শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

এক মাসে ৪১০ আগুন

আলী আজম

ঢাকায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩১২টি এবং ফেব্রুয়ারিতে ৪১০টি আগুনের ঘটনা ঘটেছে। সারা দেশে জানুয়ারিতে ২ হাজার ৩৭২টি এবং ফেব্রুয়ারিতে ৩০০০টি আগুনের ঘটনা ঘটে। ২০২৩ সালে ২৭ হাজার ৬২৪টি, ২০২২ সালে ২৪ হাজার ১০২টি এবং ২০২১ সালে ২১ হাজার ৬০১টি আগুনের ঘটনা ঘটে। গত ৯ বছরে দেশে ১ লাখ ৯০ হাজার ১৬৭টি আগুনের ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৫১ জন নিহত ও ৩ হাজার ৬০৬ জন আহত হয়েছেন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের ৫ বছরের তথ্য পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি আগুনের ঘটনা ঘটে। মূলত সচেতনতার অভাবেই এসব আগুনের ঘটনা ঘটছে।

যেমন ২৯ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে ১০টায় রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে। এতে ৪৬ জন নিহত এবং অর্ধশতাধিক আহত হন। আগুনের ঘটনায় অধিকাংশ মানুষ শ্বাসরোধে মারা যান। ভবনটিতে একটি মাত্র সিঁড়ি ছিল। দুটি লিফট ছিল। ফলে আগুন লাগার পর কেউ নামতে পারেনি। গত ২২ মার্চ রাত সাড়ে ৩টার দিকে পুরান ঢাকার চকবাজার থানার ইসলামবাগে অবস্থিত কমিশনার বিল্ডিংয়ের কেমিক্যাল গুদামে আগুন লাগে। ভবনে বিভিন্ন প্লাস্টিক কণা ও কেমিক্যাল দ্রব্যাদি স্তূপ করা ছিল। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও দেড় কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। ঘটনাস্থলের আশপাশে অসংখ্য লাগোয়া ভবন ও বাড়ি ছিল। যদি এই আগুন ছড়িয়ে পড়ত তাহলে ভয়াবহ একটি অবস্থা তৈরি হতো। এখানে দুটি বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার ছিল। একটিও যদি বিস্ফোরণ হতো তবে ভয়ানক অবস্থা তৈরি হতো। ভবনটিতে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। গত ২১ মার্চ রাত সাড়ে ১১টায় ঢাকার ডেমরায় ভাঙ্গা প্রেস এলাকায় খেলার সামগ্রীর একটি গোডাউনে আগুন লাগে। ভবনটি খেলার সামগ্রীতে পূর্ণ ছিল। মূলত আমদানি করে খেলাধুলার সামগ্রী গুদামজাত করা হতো এ ভবনে। গুলিস্তানের হকি স্টেডিয়াম মার্কেটের দোকানগুলোকে সরবরাহ করা হতো সেসব পণ্য। ভবনে পণ্য মজুত করা হয়েছে কিন্তু কোনো গ্যাংওয়ে ছিল না। সিঁড়ি অত্যন্ত সরু। আগুন নেভানোর ব্যবস্থা ছিল না। ন্যূনতম কোনো সিস্টেম মেইনটেইন করা হয়নি। আগুনে ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। গতকালও ভোর ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল এলাকায় অবস্থিত গাউছিয়া কাঁচাবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। একইদিন বেলা একটায় মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থানার হোসেন্দী ইউনিয়নে সিকেরগাঁও এলাকায় সুপার বোর্ড নামের টি কে গ্রুপের মালিকানাধীন একটি বোর্ড তৈরির কারখানায় আগুন লাগে। এ সময় শ্রমিকরা কারখানায় কাজ করছিলেন। শ্রমিক ও স্থানীয়রা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। আগুনে সাতজন আহত হয়েছেন। একই দিন বিকাল ৪টা ৫ মিনিটে ঢাকার বনানীতে কড়াইল বস্তিতে আগুন লাগে। আগুনে ২০০ ঘর পুড়ে ছাই হয়েছে। এভাবে ঢাকায় প্রতিদিনই গড়ে ১৪টি আগুনের ঘটনা ঘটছে। কখনো প্রাণহানি বা আহতের ঘটনা ঘটছে। কখনো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক সংযোগ ও বৈদ্যুতিক যন্ত্র, সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরা, খোলা বাতির ব্যবহার, চুলার আগুন, মিস ফায়ার, চিমনি, রাসায়নিক বিক্রিয়া, ছোটদের আগুন নিয়ে খেলা, যন্ত্রাংশের সংঘর্ষ, বাজি পোড়ানোসহ বেশ কিছু কারণে আগুন লাগছে। বেশির ভাগ আগুনের ঘটনাই বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে। গেল বছর সর্বমোট আগুনের ৩৫ শতাংশ বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের কারণে। সচেতনতা ও অসাবধানতাই আগুনের অন্যতম কারণ। এসব আগুন নির্বাপণে বেগ পেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরকে। কারণ হিসেবে সংস্থাটি বলছে, জলাধার বা ফায়ার হাইড্রেন্ট না থাকা, সরু রাস্তা ও উৎসুক জনতা। ঢাকায় ১৫ শতাংশ জলাধার থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। আগুন নির্বাপণে পানির উৎস বা জলাধারের বিকল্প নেই। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক মো. ছালেহ উদ্দিন বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগছে, সেই প্রতিষ্ঠান আগুন লাগার জন্য দায়ী। তারা সচেতন নয়, তাদের অসচেতনতার কারণে আগুন লাগছে। মানসম্মত ইলেকট্রিক সামগ্রী না লাগানো এবং সেগুলো মেইনটেইনস না করার ফলে আগুনের ঘটনা বেশি ঘটছে। প্রতিটি ভবনে মানসম্মত বৈদ্যুতিক তার ও সংযোগ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং উপযুক্ত ব্যক্তি ধারা এটি লাগানো উচিত। বিড়ি-সিগারেট থেকেও আগুনের ঘটনা কম নয়। ঈদকে সামনে রেখে মালামাল তৈরি ও গুদামে স্টক করছে। কিন্তু তারা সেফটির বিষয়টি মাথায় রাখছে না। তাদের অসাবধানতার কারণেই আগুনের ঘটনা বাড়ছে। ফায়ার কর্মকর্তা ছালেহ উদ্দিন আরও বলেন, আগুন নির্বাপণে পানি নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে। যে কোনো আগুন নির্বাপণে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা রয়েছে। সিলিন্ডার ব্যবহার বাড়ছে, কিন্তু অনেকে সিলিন্ডারের সঠিক ব্যবহার জানে না। সিলিন্ডারে নিম্নমানের রেগুলেটর ও পাইপের ব্যবহার হচ্ছে। ফলে এসব কারণে সিলিন্ডারের মাধ্যমে আগুনের ঘটনা ঘটছে। আমরা ঢাকার প্রতিটি নাগরিককে সচেতন করার চেষ্টা করছি। ঢাকা মহানগরীতে ১৭টি ফায়ার স্টেশন ছাড়াও সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ফায়ার সার্ভিসের টহল গাড়ি রাখা হচ্ছে। বর্তমানে ভূমি থেকে ভবনের ২৪ তলা পর্যন্ত আগুন নির্বাপণে সক্ষম ফায়ার সার্ভিস।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর