শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

তুচ্ছ ঘটনায় সংঘর্ষে আহত শতাধিক

হবিগঞ্জে ক্যারম খেলা নিয়ে বিরোধ, সুনামগঞ্জে মসজিদের জমি নিয়ে কথা কাটাকাটি, ভাঙ্গায় মারধরের ঘটনা, লক্ষ্মীপুরে হাঁস-মুরগির ঘর করা নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘর্ষ

প্রতিদিন ডেস্ক

তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে সংঘর্ষে ৪৮ ঘণ্টায় বিভিন্ন স্থানে শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। এসব ঘটনা ঘটে হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও লক্ষ্মীপুরে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জ শহরতলির ধুলিয়াখাল পয়েন্টের কারাগার ফটক এলাকায় ক্যারম খেলায় সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়াকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ ঘটেছে। দেড় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে পিকআপ, মোটরসাইকেলসহ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর, ইটপাটকেল নিক্ষেপে ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মাস্টারবাড়ি ও মোল্লাবাড়ির লোকজনের মধ্যে এ সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষে সাত পুলিশসহ শতাধিক লোক আহত হয়েছে। খবর পেয়ে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

স্থানীয়রা জানান, রাত ৯টায় ধুলিয়াখাল পয়েন্টের কারাগার ফটক এলাকায় কেরাম খেলায় বসে মাস্টারবাড়ির আলমগীর, সেলিম, মোল্লাবাড়ির শাহিন ও সাবেক ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিনের লোকজন। খেলা চলাচলে একটি পক্ষ সিগারেট খেয়ে ধোঁয়া ছাড়ে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে মাস্টারবাড়ির আলমগীর এবং মোল্লাবাড়ির শাহিন ও সাবেক ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিনের নেতৃত্বে দুই পক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ বাধে। দেড় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে ইটপাটকেল নিক্ষেপে পিকআপ, মোটরসাইকেলসহ কয়েকটি গাড়ি ও দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। এতে ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। খবর পেয়ে সদর মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এ সময় উভয় পক্ষের সংঘর্ষে সদর থানার এসআই আবু জাবেরসহ সাত পুলিশ এবং শতাধিক নারী-পুরুষ আহত হয়। একপর্যায়ে পুলিশ ২১ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ৪ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় রুবিনা আক্তার (৩০), আবদুল শহিদ (৪৫), জাবেদ মিয়া (৩০), আল মামুন (৩০), নাজিমুদ্দিন (৩০), সফিক মিয়া (৩৫), এসআই আবু জাবের (৪৪), রবিউল হাসান (১৯), শিমুল (২৫), মিজবাহুল হাসান (১৮), ফখরুল ইসলাম (১৮), রাজু মিয়া (৩৬), শরীফুল মিয়া (২৮), আনোয়ার (৩০), সাজ্জাদ হোসেন (২৬), উজ্জ্বল মিয়া (১৭), শামসুর রহমান (৩৫) ও মিতু মিয়াকে (২৫) উদ্ধার করে হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় মসজিদের সম্পত্তি নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৩৩ জন আহত হয়েছে। গুরুতর আহত ১৩ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার তারাবি নামাজের পর উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের সরস্বতীপুর গ্রামে এ সংঘর্ষ ঘটে। এলাকাবাসীসূত্রে জানা গেছে, গ্রামের জামে মসজিদের তহবিলের টাকা ও জমি দেখভালের আধিপত্য নিয়ে দুই পক্ষে দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছে। বৃহস্পতিবার তারাবি নামাজের পর বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দীন আজাদের লোকজনের সঙ্গে সাবেক ইউপি সদস্য কালাম ও শামছু মিয়ার লোকজনের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষ দেশি অস্ত্র নিয়ে তুমল সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় ১৩ জন টেঁটাবিদ্ধ হয়। তাদের ধর্মপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ধর্মপাশা থানার ওসি মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা জানান, মসজিদের টাকা ও জায়গা নিয়ে এ সংঘর্ষ হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভাঙ্গা (ফরিদপুর) : ভাঙ্গা উপজেলার হামিরদী ইউনিয়নের মুনসুরাবাদ বাজারে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুই পক্ষের তিন গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ঘণ্টাখানেক চলা সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছে। এ সময় মনসুরাবাদ বাজারের ৮-১০টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে ঢাল, সড়কি, ইটপাটকেলসহ দেশি অস্ত্র ব্যবহৃত হয়। খবর পেয়ে ভাঙ্গা থানা পুলিশ গিয়ে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

জানা গেছে, ছয়-সাত দিন আগে মনসুরাবাদ গ্রামের সাজ্জাদ হোসেনের (২০) সঙ্গে খাপুরা গ্রামের বায়েজিদের (২৬) কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। বৃহস্পতিবার বিকালে সাজ্জাদ খাপুরায় গেলে বায়েজিদের লোকজন তার ওপর হামলা করে। এরপর মুনসুরাবাদ গ্রামের ৮-১০ জন খাপুরা গিয়ে বায়েজিদকে মারধর করে। বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে একপক্ষে মনসুরাবাদ, অন্যপক্ষে খাপুরা ও সিঙ্গারডাক গ্রামের লোকজন দেশি অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় মুনসুরাবাদ বাজারের পাশের ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে কিছু সময়ের জন্য যানবহন বন্ধ হয়ে যায়?। সংঘর্ষ চলাকালে মুনসুরাবাদ বাজারের ৮-১০টি দোকানপাট ভাঙচুর ও মালামাল লুট হয়।

ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংঘর্ষে আহত তিনজনকে ভর্তি করা হয়েছে। এরা হলেন মুনসুরাবাদ গ্রামের নূর মোহাম্মদ শেখ (৪০) ও মওদুদ শেখ (২৫), খাপুরা গ্রামের ইমরান হোসেন (২৮)।

লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুর সদরে জমিসংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে সংঘর্ষে ছয়জন আহত হয়েছে। মালিকানা নিয়ে বিরোধ থাকা একটি জমিতে হাঁসমুরগির ঘর তৈরি করা কেন্দ্র করে দুই ভাইয়ের মধ্যে এ সংঘাত বাঁধে। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার হাজির পাড়া ইউনিয়নের পূর্ব আলাদাতপুর গ্রামের নুরুল হক সর্দার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আহতরা হলেন শাহ আলম (৫০), তার স্ত্রী রুবি আক্তার (৪৫), ছেলে সাইফুল ইসলাম রাকিব (২৪), অন্যপক্ষ তার ছোট ভাই মোরশেদ আলম (৪৬), তার স্ত্রী গয়না বেগম (৪২) ও মেয়ে। গুরুতর আহত হন শাহ আলম ও মোরশেদ আলম।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে হাজির পাড়া ইউনিয়নের পূর্ব আলাদাতপুর গ্রামের নুরুল হক সর্দার বাড়ির মৃত আনোয়ারুল হকের দুই ছেলে শাহ আলম ও মোরশেদের মধ্যে জমিসংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। মালিকানা নিয়ে বিরোধ থাকা জমিতে মোরশেদ হাঁসমুরগির জন্য একটি ঘর বানান। এ ঘর তৈরি করা কেন্দ্র করে উভয় পক্ষ তর্কবিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর