শুক্রবার, ২২ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

দল গোছাতে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ

মার্চের মধ্যে তৃণমূলের কোন্দল নিরসন, চলছে সম্মেলন আর উপজেলা নির্বাচনের পূর্বপ্রস্তুতি

শরিফুল ইসলাম সীমান্ত

দল গোছাতে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ

বড় কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলোর। পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে তাই মাঠে নামতে হচ্ছে না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে। এ সুযোগে দল গোছানোয় মনোযোগী হয়েছে দলটি।

চলতি মার্চ মাস থেকেই দলীয় বিভিন্ন ইউনিটের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া জেলা-মহানগর, বিভাগ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের ঢাকায় ডেকে এনে বৈঠক করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। একই সঙ্গে চলছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন এবং সম্মেলন-উত্তর কমিটি চূড়ান্ত করার প্রস্তুতি।

দলীয় সূত্র বলছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠনের পর এখন সংগঠন গোছাতে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, রাজপথের কর্মসূচিতে বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে সরকারের জন্য বড় কোনো চ্যালেঞ্জ না থাকায় এখনই সংগঠনকে গুছিয়ে নেওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচনসহ নানা কারণে গত এক বছর দলের নিজস্ব কর্মকাণ্ডের দিকে মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। ঈদের পর সংগঠন পুনর্গঠনের কাজ পুরোদমে শুরু হবে। সেই লক্ষ্যে রোজার মাসজুড়ে দলের পক্ষ থেকে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

জানা যায়, দলের জেলা পর্যায়ে ৭৮টি সাংগঠনিক ও উপজেলা পর্যায়ে ৪৯৫টি ইউনিটের মধ্যে ৩৭টিরও বেশি জেলা ইউনিটের মেয়াদ নেই। জেলা পর্যায়ের ১৮টি ইউনিটে কাউন্সিল হওয়ার পরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয়নি এখনো। সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোতেও এই সমস্যা প্রকট। ঈদুল ফিতরের পর টানা সম্মেলন দিয়ে সংগঠনের যেসব স্থানে মরিচা ধরেছে সেগুলো পরিষ্কারের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা।

এ ছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও সমমনাদের ভোট বর্জনের রাজনীতি মোকাবিলায় হাতে নেওয়া দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কৌশল সফল হলেও তৃণমূলে তৈরি হয়েছে অন্তঃকোন্দল। ২৭টি জেলা ও শহর পর্যায়ের ইউনিটে অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখনো অব্যাহত রয়েছে। আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচন ঘিরে এ সংঘাত বা কোন্দল নতুন মাত্রা পেতে পারে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এসব কোন্দল মেটাতে রমজান মাসজুড়ে চলবে তৎপরতা। এরই অংশ হিসেবে তৃণমূলের নেতাদের ঢাকায় ডেকে এনে বাতলে দেওয়া হচ্ছে সমাধানের পথ। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে তৃণমূল নেতাদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এরই মধ্যে মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সভায় অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে করণীয় এবং মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোতে দ্রুত সময়ে সম্মেলন অনুষ্ঠান নিয়ে দেওয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চলতি মাসের মধ্যেই তৃণমূলে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে। আমরা প্রতিদিনই কোনো না কোনো ইউনিটের সমস্যা সমাধানে আলোচনা চালাচ্ছি। রমজানে দলীয়ভাবে ইফতার পার্টির আয়োজন না করে সেই টাকায় চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপণ্য সমাজের অসহায়, দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত মানুষের মাঝে বিতরণ করছেন দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন কেন্দ্র করে তৃণমূলে জমে উঠেছে রমজানকেন্দ্রিক নানা কর্মসূচি। ইফতারসামগ্রী বিতরণসহ নানা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নিজেদের অবস্থানের জানান দিচ্ছেন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। নির্বাচনের প্রস্তুতি, ভোট প্রার্থনা ও সর্বস্তরের নেতা-কর্মীর মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নে রমজান মাসকে বেছে নিয়েছেন তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর