বুধবার, ১৩ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
ঐতিহ্যের ইফতার

প্রথম দিনেই জমেছে চকবাজার

মোস্তফা মতিহার

প্রথম দিনেই জমেছে চকবাজার

ঢাকার ইতিহাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই এগিয়ে চলছে চকবাজারের ঐতিহ্যের ইফতার বাজার। আধুনিকতার নানা বিবর্তনেও যুগের পর যুগ ধরে শাহি ইফতারের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে চকবাজার। ভিন্ন স্বাদ নিতে চকবাজারের ইফতার কিনতে ছুটে আসছেন ভোজনরসিকরা। বর্তমানে চলমান ফাস্টফুড কালচার এবং তারকা হোটেলের বুফে আয়োজনও চকবাজারের ইফতারের জনপ্রিয়তায় চিড় ধরাতে পারেনি।

পুরান ঢাকার চকবাজার শাহি মসজিদের সামনের ইফতারি কিনতে দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। গতকাল রোজার প্রথম দিনেই এমন চিত্রই লক্ষ্য করা যায়। বলতে গেলে প্রথম দিনেই জমে উঠে চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজার। সরেজমিনে দুপুরে চকবাজার শাহি মসজিদ এলাকার ইফতার বাজারে গেলে চোখে পড়ে সেই চিরচেনা হৈহুল্লোড়-হইচই। ‘বড় বাপের পোলায় খায় ঠোঙায় ভইরা লইয়া যায়’ আর ‘আসেন আসেন’ বলে ডাক শোনা যায়। সেখানে একদিকে চলছে ইফতার তৈরি অন্যদিকে সাজানো। কেউ আবার ব্যস্ত বিক্রিতে। ক্রেতারাও যার যার পছন্দের ইফতার কিনছেন।

এই এলাকার শাহজাহান আলী বিক্রি করেন আস্ত মুরগির রোস্ট, কোয়েল পাখির রোস্টসহ কয়েক পদের ইফতার। তিনি জানান, আস্ত মুরগির রোস্ট ৩০০ আর কোয়েল পাখির রোস্ট প্রতিটি ৮০ টাকায় বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, ২৫ বছর ধরে এখানে ইফতারি নিয়ে বসি। গত বছর কোয়েলের রোস্ট বিক্রি করেছি ৬০ টাকা পিস। এ বছর কোয়েলই কিনতে হয়েছে ৬০ টাকায়। রান্না ও মসলার খরচতো আরও ১০ টাকা। ১০ টাকা লাভ না করলে কীভাবে হবে। তিনি বলেন, গত বছর পুরো এক মাসে ৬০ হাজার টাকা লাভ করেছি। এবার কি হবে জানি না। খাবার না ঢেকে কেন খোলাভাবে রাখছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘খাবার ঢেকে রাখলে সবাই দেখতে পান না। ভালোভাবে না দেখলে অনেকে কিনতে চান না।’ একটু সামনে এগোতেই দেখা যায়, ‘বড় বাপের পোলায় খায় ঠোঙায় ভইরা লইয়া যায়’ নামক বিভিন্ন পদের মিশ্রণের এই বিশেষ খাবারটি নিয়ে চারদিকে চিৎকার, চেঁচামেচি-শোরগোল। এবারও এই খাবারটির দাম রাখা হয়েছে কেজিপ্রতি ৮০০ টাকা। কেউ আধা কেজি, কেউবা ২৫০ গ্রাম করে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বিক্রেতা আহমেদ হোসেন বলেন, আমার দাদা এখানে পাকিস্তান আমল থেকে এই আইটেম নিয়ে বসতেন। এখন আমি আর আমার ভাই বসি। আমাদের খাবার তৈরির খরচ বাড়লেও দাম বাড়াইনি। লাভের পরিমাণটা কমিয়ে দিয়েছি।

এই বাজারের আরেক বিখ্যাত খাবার হচ্ছে সুতি কাবাব। গরুর সুতি কাবাব প্রতি কেজি ১ হাজার এবং খাসির সুতি কাবাব বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজি শাহী ছোলা ২৮০, ঘুঘনি ১৪০, চিকেন আচারি ১ হাজার ৩০০ এবং কাশ্মীরি বিফ আচারি ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া অন্য খাবারগুলোর মধ্যে প্রতিটি জালি কাবাব ৩০, টানা পরোটা ৫০, কিমা পরোটা ৭০, কাঠি কাবাব ৪০ এবং ডিম চপ ৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। পাশাপাশি দইবড়া ১০০ টাকা (৩টি), ফালুদা কেজি ২২০ টাকা, পেস্তা বাদাম শরবত ২৫০ টাকা লিটার, মুরগির ললিপপ প্রতিটি ৪০ টাকা, চিকেন ফিংগার ৪০ টাকা, চিকেন স্যান্ডুইচ ৫০ টাকা, চিকেন স্প্রিং রোল ৪০ টাকা, ভেজিটেবল রোল ৩০ টাকা, চিকেন রোল প্যাটিস ৪০ টাকা, চিকেন প্যাটিস ৫০ টাকা, চিকেন শর্মা ৭০ টাকা, চিকেন রেশমি কাবাব ৫০ টাকা, মিনি পিৎজা ৭০ টাকা এবং চিকেন টিক্কা ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

 

সর্বশেষ খবর