মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

বৈদ্যুতিক গাড়ির ভবিষ্যৎ অন্ধকার!

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৈদ্যুতিক গাড়ির ভবিষ্যৎ অন্ধকার!

বিশ্বজুড়ে বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) ব্যবহারে মানুষকে উৎসাহিত করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশে ইভি আসতে শুরু করেছে। তবে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, ব্যাটারিচালিত এই যানের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। কারণ যানটি ব্যবহারে সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি। বিশেষজ্ঞরা জানান, অপর্যাপ্ত চার্জিং, ব্যাটারি জটিলতা, ব্যাটারি সংক্রান্ত নিরাপত্তার ঝুঁকি, ধীরগতির চার্জিং, অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জ, ব্যাটারির প্রক্রিয়াকরণ জটিলতা, বিদ্যুতের ওপর চাপ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং ক্রয়ক্ষমতা ও দুষ্প্রাপ্যতার জন্য বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার নিয়ে খুব একটা সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানি শুরু হলেও এখনো দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য তেমন চার্জিং স্টেশন চালু হয়নি। রাজধানীসহ সারা দেশে এই চার্জিং স্টেশনের সংখ্যা হাতেগোনা। আবার এই গাড়ি শুধু বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই চার্জ করতে হবে। ফলে ভ্রমণে বা দূরপাল্লার কোথাও বের হওয়ার আগে থেকেই সড়কের দূরত্ব নিয়ে ব্যবহারকারীকে হিসাব করতে হবে। আর সড়কে পর্যাপ্ত চার্জিং স্টেশন না থাকায় এই যান নিয়ে দূরপাল্লার ভ্রমণ অসম্ভব। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে সীমিত পরিসরে ভ্রমণ করা যাবে। বলা যায়, শুধু সিটিতে, অর্থাৎ ব্যবহারকারী যে শহরে বাস করছেন সেখানেই ব্যবহার করতে হবে। কেননা, দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হবে। আবার ইভি ব্যবহারে প্রয়োজন হয় ভারী ও বড় আকারের ব্যাটারির। ভারী ব্যাটারি যেমন গাড়ির ওজন বাড়ায়, তেমনই এই ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেলে নতুন সংযোজন করতে খরচও অনেক বেশি, যা আর্থিক সীমাবদ্ধতার ওপর বাড়তি চাপের কারণ হতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইভি ব্যাটারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে ব্যবহারকারীরা ভ্রমণ পরিধি কমিয়ে আনতে বাধ্য হন। আবার ব্যাটারি ক্ষয় হতে থাকলে অভ্যন্তরীণ শর্টসার্কিট ও ব্যাটারি গরম হওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়। আর নতুন ব্যাটারি সংযোজন করতে হলে খরচ হবে অনেক বেশি। বৈদ্যুতিক গাড়ি পুরোপুরি চার্জ করতে দীর্ঘ সময় লাগে। কেননা এর চার্জ হয় খুব ধীরে। যেহেতু দেশে চার্জিং স্টেশনের একেবারেই হাতেগোনা এজন্য ব্যাটারি চার্জ দিতেও অন্য ব্যবহারকারীদের অপেক্ষা করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, বিদ্যুতের সমস্যা হলে গাড়ির চার্জও ঠিকমতো করা যাবে না। এমনকি চার্জিং স্টেশনে গিয়ে দ্রুত রিচার্জ করা হলেও প্রচলিত জ্বালানি চালিত যানবাহনগুলোকে রিফুয়েল করার চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি সময় নেয়, যা সামান্য দূরের ভ্রমণকেও কঠিন করে তুলবে। আবার বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য চার্জিং অবকাঠামো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কেননা, ব্যাপক পরিসরে নির্ভরযোগ্য চার্জিং অবকাঠামো তৈরি করতে সরকার এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর বড় বিনিয়োগ ও সমন্বয় প্রয়োজন।

এগুলো ছাড়াও বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রসারে পরিবেশ ও স্থায়িত্ব সংক্রান্ত উদ্বেগও রয়েছে। বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য আমাদের চীনের মতো সব ব্যাটারি বাইরে থেকে আমদানি করতে হবে, যা খুব ব্যয়বহুল হয়ে উঠতে পারে। এমনকি খরচ বাঁচাতে দেশে ব্যাটারি তৈরির জন্য আমরা যদি লিথিয়াম আমদানিও করি, শুধু ব্যাটারি উৎপাদনের জন্যই অনেক বেশি পুঁজির প্রয়োজন হবে। জটিল রসায়নের কারণে ব্যবহৃত ইভি ব্যাটারির সঠিক পুনর্ব্যবহার এবং এ সংক্রান্ত বিপজ্জনক পদার্থের ফুটো হওয়ার আশঙ্কা থাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চ্যালেঞ্জিং হবে। কেননা, বাংলাদেশে আগুন এবং সমতল ভূমি ও ভূগর্ভস্থ পানিতে রাসায়নিক বিষক্রিয়া প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অবকাঠামো নেই। যদিও দাবি করা হয় যে, ইভি পরিবেশবান্ধব, তবে এই সুবিধা নিতে হলেও ব্যাটারি চার্জ করতে বিদ্যুতের উৎসের ওপরই নির্ভর করতে হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় জীবাশ্ম জ্বালানি থেকেই। সুতরাং বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বাড়লে চার্জিং চাহিদাও বাড়বে, আর সে ক্ষেত্রে বাড়বে বিদ্যুতের চাহিদাও। তখন বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হবে। ফলে কার্বন নির্গমন হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা সীমিত হতে পারে। এতে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইভি এবং এর ব্যাটারির উচ্চমূল্য বাংলাদেশে এর গ্রহণযোগ্যতা সীমিত করবে। কেননা, দেশের জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশের আর্থিক সংস্থান সীমিত। এর ফলে অনেকেই সস্তা ও নিম্নমানের ব্যাটারি ব্যবহার বা অনুপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের দিকে ঝুঁকতে পারে, যা নিরাপত্তা ঝুঁঁকি বাড়িয়ে তুলবে। তারা আরও বলেন, ঢাকার মতো শহরে দ্রুত নগরায়ণ এবং উচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্বের শহরে ইভির ব্যাটারিতে আগুন বা বিস্ফোরণ ঘটলে তা বিপর্যয়কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এ ধরনের ঘটনা অনেকের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে এবং উল্লেখযোগ্য আর্থিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

সর্বশেষ খবর