শিরোনাম
বুধবার, ২০ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

রাতে থেমে থেমে মর্টার শেলের বিস্ফোরণ, আতঙ্ক টেকনাফে

কক্সবাজার প্রতিনিধি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আবারও গোলাগুলি ও মর্টার শেলের শব্দে কেঁপে উঠল কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী উপজেলা টেকনাফ। কিছুক্ষণ পরপর থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টার শেলের বিকট আওয়াজ শুনতে পেয়েছেন বলে জানান টেকনাফের বাসিন্দারা।

সোমবার রাত ১২টা থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত সীমান্ত এলাকায় থেমে থেমে রাখাইন রাজ্যের মংডুর উত্তর দিকের নাকপুরা, বলিবাজারসহ কয়েকটি গ্রামে ২০-২৩টি মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে। এতে সীমান্তে বসবাসকারীরা আতঙ্কে রয়েছে।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, টানা দেড় মাসের বেশি সময় ধরে মিয়ানমারের সরকারি (জান্তা) বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সংঘর্ষ চলছে। উভয় পক্ষের গোলাগুলি ও ভারী গোলার বিস্ফোরণে মংডু, বুচিডং-রাচিডং টাউনশিপ লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে। রবিবার রাতেও এ দুই গ্রামে ৩৩ মিনিটে ২১টি মর্টার শেলের বিস্ফোরণ হয়েছিল।

সীমান্তে বসবাসকারী একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি জানিয়েছেন, গতকাল (সোমবার) রাত সোয়া ১২টা থেকে ভোর পর্যন্ত নাকপুরা ও বলিবাজারে অন্তত ২২টি মর্টার শেলের বিস্ফোরণ ঘটে। কয়েকদিন ধরে এসব গ্রামে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সদস্যরা অবস্থান নেন এবং সেখানকার সীমান্তক্ষী পুলিশের (বিজিপি) সেক্টর ও একাধিক চৌকিতে হামলা চালাচ্ছে। সরকারি বাহিনীও তাদের অবস্থান লক্ষ্য করে মর্টার শেল নিক্ষেপ করছে। টেকনাফ স্থলবন্দরে আসা মিয়ানমারের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, পাঁচ-ছয় দিন ধরে আরাকান আর্মি মংডু টাউনশিপের দক্ষিণ-পূর্বের শহর রাচিডংয়ে হামলা বাড়িয়েছে। মংডু থেকে রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিথুয়ে (আকিয়াব) যাতায়াতের মধ্যভাগে রাচিডং শহরের অবস্থান। রবিবার রাতে এ শহরের পুরোটার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আরাকান আর্মি পাশের বুচিডং শহরটি দখলের চেষ্টা করছে। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত বাড়ছে। সীমান্তের বাসিন্দা হ্নীলা ওয়াব্রাং এলাকার মো. রফিক বলেন, মধ্যরাতের বিস্ফোরণে এপারে থেমে থেমে বিকট শব্দ ভেসে আসে। এতে বাড়িঘর কেঁপে ওঠে। বাড়ির শিশুরা ঘুম থেকে জেগে ওঠে। ভয়ে তারা কান্নাকাটি করতে থাকে। এলাকাবাসী আতঙ্কে আছে।

নাটমুড়াপাড়ার জামাল উদ্দিন বলেন, এ ধরনের গোলাগুলির আওয়াজ সব সময় শোনা যায়। তবে আগের চেয়ে গত রাতে অনেক বেশি এসেছে।

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সোসবার রাত ১২টার পর শুরু হয়ে থেমে থেমে এপারে বিকট শব্দ ভেসে আসে। তারাবি নামাজের পর যখন আমরা পানের দোকানে বসি, তখন হঠাৎ ওপার থেকে গুলি ও মর্টার শেলের বিকট শব্দ ভেসে আসে। এতে মাটি কেঁপে ওঠে।’

টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, শক্তিশালী গ্রেনেড বোমা ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণে কাঁপছে টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যংপাড়া, চৌধুরীপাড়া, জালিয়াপাড়া, হাঙ্গরডেইল, কুলালপাড়া, অলিয়াবাদসহ বেশ কটি গ্রাম। শিগগিরই যে বিস্ফোরণ বন্ধ হবে, তার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, দেড় মাসের বেশি সময় ধরে রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। কয়েক দিন বন্ধ থাকার পর গত রবি ও সোমবার রাতে আবারও দুই পক্ষে লড়াই হয়েছে। গোলাগুলি, মর্টার শেল, গ্রেনেড বোমার বিস্ফোরণে লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে মংডু টাউনশিপের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থা। টেকনাফ উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, রাখাইন রাজ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটলেও টেকনাফ সীমান্তের প্রতি বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর