বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
মিয়ানমারে যুদ্ধ

সীমান্তের ১৩ গ্রামে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ

কক্সবাজার ও টেকনাফ প্রতিনিধি

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ও দেশটির সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘাত আরও তীব্র হয়েছে। দিনে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও রাতভর চলছে হামলা-পাল্টা হামলা। গোলাগুলি ও মর্টার শেলের ভারী শব্দ ভেসে আসছে কক্সবাজারের শেষ মাথা থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের ৯ কিলোমিটার ভিতরে অবস্থিত সেন্টমার্টিন দ্বীপেও। গত মঙ্গলবার রাতে টানা বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা গেছে সীমান্তের এপারে অন্তত ১৩টি গ্রাম থেকে। এতে আতঙ্কে থমকে গেছে সীমান্ত এলাকার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে ১টা পর্যন্ত মংডু টাউনশিপের উত্তরে বলিবাজার, নাকফুরা এবং দক্ষিণে হাস্যুরাতা ও নাইক্ষ্যংদিয়ায় আরাকান আর্মি ও সেদেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে। অর্ধশতের বেশি ভারী বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে মঙ্গলবার রাতে। সেন্টমার্টিন, টেকনাফ সীমান্তের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ঝিমংখালী, খারাংখালী, হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার, ওয়াব্রাং, পুরানবাজার, চৌধুরীপাড়াসহ অন্তত ১৩টি গ্রাম থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ভারী বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে সেন্টমার্টিন দ্বীপও। সেন্টমার্টিন দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আক্তার কামাল বলেন, রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে দেড় মাসের বেশি সময় ধরে সংঘাত চলছে। বিস্ফোরণের বিকট শব্দ টেকনাফের সীমান্তবর্তী অধিকাংশ গ্রাম থেকে শোনা গেলেও সেন্টমার্টিনের মানুষ সেভাবে শুনতে পায়নি। তবে মঙ্গলবার রাত ৮টার পর ২০-২৫টি মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান দ্বীপের বাসিন্দারা। এদিকে আরাকান আর্মির হামলার মুখে প্রাণ বাঁচাতে সম্প্রতি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের ১৭৭ জন সীমান্তরক্ষীকে এখনো ফেরত পাঠানো যায়নি। সীমান্ত পরিস্থিতির কারণে নতুন করে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। নাফ নদের ওপারে বিভিন্ন স্পটে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় জড়ো হয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে খবর মিলেছে। এ ব্যাপারে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাখাইন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদ ও সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে। কিছুতেই আমরা নতুন করে কাউকে ঢুকতে দেব না। টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এনামুল হক বলেন, ওপারের পরিস্থিতি দিন দিন যেন আরও খারাপ হচ্ছে। গভীর রাতে মিয়ানমারের গোলাগুলির শব্দে ঘুম হারাম হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে ঘরের বাইরেই যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এর আগে কয়েকদিন ধরে টেকনাফের হ্নীলা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বিপরীতে মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপের উত্তর অংশ থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। মঙ্গলবার রাতে শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিনের বিপরীতে অবস্থিত মংডু টাউনশিপের দক্ষিণ অংশ থেকেও বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে এসেছে। নতুন করে বিভিন্ন গ্রামে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ছে বলে ধারণা করছেন সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা।

সর্বশেষ খবর