সোমবার, ১৮ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

কদর কমায় হতাশ ১৪ দল শরিকরা

রফিকুল ইসলাম রনি

কদর কমায় হতাশ ১৪ দল শরিকরা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪-দলীয় জোটকে ১৬টি আসন ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দেয় মাত্র ৭টি আসন। এ নিয়ে শরিকদের মধ্যে ‘ক্ষোভ’ থাকলেও তারা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘কৌশল’ হিসেবে জোটের ছেড়ে দেওয়া আসনে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতাকে বসিয়ে দিতে দাবি করে। কিন্তু আওয়ামী লীগ কাউকে বসায়নি। ফলে জোটের অন্যতম শরিক জাসদ সভাপতি সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুসহ আওয়ামী লীগের ছাড় পাওয়া পাঁচ আসনে জোটের প্রার্থী হেরে যান। দশম সংসদ নির্বাচনের পর জোট শরিকরা মন্ত্রিসভায় থাকলেও একাদশ ও দ্বাদশে কাউকে রাখা হয়নি। এবারের সংসদ নির্বাচনের পর জোট প্রধানের সাক্ষাৎ চেয়েও সময় পাননি শরিক দলের নেতারা। আবার ঐক্যবদ্ধভাবে এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচিতে তাদের ডাকা হয়নি। ফলে শরিক দলের নেতাদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। জোটের শরিক নেতারা বলছেন, তাদের কদর কমে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের কাছে। সে কারণে সংসদ নির্বাচনে কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি। এমনকি মন্ত্রিসভাতেও কাউকে রাখা হয়নি। একলা চলো নীতিতেই হাঁটছে আওয়ামী লীগ। সে কারণে হতাশায় ভুগছেন শরিক দলের নেতারা।

এ প্রসঙ্গে জাসদ সভাপতি সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জোট শরিকরা মূল্যায়ন ও অবস্থান পর্যালোচনা করছি। আশা করছি খুব শিগগিরই জোটনেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেই সব পরিষ্কার হবে।’ জানা গেছে, ১৪-দলীয় জোটে থাকার কারণে শরিক দলের নেতারা সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম করতে পারছেন না। আবার সরকারি দলের এমন অবমূল্যায়নও মানতে পারছেন না। সে কারণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন কেউ কেউ। সাম্প্রতিক সময়ে ইফতার নিয়ে এক মন্ত্রীর বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক  ইনু। এর আগে কখনো এমন ভাষায় সমালোচনা করতে দেখা যায়নি তাকে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জোট শরিকদের শক্তি বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া দলগুলোর মাঠে অবস্থান গড়ে তোলা কঠিন হয়ে পড়ছে।

সাংগঠনিকভাবে কোনো অবস্থান নেই সাম্যবাদী দলের (দিলীপ)। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভায় স্থান পান সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া। টেকনোক্র্যাট কোটায় শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন বাম দলের এই নেতা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জোটপ্রধান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে তার দাবি ছিল চট্টগ্রাম থেকে একটি আসন ছাড় দেওয়ার। কিন্তু আওয়ামী লীগ তা দেয়নি। সে কারণে মন ভালো নেই শরিক দলের এই নেতার। গতকাল সন্ধ্যায় টেলিফোন করা হলে প্রথমে কথা বলতে চাননি। পরে অবশ্য এ প্রতিবেদককে মন্তব্য দিতে রাজি হন। জোটের কার্যকারিকতা প্রসঙ্গে দিলীপ বড়ুয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আসলে এখন সবকিছুর ভারসাম্য পরিবর্তন হয়েছে। আওয়ামী লীগ যদি মনে করে ১৪ দলের কার্যকারিতা আছে, তাহলে আছে। তারা যদি মনে করে জোটের অবস্থান ঝুলিয়ে রাখবে, তাহলে তাই। জোটের কার্যক্রম কী তা নির্ভর করছে আওয়ামী লীগের ওপর। তবে আমি মনে করি এখনো জোটের প্রাসঙ্গিকতা কমে যায়নি।’ জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ১৪-দলীয় জোটের প্রধান আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা করছেন শরিক জোটের নেতারা। এখনো বৈঠকের সময় পাননি তারা। তবে খুব শিগগিরই বৈঠকে হবে বলে মনে করেন শরিক দলের একাধিক নেতা। এ প্রসঙ্গে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, খুব শিগগিরই জোটপ্রধানের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হচ্ছে। সেখানেই সবকিছু পরিষ্কার হবে। জানা গেছে, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছে দুটি আসন পায় তরিকত ফেডারেশন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো আসনই দেওয়া হয়নি। দলের প্রধান চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও নির্বাচনের দুই দিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। জানা গেছে, ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে গ্রেনেড হামলার পর ১৪-দলীয় জোটের যাত্রা শুরু হয়। জোটের পক্ষ থেকে ২৩ দফা ঘোষণা করা হয়। জোট গঠনের পর পরই ১১ দল, সিপিবিসহ একাধিক দল বের হয়ে যায়। বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটে রয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, সাম্যবাদী দল, তকিরত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি (জেপি), ন্যাপ, গণতন্ত্রী পার্টি, বাসদ, গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, কমিউনিস্ট কেন্দ্র।

নবম থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত শরিক দলের নেতাদের যেসব আসনে ছাড় দেওয়া হয়, সেখানে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী থাকে না। এমনকি সেখানে কোনো বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকত না। কিন্তু গত ৭ জানুয়ারি এর ব্যতিক্রম দেখা গেছে। এ নির্বাচনে শরিক দলের সাতজনের মধ্যে মাত্র দুজন পাস করেছেন। বাকিরা আওয়ামী লীগের নেতা, স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছেন। গত সংসদ নির্বাচনে শরিকদের সাংগঠনিক দুর্বলতা চরমভাবে ফুটে উঠেছে। অনেকে মন্ত্রিসভায় থাকলেও নিজ এলাকায় সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। এ বছর গণতন্ত্রী পার্টি থেকে সংরক্ষিত নারী আসনে একজনকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দল এটিকে জোটের প্রার্থী হিসেবে চিহ্নিত করছে। গণতন্ত্রী পার্টির (একাংশ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কাছে জোটের প্রয়োজনীতা এখন আছে কি না সেটা জানা নেই। তবে জাতির কাছে এখনো ১৪-দলীয় জোটের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কারণ যে কমিটমেন্ট নিয়ে জোটের যাত্রা শুরু হয়েছিল তা এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি।’

 

সর্বশেষ খবর