শিরোনাম
সোমবার, ১৮ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

সব পণ্যই বিক্রি বেশি দামে

সরকারি দামের তোয়াক্কা করছে না কেউ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারের নির্ধারিত দামের তোয়াক্কা করছে না কেউই। নিয়মিত অভিযান এবং জরিমানা করেও কোনোভাবে দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সরকারের নির্ধারিত ২৯টি পণ্যের দাম কোথাও মানতে দেখা যায়নি। সরকার প্রতি কেজি আলুর মূল্য ২৯ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ৩৫ টাকায়। কাঁচামরিচ ৬০ টাকা নির্ধারণ করলেও বাজারে দ্বিগুণ দামে অর্থাৎ ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এভাবেই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সব পণ্য। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, একটা জিনিসের দাম আপনি যখন যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করবেন, সঙ্গে সঙ্গে এটি বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। আগে এটা নির্ধারণ করা জরুরি ছিল। অনেক দিন ধরে আইনটা ছিল কিন্তু করা হয়নি। এখন সমন্বিতভাবে কৃষি বিপণন অধিদফতর, ভোক্তা অধিদফতর, ইউএনও, ডিসি সবাই মিলে সমন্বয় করবে। আশা করি, এটা একটা যৌক্তিক পর্যায়ে চলে আসবে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারিতে নির্ধারিত  দামে পণ্য কিনতে না পারায় খুচরা পর্যায়েও নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। গত শুক্রবার ২৯ পণ্যের দাম বেঁধে দিয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করে কৃষি বিপণন অধিদফতর। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের সঙ্গে চলমান বাজারদরের কোনো মিল নেই। নির্ধারিত তালিকা অনুযায়ী মুগ ডালের খুচরা দাম প্রতি কেজি ১৬৫ দশমিক ৪১ টাকা। কিন্তু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। মাষকলাই ১৬৬ দশমিক ৪১ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা দরে। ছোলার (আমদানিকৃত) দাম ৯৮ দশমিক ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা। মসুর ডাল (উন্নত) দাম ১৩০ দশমিক ৫০ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা। মসুর ডাল (মোটা) ১০৫ দশমিক ৫০ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। খেসারির ডাল ৯২ দশমিক ৬১ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা দরে। পাঙাশ (চাষের মাছ) ১৮০ দশমিক ৮৭ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। কাতল (চাষের মাছ) ৩৫৩ দশমিক ৫৯ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকায়। গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬৬৪ দশমিক ৩৯ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। ছাগলের মাংস ১০০৩ দশমিক ৫৬ টাকা প্রতি কেজি নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ দশমিক ৩০ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। সোনালি মুরগি ২৬২ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা দরে। ডিম প্রতি পিস ১০ দশমিক ৪৯ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ১১ টাকার ওপরে। দেশি পিঁয়াজ কেজি খুচরা ৬৫ দশমিক ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। দেশি রসুন প্রতি কেজি খুচরা ১২০ দশমিক ৮১ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা। আমদানিকৃত আদা খুচরা বাজারে ১৮০ দশমিক ২০ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়। শুকনো মরিচ কেজি খুচরা ৩২৭ দশমিক ৩৪ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা। কাঁচামরিচ কেজি ৬০ দশমিক ২০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। খুচরায় বাঁধাকপি কেজি ২৮ দশমিক ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। ফুলকপি কেজি ২৯ দশমিক ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। বেগুন ৪৯ দশমিক ৭৫ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা। শিম খুচরায় ৪৮ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। আলু ২৮ দশমিক ৫৫ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা। টমাটো ৪০ দশমিক ২০ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। মিষ্টি কুমড়া ২৩ দশমিক ৩৮ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। জাহিদি খেজুর ১৮৫ দশমিক ০৭ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। মোটা চিঁড়া ৬০ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা দরে। লাল চিঁড়া বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। সাগর কলার হালি ২৯ দশমিক ৭৮ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। বেসন ১২১ দশমিক ৩০ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে এংকরের বেসন ১২০ টাকা কেজি আর ভুট্টার বেসন প্রতি কেজি ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অনলাইন পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান চালডাল ডট কমে দেখা যায়, হাড়সহ মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৫৯ টাকা করে। ছোলা ১০৯ টাকা। দেশি মসুর ডাল ১৪৯ টাকা। মুগ ডাল ১৭৮ টাকা। দেশি পিঁয়াজ ৮৯ টাকা। সাগর কলা ৪৫ টাকা। আমদানি করা মসুর ডাল ১১৯ টাকা। আলু ৩৯ টাকাসহ প্রায় নির্ধারিত সব পণ্যই বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা যায়। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সরকার দাম নির্ধারণ করলেই যদি বাজারে বাস্তবায়ন হয়ে যেত তাহলে আমরা তো খুশি হতাম। সরবরাহ আর চাহিদা অনুসারে মূল্য নির্ধারণ হয়। সুতারং চাহিদা অনুসারে সরবরাহ নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। সরকার সম্ভবত চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছে না। সেজন্য বাজারে দাম বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় যদি সরবরাহ বেশি হতো তাহলে হয়তো দাম কম হতো। বাজারে প্রতিযোগিতা ও চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারলেই দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।

সর্বশেষ খবর