বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

এমভি আবদুল্লাহতে বিমানবিধ্বংসী কামান জলদস্যুদের

ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

ছিনতাই হওয়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহতে বিমানবিধ্বংসী কামান বসিয়েছে জলদস্যুরা। যদিও বাংলাদেশ সরকার ও জাহাজের মালিকপক্ষ কমান্ডো অপারেশনে সায় না দেওয়ায় ইউরোপ ও ভারতের যুদ্ধজাহাজগুলো নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেছে। ফলে নাবিকদের ব্রিজে রাখার বিষয়ে কিছুটা নমনীয় হয়েছে জলদস্যুরা। সপ্তাহে দুবার করে সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা সুপেয় পানি দেওয়া হচ্ছে বন্দিদের মাঝে। গত সোমবার রাতে নেভির ক্যাপ্টেন আতিক ইউএ খান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে এসব তথ্য জানান। জিম্মি হওয়ার পর থেকে নাবিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন তিনি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার ও জাহাজ মালিক কমান্ডো অপারেশনের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় ইউরোপ-ভারতের যুদ্ধজাহাজগুলো আপাতত এমভি আবদুল্লাহর সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখছে। দিনে হয়তো এক-দুবার হেলিকপ্টার এসে রাউন্ড দিয়ে যায়, এতটুকুই। জাহাজে জলদস্যুরা সম্প্রতি একটা বিমান বিধ্বংসী কামান বসিয়েছে, তথ্যটা ঠিক। নেভি যুদ্ধজাহাজ দূরত্ব বজায় রাখায় নাবিকদের আর ২৪ ঘণ্টা ব্রিজে থাকা বাধ্যতামূলক না। জাহাজে শুধুই জরুরি রুটিন কাজগুলো করার সুযোগ পাচ্ছেন নাবিকরা, বিশেষ করে ইঞ্জিন রুমে। কার্গো হোল্ডের কয়লার পরিবেশ নিরাপদ আছে।

তিনি বলেন, মজুত খাবার দিয়ে বেশিদিন পার করতে নাবিকদের খাবার আর পানির রেশনিং চলছে। খাবার বলতে ইফতারে চনাবুট, পিঁয়াজু, দুই রকম ফল আর সাহরিতে ভাত দিয়ে ন্যূনতম মাছ-মাংস বা তরকারি। পানির লাইন চালু হচ্ছে সপ্তাহে মাত্র দুবার, তাও একঘণ্টা করে। এই পুরো সপ্তাহে দুই ঘণ্টার মধ্যেই গোসল আর কাপড় ধুয়ে নিতে হয়। বাকি ১৬৬ ঘণ্টা ম্যানেজ করতে হয় সমুদ্রের লোনা পানির সাপ্লাই দিয়ে। এজন্য অনেকেরই ত্বকের অ্যালার্জি দেখা দিয়েছে। স্যাটেলাইট ফোন সপ্তাহে মাত্র একবার ব্যবহারে অনুমতি দিচ্ছে জলদস্যুরা। গত শুক্রবার ছিল সেইদিন। জাহাজে আনুমানিক ২৫ জন জলদস্যু আছে। স্থানীয়ভাবে ওদের খাবার সাপ্লাই আসে। কখনো দেরি হলে জাহাজ হতে নেওয়া হয়।

এদিকে চট্টগ্রামের শিল্পগোষ্ঠী কবির গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও জিম্মি ২৩ নাবিককে ঈদের আগেই মুক্ত করার জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ তথ্যমতে, সোমালীয় পান্টল্যান্ড পুলিশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ভারতীয় নৌবাহিনীর কড়া নজরদারিতে রয়েছে জিম্মি জাহাজটি। এসব বাহিনীর সঙ্গে রয়েছে কমান্ডো হেলিকপ্টার ও যুদ্ধজাহাজ। কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করার চেষ্টা চালাচ্ছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে জিম্মিদশার অবসান হবে। ঈদের আগেই নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে পারব। তবে এখনো কোনো ধরনের মুক্তিপণ দাবি করেনি সোমালিয়ান জলদস্যুরা। গত ২৩ মার্চ বিবিসি সোমালিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সোমালিয়ার স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল পান্টল্যান্ডের নুগাল পুলিশ বিভাগের কমান্ডার মোহাম্মদ আলী আহমেদ মারদুউফ বলেছেন, এমভি আবদুল্লাহ এখন সোমালিয়ার জিফলের উপকূলীয় এলাকায় আছে। উল্লেখ্য, ১২ মার্চ বাংলাদেশ সময় বেলা ১টার দিকে ‘এমভি আবদুল্লাহ’ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। সশস্ত্র জলদস্যুরা মাত্র ১৫ মিনিটে ২৩ নাবিককে জিম্মি করে জাহাজটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। নাবিকরা সবাই বাংলাদেশি। সবশেষ পাওয়া তথ্যমতে, অবস্থান কয়েকবার পরিবর্তন করে সোমালিয়ার গদবজিরান উপকূল থেকে ৪ মাইল দূরে নোঙর করা হয়েছে জাহাজটি।

সর্বশেষ খবর