বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

স্থান বদল করে পালিয়ে ২২ বছর

নিজস্ব প্রতিবেদক

দিনাজপুরের খানসামায় ২২ বছর আগে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ নামে একটি এনজিওর সুপারভাইজার পদে চাকরি করতেন তসলিম উদ্দিন। তখন তার বয়স ছিল ৩০ বছর। তার অধীনে এক নারী স্কুল শিক্ষিকা হিসেবে চাকরি করতেন। ওই নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন তসলিম। একপর্যায়ে ওই নারী পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। বিয়ের চাপ দেওয়ায় নারীর জোরপূর্বক গর্ভপাতও করানো হয়। তবে সেই ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ওই মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হওয়ার পর আত্মগোপনে চলে যান তসলিম। দীর্ঘ ২২ বছর পর নারায়ণগঞ্জের ভুলতা গাউসিয়া ফলপট্টি থেকে র‌্যাব পাকড়াও করেছে তসলিমকে।

গতকাল রাজধানীর টিকাটুলিতে র‌্যাব-৩ এর প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, গ্রেফতার এড়াতে রাজধানী ঢাকা, গাজীপুরে ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ছদ্মবেশে আত্মগোপনে ছিলেন তসলিম।

 তিনি ২০০০ সালে খানসামা থানার খামারপাড়া ইউনিয়নে ‘প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’ নামের একটি এনজিওর ফিল্ড সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ইউনিয়নের সাতটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ১৪ জন শিক্ষকের সুপারভাইজার ছিলেন। ১৪ জনের মধ্যে একজন বালাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এনজিও থেকে নিয়োগ পান এক শিক্ষিকা। কাজের সূত্রে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে তসলিম উদ্দিন ওই শিক্ষিকাকে নিয়ে শিশুদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলতেন। নিয়মিত যোগাযোগের ফলে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তসলিম বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক। এই তথ্য ওই শিক্ষিকার কাছে প্রকাশ করেননি। তিনি আরও বলেন, শিক্ষিকার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের জেরে তাকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করেন। এক পর্যায়ে ওই শিক্ষিকা গর্ভবতী হয়ে পড়েন। বিষয়টি তসলিমকে জানিয়ে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন। র‌্যাব-৩ অধিনায়ক আরও জানান, ভুক্তভোগী শিক্ষিকা মানসম্মান ও গর্ভের সন্তান হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন। এমনকি তখন তিনি আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন। পরবর্তীতে আসামি তসলিম চাকরি ছেড়ে ঢাকায় একটি ওষুধ কোম্পানির ডেলিভারিম্যান হিসেবে কাজ শুরু করেন। ফলে ভুক্তভোগীর পরিবার বাধ্য হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও ভ্রƒণ নষ্ট করার অভিযোগে একটি মামলা করে। মামলাটির দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৩ সালে দিনাজপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল তসলিমকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়। ভুক্তভোগী শিক্ষিকা মামলা করার পর তসলিম তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন। এরপর থেকে ঘনঘন স্থান পরিবর্তন করতে থাকেন। প্রথম দুই বছর একটি ওষুধ কোম্পানির ডেলিভারিম্যান, এরপর তিন বছর সিলেটে একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। মামলার রায় হওয়ার পর গাজীপুরে কখনো ভ্যান চালিয়ে, কখনো মাটিকাটা শ্রমিকের কাজ করে, কখনো এনজিওর মাঠকর্মী হিসেবে ছদ্মবেশে কাজ করে আসছিলেন। র‌্যাব জানায়, এনজিওর মাঠকর্মী থাকাকালীন গাজীপুরের শ্রীপুর এবং কাশিমপুর এলাকার বিভিন্ন গ্রাহকের প্রায় ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের ভুলতা গাউছিয়া এলাকায় আত্মগোপন করেন তসলিম। সর্বশেষ গাউছিয়া বাজারে ফলপট্টিতে একটি ফলের আড়তে তরমুজের ব্যবসা শুরু করেন।

সর্বশেষ খবর