রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

চীনে পড়তে গিয়ে প্রতারণায় জড়িত তিন শিক্ষার্থী আটক

অ্যাপস-জুয়ার সাইটে ফাঁদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতি বছরই উচ্চশিক্ষা নিতে বাংলাদেশ থেকে চীনে পাড়ি জমাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে যাওয়ার পর অনেকে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার লোভে নানাভাবে চাইনিজ বিভিন্ন প্রতারক চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। দেশে ফিরেও সে প্রতারণা চক্রের ফাঁদ থেকে তারা আর বেরোতে পারেন না। তারা হয়ে পড়েন চায়না প্রতারক চক্রের মূল হাতিয়ার। এরপর বিভিন্ন অ্যাপস খুলে, জুয়ার সাইট চালিয়ে এবং অনলাইনে মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের লোভে ফেলে এ প্রতারক চক্র বাংলাদেশ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এমনই একটি চক্রের তিন বাংলাদেশি সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩০টি ভারতীয় সিম জব্দ করা হয়েছে। এর আগে অ্যামাজন.কম, দারাজ.কম.বিডি, ফ্লিপকার্ট.কম, পিটাবো.কম-এর মতো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির নামে ভুয়া সাইট খুলে কোটি কোটি টাকা নেওয়া চক্রের দুই চাইনিজ নাগরিকসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সেটির তদন্ত করতে গিয়ে নতুন করে এই চক্রের সন্ধান মেলে। গ্রেফতারকৃত রাকিবুল ইসলাম রাতুল, আসাদুজ্জামান রাজু ও মামুন হাওলাদার চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। প্রতারণার কাজে তারা ভারতীয় সিম ব্যবহার করে বলে জানান।

ডিএমপির কলাবাগান থানায় এক ভুক্তভোগীর দায়ের করা মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের এডিসি সাইফুর রহমান আজাদ। তিনি বলেন, ঢাকার বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ বিষয়ে ডিবি কর্মকর্তা আজাদ আরও বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় চাইনিজ প্রতারণার ফাঁদ রয়েছে।

 তারা তো ভালো বাংলা বা ইংরেজি বলতে পারেন না। তাই তারা চায়নায় পড়তে চাওয়া বাংলাদেশি চাইনিজ শিক্ষার্থীদের টার্গেট করেন। চাইনিজ ভাষায় পারদর্শী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন প্রতারণার কাজটি তারা করছেন। অনলাইনে মাল্টি লেভেল মার্কেটিংয়ের লোভে ফেলে, অ্যাপ ও জুয়ার সাইট খুলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন চাইনিজরা। প্রত্যেকটি প্রতারণার সাইটের অ্যাডমিন চীনে। ডিবি জানায়, এ চক্রের মূল পরিকল্পনাকারী হচ্ছে দুই চাইনিজ গাগা ও চিং চং। তারা প্রতারণার জন্য চায়নায় একটা সার্ভার স্থাপন করেছে। সেখান থেকে চিং চং বিকাশ, নগদসহ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট প্রতারণা করে। এরপর কিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে টাকা তাদের দেশে নিয়ে যাচ্ছে।

গ্রেফতার রাতুল, রাজু ও মামুন সম্পর্কে ডিবি কর্মকর্তা আজাদ বলেন, গ্রেফতারকৃতরা বাংলাদেশ থেকে পড়ালেখার উদ্দেশ্যে চীনে গিয়ে সবাই তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে যথেষ্ট পারদর্শী হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে প্রতারক চক্রের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। চাইনিজরা তাদের জানায় তারা কিছু অ্যাপস তৈরি করেছে। এসব অ্যাপস ব্যবহার করে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। এ কার্যক্রমে শুধু প্রয়োজন হবে কিছু বাংলাদেশি সিম, বিকাশ/নগদ অ্যাকাউন্ট, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। স্বল্প সময়ে অবৈধভাবে অধিক উপার্জনের আশায় তারা এ প্রতারণা কাজে যুক্ত হয়। চাইনিজদের বাংলাদেশি সিম বিকাশ/নগদ অ্যাকাউন্ট, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সরবরাহ করে। প্রাথমিকভাবে তারা বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে কিছু মানুষকে প্রতারিত করতে সক্ষম এবং স্বল্প সময়ে লাখ লাখ টাকা আয় করে। প্রতারণার প্রক্রিয়া সম্পর্কে তারা জানায়, অনলাইনে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং, অনলাইন ফাইন্যান্সিং, বেটিং সাইট, সি-ফাইন্যান্স, লোন অ্যাপস, হানিট্র্যাপেও সরাসরি জড়িত। গ্রেফতাররা চাইনিজ প্রতারক চক্রের হয়ে বাংলাদেশি এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। এই চক্রে দেশি-বিদেশি আরও লোকজন জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য মিলেছে। চক্রটি মানুষকে অনলাইনে টাকা উপার্জনের কিংবা পার্টটাইম চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করে থাকে।

সর্বশেষ খবর