বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

মিয়ানমারে গোলার শব্দে কাঁপছে এপারের ঘরবাড়ি

কক্সবাজার ও টেকনাফ প্রতিনিধি

কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত চরম আকার ধারণ করেছে। আবারও ওপার থেকে ভেসে আসছে গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দ। সোমবার রাত ৯টা থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টার শেলের বিকট শব্দে কেঁপে উঠেছে টেকনাফ সীমান্ত এলাকার বাড়িঘর। তবে গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়নি। দেশটিতে ফের সহিংসতা বাড়ায় আতঙ্কে রয়েছে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা।

সীমান্তের নাফ নদের পাড়ের বাসিন্দা মো. রফিক উদ্দিন জানান, মিয়ানমারের মংডুর নিকটবর্তী কিছু এলাকা থেকে এত বেশি গোলাগুলির শব্দ কখনো শোনা যায়নি। ফজরের নামাজে যেতে ভয়ে বাড়ি থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয়দের ভাষ্য, কিছুদিন মিয়ানমারের গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ কম শোনা গেলেও পরশু রাত থেকে ঘুমানোই যাচ্ছে না। রাত ৯টার পর থেকে ভোররাত পর্যন্ত অর্ধশতাধিক শক্তিশালী গ্রেনেড, বোমা ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে। যুদ্ধবিমান উড়েছে। এদিকে টেকনাফ পৌরসভা, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ, হ্নীলা ও হোয়াইক্যং সীমান্তের ১০-১২ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা লোকজন গতকাল ভোররাতে গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের বিকট আওয়াজ শুনতে পেয়েছে। অন্ধকারে মর্টার শেল বিস্ফোরণে আগুনের ঝলক এপার থেকে দেখা যাচ্ছে।

সীমান্তের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমারের কোওয়ারবিল, নাকপুরা ও বলিবাজারে থাকা সেনা পোস্ট ও বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সীমান্তচৌকি দখলের জন্য হামলা চালাচ্ছে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। গত রবিবার থেকে সরকারি বাহিনীর অবস্থানে হামলা বাড়িয়েছে আরাকান আর্মি। সোমবার সন্ধ্যায় মংডু টাউনশিপের কাছাকাছি মিয়ানমার বিজিপির একটি ক্যাম্প আরাকান আর্মি দখল করে নেয় বলে জানা গেছে। এ-সংক্রান্ত বেশ কিছু খবর সমাজমাধ্যমে ছড়িয়েছে। এদিকে আরাকান আর্মিকে প্রতিহত করতে মর্টার শেল নিক্ষেপের পাশাপাশি যুদ্ধবিমান থেকে হামলা করছে জান্তা বাহিনী। টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এনামুল হক বলেন, ‘এমন বিকট শব্দ আগে কখনো শুনিনি। গভীর রাতে মিয়ানমারের গোলাগুলির শব্দে বাড়ির ভিতরে পর্যন্ত থাকা যাচ্ছে না। সারা রাত বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে। মনে হচ্ছে মর্টার শেল আমাদের বাড়ির ত্রিসীমানায় বিস্ফোরণ হচ্ছে।’

এ বিষয়ে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিহাদ বলেন, ‘যেহেতু মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব কম, তাই আমরা তাদের গোলাগুলির শব্দে ঘুমাতে পারছি না। এদিকে মৌলভীপাড়া, নাজিরপাড়া, খানকার ডেইল, বরইতলী, কেরুনতলীসহ এ এলাকাগুলো নাফ নদের সঙ্গে সম্পৃক্ত এলাকা। আমরা বিভিন্ন সূত্রে জেনেছি, ওপার থেকে রোহিঙ্গারা এপারে আসার জন্য জড়ো হয়ে আছে। প্রতিটি নৌঘাট ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আমরা সতর্ক করেছি, অন্যথায় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আমরা তাৎক্ষণিক কঠোর অবস্থানে যাব। এ ছাড়া প্রশাসনকে একটু সজাগ থাকার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।’

টেকনাফ স্থলবন্দরে আমদানি পণ্য নিয়ে আসা মিয়ানমারের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, মংডু টাউনশিপের উত্তর, দক্ষিণ ও পুবপাশের রাচিডং টাউনশিপসহ ১০টির বেশি থানা দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে টিকতে না পারে সম্প্রতি নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ১৭৭ বিজিপি সদস্য। তারা এখনো নাইক্ষ্যংছড়ি সদরে ১১ বিজিবির (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) হেফাজতে রয়েছে। এর আগে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল ৩৩০ জন। ১৫ ফেব্রুয়ারি তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়। টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যের সংঘাতময় পরিস্থিতি পরিবর্তন না হওয়ায় গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদ সীমান্তে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’

সর্বশেষ খবর