিয়ন্ত্রণ করত। কিন্তুছয় মাস ধরে মিয়ানমারের চীন ও রাখাইন রাজ্যে এককভাবে আধিপত্য বিস্তার শুরু করে আরাকান আর্মি। সরকারি বাহিনী হটিয়ে আরাকান রাজ্যের বেশির ভাগ এলাকা দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। যার মধ্যে ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গেলের মিয়ানমার অংশের পুরোটাই রয়েছে। মাদকের গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল খ্যাত মিয়ানমারের সান স্টেট থেকেও ব্যাপক হারে আসছে ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথের চালান ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গেল হয়েছেই; যা রাঙামাটি, বান্দরবান ও কক্সবাজার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। মাদক চালান ছাড়াও ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গেল খ্যাত এ অঞ্চলে ব্যাপক হারে তৈরি হচ্ছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। মিয়ানমার অংশ আরাকান আর্মির হাতে চলে যাওয়ার পর আয় বাড়াতে আরও ব্যাপক হারে অস্ত্র তৈরি ও মাদক পাচারের দিকে ঝুঁকছে। দেশের সীমান্ত এলাকার অপরাধ নিয়ে গবেষণা করছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক হুমায়ন কবির খোন্দকার। তিনি বলেন, একসময় কমপক্ষে ১৫টি গ্রুপ ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গেলের মিয়ানমার অংশ নিয়ন্ত্রণ করত। কিন্তু বর্তমানে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে হটিয়ে ওই অংশের প্রায় পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছে আরাকান আর্মি। আগে থেকেই ওই এলাকার মাদক ও অস্ত্রের ব্যবসা করত আরাকান আর্মি। ব্ল্যাক ট্রায়াঙ্গেল পুরো নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর তাদের অবৈধ ব্যবসা আরও সম্প্রসারণ হচ্ছে; যার প্রভাব সরাসরি পড়বে বাংলাদেশে।

 

 

সর্বশেষ খবর