সোমবার, ১৮ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভারতে ৪৪ দিন ধরে ভোট, নজিরবিহীন বলছে বিরোধী দল

প্রতিদিন ডেস্ক

ভারতে আগামী ১৯ এপ্রিল থেকে টানা ৪৪ দিন ধরে সাত দফায় লোকসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। তফসিল অনুযায়ী ভোট গ্রহণ শেষ হবে ১ জুন। কিন্তু এত দীর্ঘ সময়ের নির্বাচনকে ‘নজিরবিহীন’ বলে উল্লেখ করেছে বিরোধী দলগুলো। তাদের ভাষ্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ক্ষমতাসীন বিজেপি দল বিশেষ সুবিধা পেতেই এত দীর্ঘদিনের নির্বাচনে সায় দিচ্ছে। সূত্র : ভারতীয় গণমাধ্যম বিশ্লেষকরা বলছেন, সব মিলিয়ে ৪৪ দিন ধরে চলবে ভোট গ্রহণ পর্ব। যা ভারতের সাধারণ নির্বাচনের ইতিহাসে নজিরবিহীন। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের পর দীর্ঘতম সময়কাল ধরে চলা ভোট হতে চলেছে। ভোট গণনার সময় ধরলে সময়-পর্ব আরও বাড়বে। এর আগে একবারই এর চেয়ে বেশি দিন ধরে নির্বাচন হয়েছে, সেটা ছিল ১৯৫১-৫২ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচন।

এদিকে তফসিল বিষয়ে বিরোধী দলগুলো বলছে, এই দীর্ঘ সময়ের নির্বাচনে বাড়তি সুবিধা পাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাদের আপত্তি দুই জায়গায়। এক. এত দিন ধরে নির্বাচনে সেই দল অ্যাডভান্টেজ পাবে যাদের অর্থের জোর বেশি আছে। কারণ ভোট যত দীর্ঘদিন ধরে চলবে, প্রচারের খরচ তত বাড়বে। দুই. ভোট প্রচারের জন্য জনসভার খরচ, সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারের খরচের, সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপনের খরচ, সবটাই দীর্ঘদিন ধরে চালাতে হবে। যা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য কঠিন হবে।

এ বিষয়ে কংগ্রেস দলের ভাষ্য, নরেন্দ্র মোদি যাতে দেশের সব প্রান্তে প্রচারে যাওয়ার সুযোগ পান, সে উদ্দেশ্য সাধনেই এই দীর্ঘ ভোটসূচি। এত দিন সাধারণত দুই দফার নির্বাচনের মাঝে সময় দেওয়া হতো তিন-পাঁচ দিন। কিন্তু এবার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সময় দেওয়া হচ্ছে পাঁচ দিনের বেশি। খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রধানমন্ত্রী তথা বিজেপির তারকা প্রচারকরা প্রচারের সময় অনেক বেশি পাবেন। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতে পারে, সেই সুযোগ তো বিরোধীরাও পাবেন। কিন্তু তাতেও পাল্টা যুক্তি আছে। বিরোধীরাও একবাক্যে মেনে নিতে বাধ্য হবেন মোদির জনসভা অন্তত লোকসভা ভোটে যা প্রভাব ফেলবে, সেটা বিরোধীদের কোনো নেতার সভাতেই পড়বে না। অন্য বিরোধীরা আরও মনে করছেন, ভোটের সূচি এমনভাবে তৈরি হয়েছে যাতে যে যে এলাকায় বিরোধীরা শক্তিশালী বা যে যে রাজ্যে বিরোধীরা শক্তিশালী জোট গঠন করতে পেরেছে, সেখানে বিজেপি প্রচারের সুযোগ  বেশি পায়। স্বাভাবিকভাবেই এতে ভোট নিয়ে আশঙ্কার একটা জায়গা তৈরি হয়েছে।

বাদ জম্মু-কাশ্মীর : লোকসভা নির্বাচনের পাশাপাশি ওড়িশা, সিকিম, অন্ধ্রপ্রদেশ ও অরুণাচল প্রদেশ রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেও সেই ভোটের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে জম্মু-কাশ্মীর। লোকসভার সঙ্গে ভারতের এই কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলে বিধানসভার ভোট নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে কমিশন। কারণ হিসেবে নিরাপত্তাজনিত বিষয়টি উল্লেখ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। এতে দারুণ হতাশ হয়েছে জম্মু-কাশ্মীরের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো। এ ব্যাপারে জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং ন্যাশনাল কনফারেন্স সভাপতি ফারুক আবদুুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমি খুবই হতাশ। যেখানে সরকার বলছে ‘এক দেশ, এক নির্বাচন।’ সেখানে একটি সুযোগ ছিল লোকসভা এবং বিধানসভার নির্বাচন একসঙ্গে করার। চারটি রাজ্যে এরই মধ্যে সংসদ এবং বিধানসভা- উভয় নির্বাচনের জন্য ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরকে অস্বীকার করা হয়েছে কেন?

জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি) সভাপতি মেহবুবা মুফতির উপদেষ্টা ও কন্যা ইলতিজা মুফতি বলেন, জম্মু-কাশ্মীর থেকে সবকিছুই কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাই আমরা নির্বাচনের জন্য ভিক্ষা করব না।

গণনার তারিখ বদল : অরুণাচল প্রদেশ এবং সিকিম রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গণনার তারিখ বদলানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, ৪ জুন এ দুটি রাজ্যে ভোট গণনা করা হবে। কিন্তু গতকাল সেই তারিখ বদলে কমিশন জানিয়েছে, ভোট গণনা হবে ২ জুন। নির্বাচন কমিশন বলেছে, ‘মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই অরুণাচল প্রদেশ এবং সিকিমের বিধানসভার নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন।’ প্রসঙ্গত, ২ জুন দুই বিধানসভার মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। কাজেই ৪ জুন ভোট গণনা করা হলে, ভোট গণনার আগেই বিধানসভার মেয়াদ ফুরিয়ে  যেত। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২৪ এবং ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধি আইনের ১৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী, বিধানসভার মেয়াদ ফোরানোর আগেই নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ করতে হয়।

ইন্ডিয়া জোটের মেগা মিছিল : রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’র সমাপ্তি উপলক্ষে মুম্বাইয়ে ইন্ডিয়া জোটের মেগা র‌্যালির আয়োজন করা হয়েছে। তবে কংগ্রেসের এ আমন্ত্রণে সাড়া দেননি তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। এ র‌্যালিতে থাকার কথা রয়েছে এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার, শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরে, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন, সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব, বিহারের সাবেক উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব, ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ফারুক আবদুুল্লাহ, ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী চম্পাই সোরেন এবং সাবেক মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী কল্পনা সোরেন। থাকবেন বাম নেতারাও। রাহুল গান্ধীর রাজনৈতিক কর্মসূচির মঞ্চে থাকবেন আম আদমি পার্টির নেতারাও। অরবিন্দ কেজরিওয়াল উপস্থিত থাকতে না পারলেও আপের পক্ষে হাজির থাকবেন সৌরভ ভরদ্বাজ। মুম্বাইয়ের এই জনসভা থেকে ইন্ডিয়া জোটের যৌথ প্রচার কর্মসূচির রূপরেখাও ঘোষণা হতে পারে। অন্যদিকে রাহুল গান্ধীর এ উদ্যোগের বিপরীতে নরেন্দ্র মোদিও একই কর্মসূচি পালন করবেন। তার মঞ্চে থাকবেন চন্দ্রবাবু নাইডু, জনসেনা পার্টির পবন কল্যাণ প্রমুখ।

 

সর্বশেষ খবর