শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

অভিভাবকহীন কর্ণফুলী নদী

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

অভিভাবকহীন কর্ণফুলী নদী

কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে স্থাপন করা হয়েছে বিশাল পরিসরের মাছ বাজার। এর সঙ্গে আছে প্রতিযোগিতা করে কর্ণফুলী নদী দখল এবং দূষণ করা। নদী দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে মার্কেট। এখন নতুন করে নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ফলে অনেকেই মনে করেন, কর্ণফুলী নদী এখন যার যা মনে কয় তা-ই করে ফেলবার জায়গা। তবে চরে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের প্রতিবাদে নাগরিক ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো নিয়মিত কর্মসূচি পালন করছে।

জানা যায়, ২০১৫ সালে চাক্তাই ও রাজাখালী খালে ১৪৭ দশমিক ১০ একর জায়গা জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডকে ১৫ বছরের জন্য ইজারা দেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর পাশে কর্ণফুলী নদীর অংশেই নতুন ফিশারি ঘাটে মাছ বাজারকে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ লাখ ৭৫ হাজার ২৬৩ বর্গফুট জায়গা। অন্যদিকে, নগরীর কল্পলোক আবাসিক এলাকার পূর্বপাশে এবং বোয়ালখালী ও শিকলবাহার পশ্চিম পাশে কর্ণফুলী নদীর মাঝখানে জেগে ওঠে ৩৫ একর চর। এ জমি বোয়ালখালী উপজেলাধীন চর বাকলিয়ার বিএস ৫৪৪ দাগে ১ নম্বর খাস খতিয়ানে নদী হিসেবে রেকর্ড হয়। চরটি পূর্ণিমা বা অমাবস্যার জোয়ারে ডুবে যায়। তবু গত বছরের নভেম্বরে এ চরে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র করার পরিকল্পনা নেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

বর্জ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কাছে অনাপত্তিপত্র প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। অথচ, প্রতিয়িনতই কমছে নদীর নাব্য। ‘চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন’ নামের সংগঠনের ২০২০ সালের জরিপ প্রতিবেদন বলছে, শাহ আমানত সেতু এলাকায় জোয়ারের সময় নদীটির প্রস্থ ৫১০ মিটার ও ভাটার সময় ৪১০ মিটার। কিন্তু আগে ছিল ৮৮৬ মিটার। রাজাখালী খালের মুখে নদীর প্রশস্ততা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফিরিঙ্গি বাজার পয়েন্টে নদীর প্রস্থ ছিল ৯০৪ মিটার, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গাইড ওয়াল নির্মাণের পর সেখানে নদী আছে ৭৫০ মিটার। চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান বলেন, কর্ণফুলী নদী দখল করে মাছ বাজার তৈরি করা, মার্কেট নির্মাণ করা এবং নিয়মিত প্রতিযোগিতা করে দখল করা অব্যাহত আছে। এর সঙ্গে নতুন করে যোগ হচ্ছে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ তৈরির কেন্দ্র স্থাপন করার সিদ্ধান্ত। সব মিলে সবাই কর্ণফুলী নদীতেই। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে নদীটি এখন অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। এভাবে দিন দিন কর্ণফুলী নদীকে গলা টিপে হত্যা করার সব আয়োজন সম্পন্ন করা হচ্ছে। আমরা নাগরিক ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো এক হয়ে এর প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করব। কারণ এভাবে নদীটিকে গলা টিপে হত্যা করতে দেওয়া যায় না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান নদী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, এমনিতেই কর্ণফুলী নদী দখল করে মাছ বাজার, মার্কেটসহ নানা স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। সঙ্গে আছে দূষণ। এখন আবার নতুন করে কর্ণফুলীর চরে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা হলে এটি হবে একটি চরম আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। কারণ এখানে কোনো না কোনোভাবে বর্জ্যে উচ্ছিষ্ট নদীতে পড়বে। এর মাধ্যমে নদীর পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হবে। দূষণ ও ভরাট হবে। হুমকি হবে বন্দর ও নদীর মৎস্য সম্পদের জন্য। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবদুল মালেক বলেন, কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ একটি চলমান কাজ। তাছাড়া, দখল-দূষণ নিয়েও নিয়মিত তদারকি করা হয়।

জানা যায়, নদীর চরে প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে চট্টগ্রাম। ইতোমধ্যে চরে অনুষ্ঠিত হয়েছে মানববন্ধন এবং সংবাদ সম্মেলন। আগামীকাল রবিবার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা। পরিবেশবাদী সাতটি সংগঠন ধারাবাহিকভাবে এসব কর্মসূচি পালন করছে।

সর্বশেষ খবর