রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

নির্ধারিত দাম মানছে না কেউ

২৯ পণ্যের দাম নির্ধারণ, চলছে অভিযান

রাশেদ হোসাইন

সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় ২৯টি পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে তার কোনো প্রতিফলন নেই। খুচরা বিক্রেতারা মানছে না সরকার নির্ধারিত দাম। গতকাল বিভিন্ন বাজারে দেখা যায়, আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন নিত্যপণ্য। এ বিষয়ে বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারিতে নির্ধারিত দামে পণ্য কিনতে না পারায় খুচরা পর্যায়েও নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব নয়। গত শুক্রবার ২৯ পণ্যের দাম বেঁধে দিয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করে কৃষি বিপণন অধিদফতর। এতে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত যেন নতুন দামে পণ্য কেনাবেচা করা হয়। এদিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ৫৫টি টিম সারা দেশে ১৪১টি প্রতিষ্ঠান থেকে ৭ লাখ ৫২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে।

এদিকে দোকানে মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করে ভাউচার না দিয়ে এবং নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে পণ্য বিক্রির অভিযোগে দেশের বিভিন্ন জেলায় অভিযান ও জরিমানা আদায় শুরু করেছে প্রশাসন।

গতকাল সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের সঙ্গে চলমান বাজার দরের কোনো মিল নেই। নির্ধারিত তালিকা অনুযায়ী মুগ ডালের খুচরা দাম ১৬৫ দশমিক ৪১ টাকা কেজি। কিন্তু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। মাষকলাই ১৬৬ দশমিক ৪১ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা দরে। ছোলার (আমদানিকৃত) দাম ৯৮ দশমিক ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা। মসুর ডাল (উন্নত) দাম ১৩০ দশমিক ৫০ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা। মসুর ডাল (মোটা) ১০৫ দশমিক ৫০ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। খেসারির ডাল ৯২ দশমিক ৬১ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা দরে। পাঙ্গাশ (চাষের মাছ) ১৮০ দশমিক ৮৭ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। কাতল (চাষের মাছ) ৩৫৩ দশমিক ৫৯ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকায়। গরুর মাংস কেজি ৬৬৪ দশমিক ৩৯ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। ছাগলের মাংস ১০০৩ দশমিক ৫৬ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ দশমিক ৩০ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। সোনালি মুরগি ২৬২ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা দরে।

ডিম প্রতি পিস ১০ দশমিক ৪৯ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১ টাকার ওপরে। দেশি পিঁয়াজ কেজি খুচরা ৬৫ দশমিক ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হরেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা। দেশি রসুন কেজি খুচরা ১২০ দশমিক ৮১ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা। আমদানিকৃত আদা খুচরা বাজারে ১৮০ দশমিক ২০ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলে বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা। শুকনো মরিচ কেজি খুচরা ৩২৭ দশমিক ৩৪ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা। কাঁচামরিচ কেজি ৬০ দশমিক ২০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। খুচরায় বাঁধাকপি কেজি ২৮ দশমিক ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। ফুলকপি কেজি ২৯ দশমিক ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। বেগুন ৪৯ দশমিক ৭৫ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা। শিম খুচরায় ৪৮ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। আলু ২৮ দশমিক ৫৫ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা। টম্যাটো ৪০ দশমিক ২০ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। মিষ্টি কুমড়া ২৩ দশমিক ৩৮ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা।

বহুল প্রচলিত জাহিদী খেজুর ১৮৫ দশমিক ০৭ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। মোটা চিঁড়া ৬০ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা দরে। লাল চিঁড়া বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা। সাগর কলা হালি ২৯ দশমিক ৭৮ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। বেসন ১২১ দশমিক ৩০ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে এংকরের বেসন ১২০ টাকা কেজি আর ভুট্টার বেসন ১৬০ টাকা কেজি।

এদিকে সরকার নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি না করায় রংপুরে তিন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এ সময় সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করার অভিযোগে তিন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়। গতকাল সরকার নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে বিক্রয় এবং ক্রয়-বিক্রয় ভাউচার না থাকার অভিযোগে তিন খেজুর ব্যবসায়ীকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সেই সঙ্গে তাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে রংপুর বিভাগীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক আজাহারুল ইসলাম বলেন, প্রথম দিন হওয়ায় সতর্কতামূলক জরিমানা করা হয়েছে। এরপর এ রকম অভিযোগ পাওয়া গেলে জরিমানা ও দণ্ড দেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।

বরিশালের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গতকাল বাজার নজরদারি কর্মসূচির অংশ হিসেবে বরিশাল নগরীর বাজার রোডে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট। অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে নিমেষেই দোকান বন্ধ করে সটকে পড়ে অনেক দোকানি ও কর্মচারীরা। এর আগে দোকানে মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, ভাউচার না থাকা এবং নির্ধারিত মূল্যের বেশি মূল্যে পণ্য বিক্রির অভিযোগে আনন্দ মুদি ঘরের স্বত্বাধিকারীকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

মাগুরা প্রতিনিধি জানান, মাগুরাতে কৃষি বিপণনের নির্ধারিত ২৯টি পণ্যের মূল্যের প্রায় সবগুলোর দাম বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে নিত্যপণ্যের বাজার তদারকির অংশ হিসেবে মাগুরা শহরের গৌতম ফল ফান্ডারে অভিযান চালিয়ে মজুতকৃত ১২০ বস্তা মেয়াদ উত্তীর্ণ খেজুর জব্দ করেছে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া ফল ব্যবসায়ীকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, গতকাল শহরের নতুনহাটে বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উজ্জ্বল বাইন। এ সময় যথাযথভাবে মূল্য তালিকা সংরক্ষণ না করা, অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রি করায় এক ব্যবসায়ীকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

সর্বশেষ খবর