মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

সব হারিয়ে কান্না

নিজস্ব প্রতিবেদক

সব হারিয়ে কান্না

বাসাবাড়িতে কাজ করেন আলেয়া। কাজ শেষে তিনি ঘরে ফিরছিলেন। পৌঁছার আগেই আগুন আগুন বলে মানুষের চিৎকার শুনতে পান। মুহূর্তে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। চোখের সামনেই পুড়ে ছাই আলেয়ার থাকার ঘরটি।

অগ্নিকাণ্ডের পর রাজধানীর বনানীর কড়াইল গোডাউন বস্তিতে গতকাল ঢোকার মুখে কাদামাখা রাস্তা হেঁটে যেতে দেখা যায় আবুল কালামকে। তিনি এ বস্তিরই বাসিন্দা। চোখ মুছতে মুছতে আশপাশে খুঁজছিলেন অক্ষত থাকা কোনো প্রতিবেশীর ঘর- যদি সেখানে তার শিশু কন্যার ঘুমানোর একটু ব্যবস্থা করা যায়। আলেয়ার মতো গতকাল খোলা আকাশের নিচেই থাকতে হয়েছে আশ্রয়হারা শত শত মানুষকে। রবিবার বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে কড়াইলের ওই বস্তিতে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। ১২টি ইউনিটের চেষ্টায় বিকাল ৪টা ৩৩ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। বস্তিবাসীরা বলেন, আমরা এখানে যারাই আছি, সবাই কোথাও না কোথাও কাজ করি। কেউ বাসাবাড়িতে, কেউ পোশাক কারখানায়, কেউ মেসে। বিকালের এ সময়টাতে কেউই ঘরে ছিলেন না। যারাও ছিলেন জীবন বাঁচাতে এক কাপড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছেন। আগেও এ বস্তিতে আগুন লেগেছিল, সে সময়ের স্মৃতিচারণ করে রাবেয়া বেগম নামে আরেক নারী বলেন, আগেরবারের আগুনে কিছু মালামাল বের করার সুযোগ পেয়েছিল মানুষ। এবারের আগুনে তাও পায়নি। আল্লাহর রহমতে মানুষ বেরিয়ে আসতে পারছে। একেবারে হঠাৎ করেই আগুন লেগেছে। সঙ্গে সঙ্গে তা ছড়িয়ে গেছে পুরো বস্তিতে। আল্লাহ রহম করেছে আগুন লাগার পরপরই বৃষ্টি এসেছে। সেই সময় বৃষ্টি না এলে আরও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতে পারত। আবুল কালাম বলেন, আগুনের লেলিহান শিখা আর পুড়তে থাকা ঘর দেখে তার শিশুকন্যাটি আর রাতে ঘুমাতে পারেনি।

নির্ঘুম রাত কাটানো মেয়েটি এখন ক্লান্ত। খুঁজছে বিছানা, যেখানে শুয়ে একটু ঘুমাতে চায়। ওরে কেমনে বুঝাই আগুনে আমার সব তো পুড়ে ছাই। আগুনে নিঃস্ব হওয়া আরেক বাসিন্দা রেহানা আক্তার বলেন, ‘গোসল করতে গেছি। আসার সময় শুনি আগুন। ভেজা কাপড়ে ঘরে ফিইরা দেহি স্বামী মফিজ উদ্দিন। তারে ঘুম থেকে তুইলা রাস্তার ধারে যাই।’ সংশ্লিষ্ট এলাকার ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নাছির বলেন, গোডাউন বস্তির ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের দুঃখ কষ্টের কথা বিবেচনা করে আমরা রাত যাপনের ব্যবস্থা করেছি টিএনটি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে।

খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করছি। নিজের পোড়া ঘরের ছাইয়ের পাশে বসেছিলেন জুলেখা। বলেন, যখন আগুন লাগে তখন আমি কাজে ছিলাম। ছেলের বউয়ের ফোনকল পেয়ে বস্তিতে ছুটে আসছি। কিন্তু কিছুই বের করতে পারিনি। বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাহান হক বলেন, গোডাউন বস্তিতে খেটে খাওয়া মানুষজন ছোট ছোট ঘর ভাড়া নিয়ে পরিবার নিয়ে থাকতেন। আগুনে তাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর