মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিলুপ্তপ্রায় কুয়ার দেখা মিলেছে প্রত্যন্ত গ্রামে

দিনাজপুর প্রতিনিধি

বিলুপ্তপ্রায় কুয়ার দেখা মিলেছে প্রত্যন্ত গ্রামে

বিলুপ্তির পথে প্রাচীন ঐতিহ্যগুলোর মধ্যে একটি ইঁদারা বা ইন্দারা বা কুয়া। একসময় মানুষের সুপেয় পানির উৎস ছিল বিলুপ্ত হওয়া এই ইঁদারা বা ইন্দারা বা কুয়া। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বিকালে কিংবা সন্ধ্যায় গ্রামবাংলার মা-বোনেরা কলসি নিয়ে কুয়া থেকে পানি নিয়ে আসার চিত্র তেমন দেখা না গেলেও দিনাজপুরের চিরিরবন্দর, খানসামাসহ কিছু এলাকায় আজও এমনটি দেখা গেছে। বিভিন্ন নামে পরিচিত ইঁদারা, ইন্দিরা, ইন্দ্রা, কূপ ও পাতকুয়া-ই গ্রামের মানুষের সুপেয় বা খাবার পানির সবচেয়ে ভালো মাধ্যম ছিল। ১০-১৫ ফুট গোল গর্ত করে অন্তত ৫০-৬০ ফুট নিচ পর্যন্ত মাটি খুঁড়ে এসব পাতকুয়া তৈরি করা হতো। মাটির নিচের পানির স্তরই ছিল এসব কূপের পানির প্রধান উৎস। পাতকুয়া নিচ থেকে ওপর পর্যন্ত ইট বা রিং (সিমেন্ট-বালুর তৈরি গোলাকার কাঠামো) দিয়ে বাঁধাই করা হতো আর কূপ বাঁধাই করা হতো না। নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত অনেক এলাকার মানুষ তাদের সুপেয় পানির চাহিদা পূরণ করত গভীর কূপ বা ইঁদারা থেকে। এসব কুয়া বা ইঁদারার পানি হতো স্বচ্ছ ও ঠান্ডা। সুপেয় পানি পানের অভাববোধ থেকেই মানুষ খনন করত গভীর কুয়া।

 খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর থেকে সংগৃহীত পানি দিয়ে ঘর-গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় কাজ করত। গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কুয়াগুলো কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে। যা এখন শুধুই স্মৃতি। এখন আর কুয়া দেখতে পাওয়া যায় না। আধুনিকতার ছোঁয়ায় মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে, হারিয়ে গেছে প্রকৃতির সান্নিধ্য। পানি বিশুদ্ধ করার জন্য ব্যবহার করছি কত রকমের নামি-দামি কোম্পানির ফিল্টার কিংবা পানি ফুটিয়ে। অথচ নব্বই দশক পর্যন্ত কুয়ার বা চুয়ার পানির ব্যবহার ছিল সর্বত্রই।

কালের সাক্ষী বিলুপ্ত প্রায় কুয়ার সন্ধান মিলে চিরিরবন্দরের ইসবপুর ইউপির দক্ষিণ নওখৈর গ্রামে। যার নিচে চতুর্দিকে প্লাস্টার করা। যা আজও ব্যবহার হচ্ছে। এলাকার মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে তৎকালীন পাকিস্তান শাসনামলে এটি নির্মাণ করেন মরহুম ছমিরউদ্দিন শাহ্। এখনো এই ইন্দারার পানি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। স্থানীয় তোজাম্মেল হোসেন (৬০) বলেন, বোধগম্য হওয়ার পর থেকেই আমি এ ইঁদারাটি দেখে আসছি। এর গভীরতা অনেক। এর পানি বেশ ঠান্ডা ও স্বচ্ছ। এক সময় এলাকার সবাই এ ইঁদারার পানি পান করতাম। এ ইঁদারার পানি সহজেই পাওয়া যায়। আগে পানির স্তর ভূগর্ভের নিচে নেমে গেলে এ ইঁদারার ওপরই নির্ভর করতে হতো।

সর্বশেষ খবর