রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে গোলাম আরিফ টিপুর দাফন

নিজস্ব প্রতিবেদক

শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে গোলাম আরিফ টিপুর দাফন

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপুর লাশ দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল রাত পৌনে ৮টায় রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়। এ সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমের সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বেলা ১১টায় রাজশাহী কলেজ শহীদ মিনার চত্বরে এবং সকাল পৌনে ৯টায় তাঁর জন্মস্থান চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের রানীহাটি ঈদগাহ মাঠে পৃথক দুটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ শিমন সাংবাদিকদের জানান, রাত পৌনে ৮টায় বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়। শুক্রবার সকাল ৮টায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। এরপর শুক্রবার সকালে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় বেইলি রোডে তাঁর বাসস্থান মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্টের সামনে। পরে বিকাল ৩টায় তাঁর কর্মস্থল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল চত্বরে দ্বিতীয় জানাজা নামাজের আয়োজন করা হয়। পরে তাঁর লাশ পল্টনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির অফিস মুক্তি ভবনে নেওয়া হয়। সেখান থেকে নেওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। রাজশাহী থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, রাজশাহী কলেজ শহীদ মিনার চত্বরে গোলাম আরিফ টিপুর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টায় তাঁর লাশ শহীদ মিনার চত্বরে নিয়ে আসা হয়।

 জানাজায় অংশ নেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদ, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, সদর আসনের এমপি শফিকুর রহমান বাদশা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনের নেতা-কর্মী ও বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ। এর আগে শহীদ মিনার চত্বরে গোলাম আরিফ টিপুর লাশ পৌঁছালে সেখানে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা, সহকর্মীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সকাল পৌনে ৯টার দিকে গোলাম আরিফ টিপুর জন্মস্থান চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার রানীহাটি ঈদগাহ মাঠে তাঁর আরও একটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। লাশ সকালে জানাজাস্থলে আনা হলে জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন ও পুলিশ সুপার মো. ছায়দুল হাসান লাশে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে গার্ড অব অনার শেষে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তাঁর তার ছোটবেলার বন্ধু, মেয়ে ডানা নাজলী ও আত্মীয়-স্বজনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

গোলাম আরিফ টিপু ১৯৩১ সালের ২৮ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জের (তৎকালীন মালদহ জেলা, ব্রিটিশ ভারত) শিবগঞ্জ উপজেলার কমলাকান্তপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আফতাব উদ্দিন আহমদ ছিলেন জেলা রেজিস্ট্রার। ৯ ভাই-বোনের মধ্যে টিপু দ্বিতীয়। তিনি কালিয়াচর বিদ্যালয় থেকে ১৯৪৮ সালে মাধ্যমিক ও রাজশাহী কলেজ থেকে ১৯৫০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। একই কলেজ থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্নের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৪ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫২ সালে রাজশাহীতে বাংলা ভাষা আন্দোলন তাঁর নেতৃত্বেই সংগঠিত হয়। তিনি রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের রাজশাহী অঞ্চলের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ২০১৯ সালে একুশে পদক প্রদান করে। গোলাম আরিফ টিপু ১৯৫৮ সালে একজন আইনজীবী হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি একাধিকবার রাজশাহী আইনজীবী সমিতির সভাপতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন।

সর্বশেষ খবর