বুধবার, ২০ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

জবি প্রশাসনকে লাল কার্ড দেখালেন শিক্ষার্থীরা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে লাল কার্ড দেখিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যা ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল দুপুরে গুচ্ছ ভাস্কর্য চত্বরে আয়োজিত কর্মসূচি থেকে লাল কার্ড দেখানো হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, সদ্য সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক মোস্তফা কামালকে তদন্তের আওতায় আনতে হবে। উনি যদি অভিযোগটি ঠিকভাবে আমলে নিতেন, তাহলে হয়তো প্রেক্ষাপট ভিন্ন হতো। আমাদের প্রক্টর অফিস হচ্ছে একটা শিক্ষার্থীর জন্য আতঙ্কের        নাম। তাঁরা সবকিছু খেয়ে ফেলে, এমনকি করোনার সময় ক্যাম্পাসের পোষা কুকুরগুলোর খাবারের টাকাও খেয়ে ফেলেছে।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল আছে। এটা অনেক শিক্ষার্থী জানেই না। কর্তৃপক্ষ শুধু একটা বাক্স ঝুলিয়ে দিয়েছে, কিন্তু কখনো তারা সেই বাক্স খুলে দেখেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস কোনোভাবে অবন্তিকার মৃত্যুর দায় এড়াতে পারে না। প্রতিবাদ সভায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী শাহ সাকিব সোবহান বলেন, প্রক্টরিয়াল বডি যখন-তখন ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষার্থীদের ধরে নিয়ে মুচলেকা সংগ্রহ করত। এখন থেকে সেই খেলা আর চলবে না। যৌন নিপীড়ন সেলে ছাত্র-শিক্ষকসহ বাইরে থেকে ম্যাজিস্ট্রেট এনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নিপীড়ক বিরোধী সেলের নামে যে টর্চার সেল যারা তৈরি করে রেখেছে, সেই প্রক্টর অফিসে আমরা সাত দিনের মধ্যে তালা ঝুলিয়ে দেব। এর আগে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নেতারা ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার মৃত্যুতে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, গত ১৫ মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অবন্তিকার আত্মহননের ঘটনাটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্নভাবে যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনার প্রতিরোধের দায় কেবল নারী সংগঠন বা ছাত্র সমাজের নয়। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও এগিয়ে আসতে হবে। তিনি এ সময় বলেন, সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে ৯% শিক্ষক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংঘটিত যৌন নিপীড়নের ঘটনার সঙ্গে জড়িত, বাকি ৯১% শিক্ষককে এসব শিক্ষকের অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য দৃঢ় আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, শিক্ষাঙ্গনে যৌন নিপীড়নের ঘটনার প্রতিরোধে ২০০৯ সালে মহামান্য হাই কোর্ট কর্তৃক প্রণীত যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সম্পর্কিত রায়কে শিগগিরই একটি পূর্ণাঙ্গ আইন হিসেবে অনুমোদন করতে হবে। এ কমিটি সম্পর্কে ছাত্র শিক্ষকদের কোনো স্বচ্ছ ধারণা নেই। এ বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম বলেন, বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ থাকলেও তার মধ্যে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। এতেকরে নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হবে না। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থীদের হার ৫০:৫০ থাকার পরও সেখানে ক্রমাগত যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটতে থাকা কোনোভাবেই কাম্য নয়। শিক্ষাঙ্গনে নিরাপদ পরিবেশ না থাকা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত করে এবং একই সঙ্গে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নেরও পরিপন্থি বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, শিক্ষাঙ্গনে একের পর এক যৌন নিপীড়নের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ লক্ষ্য করা যায় না। বরং শিক্ষকদের মধ্যে দায়িত্ব পালনের চেয়ে ক্ষমতার লড়াইয়ের তৎপরতা দেখা যায়। যা প্রকৃত শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য উদ্বেগজনক।

সমাবেশ শেষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার মর্মান্তিক আত্মহননের ঘটনায় প্ররোচনাকারীদের সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে আইন বিভাগের আয়োজনে ফাইরুজ অবন্তিকার শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য সাদেকা হালিম বলেন, ফাইরুজ অবন্তিকার মৃত্যু নিয়ে রাজনৈতিক কোনো খেলা খেলতে দেওয়া হবে না। উপাচার্য বলেন, গত নভেম্বরে অবন্তিকা প্রক্টর অফিসে যে অভিযোগ দিয়েছে, তা কেন আমলে নেওয়া হয়নি এ জন্যে সাবেক প্রক্টর মোস্তফা কামালকে তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হতে হবে। তার সঙ্গে সাবেক প্রক্টরিয়াল বডির সব সদস্যকেও ডাকা হবে। যদি অভিযোগপত্রটি আমলে নেওয়া হতো তাহলে আজকের প্রেক্ষাপট এভাবে নাও হতে পারত। অবন্তিকার মৃত্যুর জন্য আমি আমার শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। ড. সাদেকা হালিম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রকল্যাণ প্রতিনিধির সংখ্যা বাড়াব। এতে শুধু একজন পুরুষ পরিচালক থাকবে না, একজন নারীও থাকবেন। ক্যাম্পাসের যৌন নিপীড়ন বন্ধে তৈরি বক্সগুলো পরিষ্কার করে নতুন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বক্সগুলোর তালার চাবি আমার কাছে থাকবে। আমি নিজে বক্সগুলো খুলে চেক করব। যেখানে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এমনকি ছেলে শিক্ষার্থীরাও তাদের অভিযোগ জানাতে পারবেন। এদিকে ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার মৃত্যু নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজি ও সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেনকে ডাকা হয়েছে ডিবি কার্যালয়ে। সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম একদিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে : কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা আত্মহত্যার ঘটনায় গ্রেফতার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে এক?দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু বকর সিদ্দিক এ নির্দেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন।

সর্বশেষ খবর