শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির নেতৃত্বে সহজ ডটকমের দুই কর্মী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সহজ ডটকমের দুই কর্মীর নেতৃত্বেই চলছিল টিকিট কালোবাজারি। আসছে ঈদে তাদের টার্গেট ছিল অন্তত তিন হাজার টিকিট। তবে স্বাভাবিক সময়েও প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক টিকিট চলে যাচ্ছিল কালোবাজারি চক্রের হাতে। দীর্ঘ নজরদারির পর জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দার (এনএসআই) সহায়তায় ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্র ‘ঢালী সিন্ডিকেটের’ হোতা ও সহজ ডটকমের সার্ভার অপারেটরসহ নয়জনকে গ্রেফতার করেছে এলিট ফোর্স র‌্যাব-৩। গ্রেফতাররা হলেন- সহজ ডটকমের পিয়ন মো. মিজান ঢালী (৪৮), মো. সোহেল ঢালী (৩০), মো. সুমন (৩৯), মো. জাহাঙ্গীর আলম (৪৯), মো. শাহজালাল হোসেন (৪২), মো. রাসেল (২৪), মো. জয়নাল আবেদীন (৪৬), মো. সবুর হাওলাদার (৪০) ও নিউটন বিশ্বাস (৪০)। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর কমলাপুর ও সবুজবাগ এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় অবৈধভাবে সংগ্রহ ও মজুত করা বিপুল সংখ্যক ট্রেনের টিকিট জব্দ করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন।

তিনি জানান, ২০০৩ সালে কমলাপুর রেলস্টেশন শাখায় সহজ ডটকমে পিয়ন হিসেবে যোগ দেয় মিজান। পরে সিএনএস ডট বিডির সঙ্গে রেলের চুক্তি হলেও অভিজ্ঞ কর্মী হিসেবে তাকে চাকরিতে বহাল রাখা হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালে রেলওয়ে টিকিটের চুক্তি সহজকে দেওয়া হলে সেখানেও মিজানের চাকরি বহাল থাকে। অন্যদিকে নিউটন ২০১২ সালে স্টেশন সাপোর্ট কর্মী হিসেবে সিএনএস বিডিতে যোগ দেয়। ২০১৬ সালে সার্ভার অপারেটরের দায়িত্ব পায়। ২০২০ সালে সহজের সঙ্গে চুক্তি হলে তার চাকরি বহাল থাকে এবং পুনরায় সার্ভার অপারেটরের দায়িত্ব পায় সে। র‌্যাব জানায়, সার্ভার অপারেটর হওয়ায় বিভিন্ন ট্রেনের শিডিউল ও টিকিট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতেন নিউটন। তিনি সিন্ডিকেটের মূলহোতা মিজানকে তথ্য দিতেন। মিজান ও নিউটন দীর্ঘদিন ধরে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারিতে জড়িত। দেশব্যাপী প্রায় সব ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করত এই ঢালী সিন্ডিকেট। মিজান দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিট বুকিংয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। ফলে দেশব্যাপী বিভিন্ন স্টেশনের সহজ ডটকমের অফিসে এবং বড় বড় রেলওয়ে স্টেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে তার পরিচিতি তৈরি হয়। এই পরিচয়ের সূত্র ধরেই সে বিভিন্ন স্টেশনে থাকা সহজ ডটকমের সদস্য, টিকিট কাউন্টার ও অন্যান্য কালোবাজির চক্রের সদস্যদের সমন্বয়ে বিভিন্ন কারসাজির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টিকিট বিক্রি করত।

খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, গ্রেফতার মিজান ও সোহেল প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে দেশব্যাপী বিভিন্ন স্টেশনের সহজ ডটকমের কর্মচারী ও টিকিট কাউন্টারম্যানদের মাধ্যমে প্রায় ২-৩ হাজার রেলওয়ের টিকিট কালোবাজারির মাধ্যমে বিক্রি করত। টিকিট বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ৫০ ভাগ সহজ ডটকম ও রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট কাউন্টারম্যানরা পেত। বাকি ৫০ ভাগ মিজান, সোহেলসহ বাকি বিক্রয়কারী সহযোগীদের মধ্যে ভাগাভাগি হতো। এসব অর্থ কখনো তারা নগদে হাতে হাতে বুঝিয়ে দিত। আবার কখনো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করত। সিন্ডিকেটের প্রত্যেক সদস্য অবৈধভাবে ট্রেনের টিকিট বিক্রি করে প্রতি মাসে ২০/২৫ হাজার টাকা উপার্জন করত।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা রেলওয়ের অনেকের বিষয়েই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তথ্য দিয়েছি। তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই বিভাগীয় ও আইনানুগ ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। এ ছাড়া আরও অনেকের বিষয়ে আমাদের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোয়েন্দারা কাজ করছেন। ঊর্ধ্বতন কারও টিকিট কালোবাজারিতে সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, গোয়েন্দারা যাচাই করে দেখছেন।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, দেশব্যাপী সহজের প্রায় ১০০ অফিস রয়েছে। সবখানে তাদের লোক আছে। টিকিটের যে তথ্য, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা সিন্ডিকেটের সদস্যদের তথ্য দিচ্ছেন, পরে অন্য সদস্যরা টিকিটগুলো কেটে ফেলছেন। স্বাভাবিক দিনেই তারা প্রতিদিন প্রায় ৫০০ টিকিট কাটছেন। তাই ঈদে তিন হাজার টিকিটের টার্গেট তাদের জন্য বেশি নয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর