ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের কাটাগড়ে বসেছে প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী ‘কাটাগড়ের মেলা’। স্থানীয় সুফি সাধক সগীর শাহ দেওয়ানের মাজারকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর ২৬ মার্চ (বাংলা ১২ চৈত্র) প্রায় সহস্র একর জমির ওপর বসে এ মেলা। কবে থেকে মেলা শুরু হয়েছে তার সঠিক ইতিহাস জানা নেই কারোর। তবে এলাকার প্রবীণদের মতে, ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলনের আধ্যাত্মিক নেতা ছিলেন দেওয়ান শাগের শাহ (রহ.)। ধারণা করা হয়, ১৮ শতকের গোড়ার দিকে কাটাগড়ে আস্তানা গাড়েন তিনি। ১৮ শতকের প্রথমদিকে মারা যান এ আধ্যাত্মিক সাধক। তার মৃত্যুর দিন ভক্তরা জড়ো হয়ে ওরসের আয়োজন করেন। কালক্রমে সে ওরস ঘিরে জমে ওঠে এ ঐতিহ্যবাহী মেলা। এলাকাবাসী জানান, প্রতি বছর চৈত্র মাসের ১২ তারিখ থেকে তিন দিনব্যাপী এ মেলা শুরু হলেও রেশ থাকে সপ্তাহব্যাপী। ফার্নিচারসহ বিভিন্ন মিষ্টিসামগ্রীর পসরা বসে মেলায়। চলে এক মাস ধরে। মেলাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হাজারো ভক্ত, ফকির-সন্ন্যাসীর আগমন ঘটে এখানে। সরেজমিন দেখা যায়, মাজারের পাশে প্রায় সহস্র একর এলাকাজুড়ে মেলা বসেছে। মেলায় পুতুল নাচ, সার্কাস, ভ্যারাইটি শো, যাত্রাপালা, জাদু, নাগরদোলার পাশাপাশি ফার্নিচার, মিষ্টি, কসমেটিকসসহ অস্থায়ী খেলনার দোকান বসেছে। স্থানীয় কাটাগড় গ্রামের বাসিন্দা শামিম বলেন, ‘প্রায় ৩০০ বছর ধরে এ মেলা চলে আসছে। আমার জন্মের আগে তো বটেই, আমার বাপ-দাদার জন্মের আগে থেকেই এ মেলা বসছে বলে মুরব্বিদের মুখে শুনে আসছি।’ স্থানীয় বাসিন্দা ও বনমালীপুর জনতা উচ্চবিদ্যালয়ের অফিস সহকারী অলোক মণ্ডল বলেন, ‘মেলা শুরুর প্রায় এক মাস আগে থেকে এলাকায় আমেজ সৃষ্টি হয়। মেলার সময় আত্মীয়স্বজনদের দাওয়াত দেওয়ার রীতি চালু রয়েছে। এলাকার চাকরিজীবী ও পেশাজীবীরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন মেলায় গ্রামের বাড়িতে আসার জন্য। আশপাশের শতাধিক গ্রামের মানুষ কাজের জন্য যারা দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেন, তারা মেলা উপলক্ষে বাড়িতে ছুটে আসেন।