শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

ডেমরার গোডাউনের আগুন সাড়ে ৮ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডেমরার গোডাউনের আগুন সাড়ে ৮ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে

রাজধানীর ডেমরায় ভাঙ্গা প্রেস এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে পোশাকের গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীর ডেমরায় খেলার সামগ্রীর একটি গোডাউনে লাগা আগুন সাড়ে ৮ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় ভাঙ্গা প্রেস এলাকায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও নৌবাহিনীর সদস্যরা আগুন নির্বাপণে কাজ করেন। গোডাউনে লাগা এ আগুন গতকাল সকাল ৮টার দিকে নিয়ন্ত্রণে আসে এবং বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপণ করা হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট ও নৌবাহিনীর দুটি ইউনিট কাজ করে। এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিস সূত্র বলছে, চার তলা ভবনের তৃতীয় তলায় খেলার সামগ্রীর গোডাউনে আগুন লাগে। ভবনটি খেলার সামগ্রীতে পূর্ণ ছিল। মূলত আমদানি করে খেলাধুলার সামগ্রী গুদামজাত করা হতো এ ভবনে। গুলিস্তানের হকি স্টেডিয়াম মার্কেটের দোকানগুলোতে সরবরাহ করা হতো সেসব পণ্য। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো জানা যায়নি। গতকাল গোডাউনের সামনে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা আহাজারি করছিলেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ৫০ কোটি টাকা।

জানা গেছে, টানা ১২ ঘণ্টা দাউ দাউ করে জ্বলেছে আগুন। সকাল ৮টায় আগুন নিয়ন্ত্রণের পর ভস্মীভূত ধ্বংসস্তূপ থেকে ভালো জিনিস খুঁজে ফিরছিলেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। টানা ১২ ঘণ্টা আগুনে অবশিষ্ট নেই তেমন কিছু, প্রায় সবই পুড়ে গেছে। আগুনের তীব্রতা কমে আসার পর ফায়ার সার্ভিস ও ব্যবসায়ীরা একত্রে ভিতর থেকে পুড়ে যাওয়া মালামাল বের করতে থাকেন। অধিকাংশ পণ্য পুড়ে গেলেও অল্প কিছু পণ্য রক্ষা পায়। সেসব পণ্য বের করে আনছিলেন ব্যবসায়ীরা।

মামুন মোস্তফা নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, যেসব পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি সেগুলো আলাদা করে নিয়ে যাচ্ছি। যদিও তার পরিমাণ খুব কম। আমার প্রায় কয়েক কোটি টাকার পণ্য ছিল এ গোডাউনে, সব শেষ। একইভাবে মালামাল সরাচ্ছিলেন আরেক কর্মী জাফর হোসেন। তিনি বলেন, স্টেডিয়ামে দোকান আছে। সব মালামাল রাখা হতো এখানকার গোডাউনে। কিন্তু এভাবে সব পুড়ে যাওয়ার পর কী বলার আছে। এ ক্ষতি সামলানো সম্ভব নয়। যেসব পণ্য পুড়েনি সেগুলো সরিয়ে নিচ্ছি।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের উপপরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ভবনটির পুরো চার তলায় একেবারে ছাদ পর্যন্ত মালামাল মজুত করা। স্পোর্টসের এমন কোনো জিনিস নেই যা এখানে মজুত করা হয়নি। এত পণ্য রাখার কারণে পানি দেওয়া হলে তা ভিতরে যাচ্ছিল না। সব মালামাল সরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে পানি দিতে হয়েছে। এজন্য আগুন নেভাতে সময় লেগেছে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারাই এই ভবনে কী কী ব্যত্যয় হয়েছে তা বের করবে।

তিনি আরও বলেন, ভবনের সবকিছুতেই আমরা সমস্যা পেয়েছি। এখানে পণ্য মজুত করা হয়েছে কিন্তু কোনো গ্যাংওয়ে নেই। এখানে ৩ ফুট গ্যাংওয়ে থাকার কথা। সিঁড়ি অত্যন্ত সরু। আগুন নেভানোর ব্যবস্থাও নেই। এখানে ন্যূনতম কোনো সিস্টেম মেইনটেইন করা হয়নি। ভিতরের কাঠামোটা অত্যন্ত জটিল। এ ছাড়া আশপাশে কোনো পানির সোর্স নেই। গাড়ি দিয়ে পানি আনতে হয়েছে। সর্বশেষ প্রায় আধা কিলোমিটার দূর থেকে পাইপ দিয়ে পানি আনা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লে. কর্নেল মো. রেজাউল করিম বলেন, চার তলা ভবনের পুরোটাতেই খেলাধুলার সামগ্রী ছিল। ভবনটিতে স্টোরেজ (গুদাম) নীতিমালা মানা হয়নি। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়েছে। আমরা ভবনটির গ্রিল ও দেয়াল কেটে জানালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে মালামাল সরিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি। পুরো ভবনে দাহ্য পদার্থ আছে, খেলাধুলার সামগ্রী বেশি। প্লাস্টিকের পরিমাণও অনেক। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে ভবনটি ভেঙে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। আমরা ভবনটির ভিতরে প্রবেশ করে দেখেছি ভবনের যে অবকাঠামোগত শক্তি সেটা আর নেই। একেবারে কমে গেছে। ভবনটির এক জায়গায় ছাদ ফেটে গেছে। যে কারণে যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কাঠামোগত শক্তি একেবারেই হারিয়েছে ভবনটি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর