বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

বেতনের দাবিতে অবরোধ

টঙ্গী প্রতিনিধি

গাজীপুরের টঙ্গীতে দুটি পোশাক কারখানায় বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সকাল ৯টার দিকে টঙ্গীর খাঁ-পাড়া এলাকায় সিজন্স ড্রেসেস লিমিটেড ও মিফকিফ অ্যাপারেলস লিমিটেড নামক কারখানা দুটিতে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। এতে এ মহাসড়কে গাজীপুর থেকে ঢাকা অভিমুখে যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, সিজন্স ড্রেসেস লিমিটেড কারখানায় ১ হাজার ৫০০ শ্রমিক এবং মিফকিফ অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানায় ৮০০ শ্রমিক কাজ করেন। তাদের গত ফেব্রুয়ারি ও চলতি মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করেনি কারখানা কর্তৃপক্ষ। বেতন চাইতে গেলে কারখানা কর্তৃপক্ষ দেই-দিচ্ছি বলে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। একপর্যায়ে গত মঙ্গলবার বিকালে কারখানা কর্তৃপক্ষ ১ হাজার ৭০০ শ্রমিকের গত ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করেন। কিন্তু বাকি শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেননি। এতে বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়ে ওই শ্রমিকরা গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কারখানায় কর্মবিরতি পালন করেন। এরই একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানার অন্যান্য কর্মকর্তাদের অফিস কক্ষে আটকে রাখেন। পরে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিলে রাত সাড়ে ৯টায় শ্রমিকরা কারখানা ত্যাগ করেন।

পরে গতকাল সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে গিয়ে কারখানার মূল ফটকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিস দেখতে পেয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের এশিয়া পেট্রল পাম্প এলাকায় অবস্থান নেয়। এতে মহাসড়কে গাজীপুর থেকে ঢাকামুখী লেনে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে শিল্প ও থানা পুলিশ মহাসড়কে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে বেলা ১০টার দিকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা টঙ্গী বাজার এলাকার শিল্পকলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর কার্যালয় ঘেরাও করে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকে। এ ব্যাপারে সিজন্স ড্রেসেস কারখানার শ্রমিক তাহমিনা, আকলিমা, রাশেদুল, সাথীসহ একাধিক শ্রমিক জানান, গত মঙ্গলবার কারখানা মালিক ১৭০০ শ্রমিকের বেতন পরিশোধ করলেও বাকি শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেননি। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কারখানার কর্মকর্তাদের আমরা আটক করে রেখেছিলাম। পরে পুলিশ এসে পাওনা পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে আমাদের কারখানা থেকে বের করে দেয়।

বুধবার সকালে কাজে যোগ দিতে এসে কারখানা বন্ধের নোটিস দেখতে পাই। সামনে ঈদ। এ ছাড়াও আমাদের অনেকের ঘরভাড়া ও দোকানে বাকি রয়েছে। বেতন না পেলে কীভাবে ঈদ করব এবং ঘরভাড়া দেব ভেবে পাচ্ছি না। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সিজন্স ড্রেসেস লিমিটেড কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাহাউদ্দিন চৌধুরী বাকের বলেন, আমি দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে পোশাক কারখানা পরিচালনা করে আসছি। প্রতিমাসের ১০ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ করে দিই। কিন্তু একটা সমস্যার কারণে ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন দিতে একটু দেরি হয়েছে। ইতোমধ্যে ৯০ শতাংশ শ্রমিকের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে, ১০ শতাংশ বাকি আছে। বাকিদের বেতন দু-এক দিনের মধ্যে দিয়ে দেওয়ারও ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু উত্তেজিত শ্রমিকরা কারখানা ভাঙচুর করে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক (টঙ্গী জোন) মো. ওসমান গনি বলেন, শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকেই কারখানাটিতে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। বুধবার সকালে শ্রমিকরা কারখানায় কাজে যোগ দিতে এসে কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিস দেখতে পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর