শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে ব্যর্থ হলেই ব্যাংক একীভূত

ব্যাংকের সংখ্যা কমে হবে ৪৫টি

শাহেদ আলী ইরশাদ

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হলেই দেশের দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা হবে। আগামী বছরের জানুয়ারিতে একীভূত প্রক্রিয়া শুরু হলে ব্যাংকের সংখ্যা কমে ৪৫টিতে নেমে আসবে। ব্যাংক একীভূত নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন আমানতকারীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, একটি ব্যাংক বন্ধ করে দেওয়া খুবই ব্যয়বহুল এবং জটিল ও বেদনাদায়ক প্রক্রিয়া। তাই আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং আর্থিক খাতে জনগণের আস্থা ধরে রাখার অংশ হিসেবে সমস্যা প্রকট হওয়ার আগেই ব্যাংকের দুর্বলতা শনাক্ত করা জরুরি। এ জন্য প্রম্পট কারেকটিভ অ্যাকশন (পিসিএ) নামে একটি পরিকল্পনা (ফ্রেমওয়ার্ক) প্রণয়ন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সমস্যা জর্জরিত ও দুর্বল ব্যাংকের সংকট কাটিয়ে তুলতে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

সব ক্যাটাগরিতে ব্যাংকগুলোকে পাঁচ সূচকের মাধ্যমে এক থেকে চার পর্যন্ত ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত করে সংকটগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর       মান উন্নয়নের নীতি ঠিক করা হবে। পাঁচ সূচকে লাগাতার পতন হলে সব ক্যাটাগরির ব্যাংকগুলোকে ‘অনিরাপদ’ ও ‘আর্থিকভাবে অস্বাস্থ্যকর বা দুর্বল’ হিসেবে চিহ্নিত হবে। পরপর দুই ক্যাটাগরিতে অবনতি হলে তা সবচেয়ে ‘দুর্বল’ বা ‘খারাপ’ ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঠিক করা সূচক অনুযায়ী, খেলাপি ঋণ ৫-৮ শতাংশের নিচে থাকলে ক্যাটাগরি-১, ৮ থেকে ১১ শতাংশ হলে ক্যাটাগরি-২, ১১ থেকে ১৪ শতাংশ নিচে ক্যাটাগরি-৩ এবং ১৪ শতাংশের ওপরে হলে ওই ব্যাংককে ক্যাটাগরি-৪ এ রাখা হবে। দুর্বলতা কাটিয়ে ব্যাংকের মান উন্নয়নে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে একীভূত করার মতো পদক্ষেপ নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আর্থিক সূচকের বাইরেও ব্যবস্থাপনা, মুনাফার পরিবর্তে বড় ধরনের লোকসান, দায় শোধে ব্যর্থতা, বারবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অমান্য ও পরিপালন করতে গড়িমসি, জাল-জালিয়াতির ঘটনা, পরিচালক পর্ষদের অনিরাপদ কর্মকাণ্ড দেখা দেওয়া ব্যাংককে পিসিএ ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় আনবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেনামি ঋণ, তারল্য সংকট, উচ্চ খেলাপির হার, পরিচালক নিয়োগে পারিবারিক দৌরাত্ম্য ব্যাংক খাতকে সংকটে ফেলেছে। সংকটের চাপ সামলাতে অধিকাংশ ব্যাংক ধারদেনা করে চলছে। পাশাপাশি ব্যাংকে সুশাসনের অভাব দেখা দেওয়ায় ব্যাংকগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনতে দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক আফতাব-উল ইসলাম সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আগামী ৬ মাস বা এক বছরের মধ্যে কীভাবে ব্যাংক একীভূত হবে তা নিয়ে আমানতকারীদের মধ্যে আতঙ্ক আছে। একীভূত করলে আমানতকারীর ওপর কোনো প্রভাব পড়বে কি না সেটিও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খেলাপি ঋণ অনেক বেড়েছে। এখন যে পর্যায়ে গেছে তাতে ব্যাংক একীভূত করা ছাড়া উপায় নেই। গত ৬ মার্চ বেসরকারি ব্যাংকের মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার এক বছরের মধ্যে দেশের দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকগুলোর সঙ্গে একীভূত করা হবে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ নিয়ে কাজ করছে। গভর্নর বলেছেন, একীভূতকরণের দুটি উপায় আছে। একটি হলো ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অন্যটি হলো দুর্বল ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রম্পট কারেকটিভ অ্যাকশন (পিসিএ) কাঠামোর অধীনে সবল ব্যাংকগুলোর সঙ্গে একীভূত হবে। ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি থেকে ৪৫টিতে নামিয়ে আনার ইঙ্গিত দেন গভর্নর। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, প্রম্পট কারেকটিভ অ্যাকশন (পিসিএ) ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী কোনো কোন দুর্বল ব্যাংক ইচ্ছাকৃত ভাবে একীভূত না হয় তাহলে আগামী ডিসেম্বরের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে মার্জার করে দেবে। তার আগে ব্যাংকগুলোকে শ্রেণিকরণ করতে চলতি বছরের ব্যালান্স শিটের ওপর ভিত্তি করে চারটি ক্যাটাগরিতে ব্যাংকগুলোকে মূল্যায়ন করা হবে। ২০২৫ সালের মে মাস থেকে কার্যকর হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর