শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

লালমনিরহাটে তুলার বাম্পার ফলন, দাম নিয়ে হতাশ কৃষক

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

বস্ত্র শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল তুলা হলেও চাহিদার তুলনায় চাষাবাদ কম। তাই বস্ত্র তৈরির এ কাঁচামালের জন্য নির্ভরতা আমদানির ওপর। সেই আমদানি নির্ভরতা কমাতে এ বছর লালমনিরহাটে বেড়েছে তুলা চাষ। ফলনও হয়েছে বাম্পার। তবে দাম নিয়ে হতাশ তুলা চাষিরা।

দেশে উৎপাদিত তুলার মানও আন্তর্জাতিক মানের। সারসহ তুলা চাষে ব্যবহৃত জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় খরচ কিছুটা বেড়েছে। গেল বছরের তুলনায় মণপ্রতি তুলার দাম ১০০ টাকা বাড়লেও তেমন খুশি হতে পারেননি তুলা চাষিরা। গত বছর প্রতি মণ তুলা (আঁশ ও বীজ) বিক্রি হয়েছিল ৩ হাজার ৮০০ টাকা দরে। এ বছর প্রতি মণ তুলার দাম বেড়েছে ১০০ টাকা। কিন্তু খরচ বেশি হওয়ায় উৎপাদিত তুলা বিক্রি করে আশানুরূপ লাভ করতে পারছেন না চাষিরা। এ বছর প্রতি মণ উৎপাদন করতে কৃষকের খরচ হয়েছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা । তুলা উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, এ বছর লালমনিরহাটে ৫৩০ কৃষক ১৫৪ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ করেছেন। গেল বছর ৫০০ কৃষক তুলা চাষ করেছিলেন ১৪২ হেক্টর জমিতে। গত বছর সারা দেশে ৪৫ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে তুলা উৎপাদন হয়েছিল ২১ হাজার বেল। এ বছর তুলা চাষ হয়েছে ৪৬ হাজার হেক্টর জমিতে আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৮ হাজার বেল। লালমনিরহাটে চর কটন ও আপলাইন কটন জাতের তুলা চাষ হচ্ছে। প্রতি বিঘা জমি থেকে কৃষকরা আঁশ ও বীজসহ ১৫-১৮ মণ তুলা উৎপাদন করছেন। এ বছর আঁশ ও বীজসহ প্রতি মণের দাম নির্ধারণ হয়েছে ৩ হাজার ৯০০ টাকা। চাষিদের উৎপাদিত প্রতি মণ তুলা থেকে আঁশ পাওয়া যায় ১২ কেজি আর বীজ ২৮ কেজি। গত বছর প্রতি মণ তুলা (আঁশ ও বীজ) বিক্রি হয়েছিল ৩ হাজার ৮০০ টাকা। এ বছর প্রতি মণ তুলার দাম বেড়েছে ১০০ টাকা। তুলার ভালো ফলনের কারণে জেলায় বাড়ছে তুলা চাষির সংখ্যা। তবে বীজ, সার, কীটনাশক ও ডিজেলের দাম বাড়ায় তুলা চাষে খরচও বেড়েছে। প্রতি মণ তুলা ৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি করতে পারলে প্রত্যাশিত লাভ হবে দাবি করছেন কৃষকরা। চাষিরা জানান, এ বছর প্রতি বিঘা জমিতে তুলা উৎপাদিত হয়েছে ১৪-১৬ মণ। এতে খরচ হয়েছে ১৬-২০ হাজার টাকা। গত বছর খরচ হয়েছিল ১১-১৪ হাজার টাকা। তুলা চাষের জন্য উঁচু জমির প্রয়োজন। সময় লাগে আট মাস (মধ্য জুলাই থেকে মধ্য মার্চ)। স্বল্পমেয়াদি জাতের তুলা চাষের সুযোগ পেলে তারা জমিতে অন্য ফসল উৎপাদনের সুযোগ পেতেন। এতে অনেকেই তুলা চাষে আগ্রহী হতো। লালমনিরহাট সদর উপজেলার চওড়াটারী গ্রামের তুলা চাষি মনজুর আহমেদ জানান, গত বছর থেকে হাইব্রিড জাতের তুলা চাষ করছি। দুই বছর আগে স্থানীয় জাতের তুলা চাষ করে কম ফলন পেয়েছি। এবার তুলার ফলন পাচ্ছি আশানুরূপ। কিন্তু বাজারদর নিয়ে হতাশ। প্রতি মণ তুলা ৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি করতে পারলে প্রত্যাশিত লাভ পেতাম।

একই উপজেলার জিরামপুর গ্রামের চাষি জুয়েল হোসেন বলেন, তুলা চাষ লাভজনক। খাদ্যশস্য উৎপাদনের প্রয়োজনীয়তা অধিক, তাই কম পরিমাণ জমিতে তুলা চাষ হচ্ছে। স্বল্পমেয়াদি জাতের তুলা চাষের সুযোগ পেলে চাষিরা আরও আগ্রহী হতেন। ৩-৪ মাসের মধ্যে তুলা উৎপাদন করতে পারলে জমিতে দুই ধরনের ফসল চাষ করতে পারতাম। লালমনিরহাট তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কটন ইউনিট অফিসার রেজাউল করিম জানান, দেশে প্রতি বছর তুলার চাহিদা রয়েছে প্রায় ৮৫ লাখ বেল। প্রতি বছর ৮৩ লাখ বেল তুলা আমদানি করতে হয়। এতে খরচ হয় প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। বর্তমান ৯০ শতাংশ কৃষকই হাইব্রিড জাতের তুলা চাষ করছেন। ১০ শতাংশ কৃষক স্থানীয় জাতের তুলা চাষ করছেন। আমাদের উৎপাদিত তুলা আন্তর্জাতিক মানের। আমরা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের তুলা চাষের পদ্ধতি শেখাচ্ছি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর