রবিবার, ২৪ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

তৎপর সোমালি পুলিশ

রক্তক্ষয়ী অভিযান নয়, শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রত্যাশা, ভারী অস্ত্র বসিয়েছে জলদস্যুরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

তৎপর সোমালি পুলিশ

বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাই করা সোমালিয়ান জলদস্যুদের স্থলভাগের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অভিযান শুরু করেছে স্থানীয় পান্টল্যান্ড পুলিশ। জাহাজের ওপাশে সমুদ্রে অবস্থান নিয়েছে আন্তর্জাতিক বাহিনী। কড়া নজর রাখছে ভারতীয় নৌবাহিনীও। এমন পরিস্থিতিতে জাহাজ উদ্ধারে কোনো ধরনের সামরিক অভিযান না চালাতে নাবিকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে জলদস্যুরা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) যুদ্ধজাহাজকে সরিয়ে নিতেও নাবিকদের হুমকি দিচ্ছে তারা। জাহাজে বসিয়েছে ভারী অস্ত্র। তবে কোনো ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চাইছে না জাহাজটির মালিকপক্ষ কবির গ্রুপ। শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে নিরাপদে ২৩ নাবিক ও জাহাজটি উদ্ধার করতে তারা জলদস্যুদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তথ্যানুযায়ী, জাহাজটিতে রয়েছে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা।  গোলাগুলির ঘটনা ঘটলে দাহ্য কয়লা থেকে বিস্ফোরণে জাহাজটি উড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, রক্তক্ষয়ী কোনো অভিযানকে আমরা সমর্থন দেব না। বাংলাদেশ সরকারেরও সুস্পষ্ট বার্তা আছে- সহিংস কোনো অভিযান পরিচালনা করা যাবে না। নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধারে আমরা জোর দিচ্ছি। আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জিম্মিদশার অবসান চাই। যেহেতু নাবিকদের জীবনের শঙ্কা আছে, তাই আমরা রক্তক্ষয়ী কোনো সংঘর্ষ চাই না। নিরাপদে নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে আমরা সবকিছু করব।  জানা গেছে, বর্তমানে জাহাজটি সোমালিয়ার জিফলে উপকূলে নোঙর করে রেখেছে জলদস্যুরা। ২১ মার্চ রাত থেকে ইইউ নেভাল ফোর্সের ‘অপারেশন আটলান্টার’ একটি যুদ্ধজাহাজ এমভি আবদুল্লাহর কাছাকাছি অবস্থান নিয়েছে। তাদের প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওতে  হেলিকপ্টার ব্যবহার করে এমভি আবদুল্লাহর ওপর নজরদারি করতে দেখা যায়। এরপর থেকেই দস্যুরা এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের ওপর চাপ প্রয়োগ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন নাবিকদের স্বজনরা। এমনকি কয়েকবার ফাঁকা গুলি ছুড়ে নিজেদের শক্তিও জানান দিয়েছে দস্যুরা। মাঝে-মধ্যে ভিএইচএফ ব্যবহার করে নৌবাহিনীকে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানাতে বাধ্য করা হচ্ছে নাবিকদের। জাহাজটির মালিকপক্ষকে অভিযানের অনুমতি না দিতে নাবিকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে। জাহাজের চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের ভাই আবদুন নূর খান আসিফ বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আমার ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি জানান, জাহাজে সামরিক অভিযান না চালাতে নাবিকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। তাদের নানা রকম হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।’ এদিকে জলদস্যুরা এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে ভারী অস্ত্র বসিয়েছে বলে জানিয়েছেন জিম্মি নাবিক ইঞ্জিন অয়েলার মোহাম্মদ শামসুদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা।

অভিযান শুরু সোমালি পুলিশের : স্থানীয় পান্টল্যান্ড পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবদুল্লাহ জাহাজের ভিতর দস্যুদের জিনিসপত্র পৌঁছে দেওয়ার কাজে নিয়োজিত একটি গাড়িকে আটক করা হয়েছে। পান্টল্যান্ড পুলিশ কমান্ডার মোহাম্মদ আলী আহমেদ মারদুউফ বলেছেন, ‘স্থলভাগের সঙ্গে জলদস্যুদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে আমরা পূর্বাঞ্চলে একটি অভিযান শুরু করেছি। আমাদের পরিকল্পনা হলো, জলদস্যুরা যাতে নিজেদের সংগঠিত করতে না পারে এবং এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে যারা আছে, তারা যাতে তীর থেকে আর কোনো সাহায্য না পায়। জাহাজে থাকা জলদস্যুদের হাতে এখন দুটি পথ আছে। হয় তাদের পান্টল্যান্ড কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে অথবা বিদেশি বাহিনী যেভাবে এমভি রুয়েন থেকে জলদস্যুদের ধরে নিয়ে গেছে, তাদেরও সেই পরিণতি ভোগ করতে হবে।’ এদিকে গত ডিসেম্বরে ছিনতাই হওয়া মাল্টার পতাকাধারী জাহাজ এমভি রুয়েন থেকে ভারতীয় নৌ-কমান্ডোদের হাতে গ্রেফতার ৩৫ সোমালি জলদস্যুকে গতকাল মুম্বাইয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। ভারতের আইন অনুযায়ী, তারা দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। গতকাল ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল আর হরি কুমার গণমাধ্যমকে বলেন, ভারত মহাসাগরে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ভারতীয় নৌবাহিনী ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে। বাংলাদেশি জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ওপর কড়া নজর রাখছে ভারতীয় নৌবাহিনী।  প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ মোজাম্বিকের মাপুতো থেকে কয়লা নিয়ে আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে যাওয়ার পথে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। জাহাজে ২৩ নাবিক রয়েছেন, যাদের সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। ২০ মার্চ দুপুরে জলদস্যুদের প্রথম ফোন পায় মালিকপক্ষ। এরপর থেকে যোগাযোগ বন্ধ আছে। তবে নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে মালিকপক্ষ ও পরিবারের।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর