বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভাসমান হোটেলে রাতযাপন মাত্র ৫০ টাকায়!

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি

ভাসমান হোটেলে রাতযাপন মাত্র ৫০ টাকায়!

ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে মাত্র ৫০ টাকায় রাতযাপন করা যায় ভাসমান হোটেলে। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে মিটফোর্ড হাসপাতালের বিপরীতে এ ভাসমান হোটেলের (বোর্ডিং) অবস্থান। এটি নিম্নআয়ের মানুষের থাকার আশ্রয়স্থল। দেশের কোথাও এত কম টাকায় আবাসিক হোটেলে থাকা যায় না। এ ভাসমান বর্ডিংয়েই সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা ভাড়ায় থাকা যায় একদিন। পুরান ঢাকার বাবুবাজার, সদরঘাট, ওয়াইজঘাট ও আশপাশের এলাকাগুলোতে প্রচুর ভাসমান লোকজন কাজ করেন, যাদের থাকার জায়গা নেই। আবার বেশিরভাগ টাকা খরচ করে আবাসিক হোটেলে থাকার সামর্থ্য নেই। মূলত এরাই বোর্ডিংগুলোর বাসিন্দা। অর্থাৎ হকার, দিনমজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী থাকেন ভাসমান বোর্ডিংয়ে। সারা দিন কাজকর্মে ব্যস্ত থাকেন, দিনশেষে এখানে নির্বিঘ্নে রাতযাপন করেন। থাকার জন্য ঢাকার আবাসিক হোটেলগুলোতে যেসব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তার প্রায় সবই আছে এ বোর্ডিংগুলোতে। প্রতিটি ভাসমান বোর্ডিংয়ে কক্ষ আছে ৩৫-৫০টি। এর মধ্যে কয়েকটি দ্বৈত সিটের কক্ষ থাকলেও অধিকাংশ এক সিটের কক্ষ, যেখানে বৈদ্যুতিক আলো, ফ্যান, নিরাপদ খাবার পানি, টয়লেট সুবিধা রয়েছে। তবে শুরুতে যে বোর্ডিংয়ে খাবারের ব্যবস্থা ছিল সেই বোর্ডিংয়ে এখন আর খাবারের ব্যবস্থা নেই। বাইরে থেকেই খাবার খেয়ে আসেন বোর্ডিংয়ে থাকা মানুষ।

সরেজমিন বুড়িগঙ্গার মিটফোর্ড ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, কাঠের তৈরি ছোট সিঁড়ি দিয়ে পাঁচটি লোহার তৈরি নৌযানের ভাসমান বোর্ডিং। উমা উজালা, ফরিদপুর, শরীয়তপুর ও বুড়িগঙ্গা নামে চারটি ভাসমান বোর্ডিংয়ে রাতযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। ভাসমান বোর্ডিংয়ে ওঠানামার জন্য নদীর পাড় থেকে রয়েছে বাঁশ ও কাঠের তৈরি সাঁকো। বোর্ডিংগুলোতে প্রথম কক্ষেই থাকেন একজন ম্যানেজার। আর দুই পাশের সারিতে এক সিট ও দুই সিটের কক্ষ যা কেবিন নামেও পরিচিত। উন্মুক্ত (ঢালা) বিছানার কক্ষ, যেখানে তিন-চারজন একসঙ্গে থাকেন নিজেদের কাঁথা, বালিশ নিয়ে। ফলে এখানে থাকতে তাদের ভাড়া দিতে হয় জনপ্রতি মাত্র ৫০ টাকা। আর প্রতিটি কেবিনে রয়েছে তোশক, কাঁথা, বালিশ, ফ্যান ও লাইট। এক সিটের কেবিনের ভাড়া ১০০ টাকা, আর দুই সিটের কেবিনের ভাড়া দিনপ্রতি ১৫০ টাকা। একেকটি বোর্ডিংয়ে ৫০-৬০ জনের মতো থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বোর্ডিংগুলোতে থাকতে পারেন শুধু পুরুষরাই।

সদরঘাট হকার ব্যবসায় শামীম ওসমান বলেন, ‘ঢেউয়ের ওপর নৌকার মৃদু দুলুনি বিষয়টিতে আনন্দ করি। টার্মিনাল থেকে বেশ দূরে হওয়ায় এখানে খুব বেশি কোলাহল নেই। ভাসমান বোর্ডিং ৪২ বছরেরও বেশি সময় ধরে থাকা সদরঘাটের ফল ব্যবসায়ী ববুল সিকদার বলেন, ঢাকা শহরে এত অল্প ভাড়ায় থাকার সুবিধা কোথাও নেই, তাই দীর্ঘ বছর ধরে এখানে থাকছি। সারা দিন ফল ব্যবসা করে রাতে এখানে ঘুমাই। ফরিদপুর মুসলিম বোর্ডিংয়ের মালিক মোহাম্মদ মোস্তফা মিয়া জানান, তিনি এ হোটেলে প্রায় ৩৩ বছর ধরে চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে আমার মামা এ ব্যবসা করতেন। মামার মৃত্যুর পর ব্যবসার হাল ধরি। শরীয়তপুর বোর্ডিংয়ের ম্যানেজার শাহজালাল বলেন, সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষই এখানে থাকতে আসেন, বিশেষ করে যাদের কোনো সুনির্দিষ্ট আয়ের উৎস নেই। কিছু মানুষ বছরের পর বছর এখানে থাকেন।

সর্বশেষ খবর