শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

৪৯ বছর পর খুঁজে পেলেন মাকে

মাদারীপুর প্রতিনিধি

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার মাদবরচর ইউনিয়নের পদ্মারচর গ্রামের ফিরোজা বেগমের বিয়ে হয়েছিল মাত্র ১৩-১৪ বছর বয়সে। বিয়ের পর যখন তিনি অন্তঃসত্ত্বা, তখন মারা যান স্বামী বছির সরদার। অভাব-অনটনের সংসার। এরই মধ্যে জন্ম নেয় কন্যাসন্তান। নাম রাখেন মৌসুমী। সেই সন্তান লালনপালনের সামর্থ্য ছিল না ফিরোজার। বাধ্য হয়ে সন্তানকে ঢাকার মোহাম্মদপুর এতিমখানায় দিয়ে আসেন। সেই এতিমখানা থেকে শিশু মৌসুমীকে দত্তক দেওয়া হয় নরওয়ের এক দম্পতির কাছে। সেই দম্পতির ঘরেই বড় হয়েছেন মৌসুমী। নাম বদলে রাখা হয়েছে এলিজাবেথ ফিরোজা। কেটে গেছে ৪৯ বছর। পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী এলিজাবেথের জন্ম ১৯৭৫ সালের ১৫ জুলাই। এর পাঁচ মাসের মাথায় ২২ ডিসেম্বর মোহাম্মদপুর এতিমখানা থেকে তাকে দত্তক নিয়ে যান নরওয়ের এক দম্পতি। সেই থেকে মৌসুমী ওরফে এলিজাবেথ নরওয়ের বাসিন্দা। দীর্ঘদিন তিনি জানতেনই না কে তার আসল বাবা-মা। নরওয়ের চিকিৎসক রয় রয়েড ও ক্যারেন রয়েড দম্পতি দত্তক নেওয়ার পর নাম রাখেন এলিজাবেথ ফিরোজা রয়েড। সেই দম্পত্তিই তাকে বিয়ে দেন। বিয়ের পর রয়েড বদলে হন ফাজালসেট। এরপর এলিজাবেথ ফিরোজা ফাজালসেট অন্তঃসত্ত্বা হয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। সে সময় চিকিৎসক তার পারিবারিক বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে জানতে চান। তখনই প্রথম তার মা ও পরিবার সম্পর্কে জানার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এরপর অবশ্য তিনি পরপর চার সন্তানের মা হয়েছেন।

এর পর থেকে মাকে খুঁজছিলেন মৌসুমী। ২০১৩ সালে একবার বাংলাদেশে এসেছিলেন মায়ের খোঁজে। তবে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান। কিন্তু এবার আর ব্যর্থ হতে হয়নি। গত বৃহস্পতিবার মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার পদ্মারচর গ্রামে গিয়ে পেয়েছেন মায়ের দেখা। দুজনকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কেঁদেছেন দুজন। ৪৯ বছর আগে মাত্র দেড় মাস বয়সে মায়ের কোল থেকে নরওয়ে যেতে বাধ্য হওয়া এলিজাবেথ ফিরোজা ফিরলেন তার মায়ের কাছে। যদিও জন্মদাত্রী মাকে খুঁজে পেতে এলিজাবেথের এ যাত্রা মোটেই সহজ ছিল না। সকালে একটি গাড়ি নিয়ে এলিজাবেথ ও তার স্বামী হেনরি ঢাকা থেকে আসেন মাদবরচর গ্রামের তারই বংশের একমাত্র ভাতিজা সেলিম সরদারের বাড়িতে।

এলিজাবেথ তার মায়ের জন্য নতুন জামা-পাজামা, কসমেটিকসসহ বিভিন্ন উপহার নিয়ে আসেন। পরে স্থানীয় একটি বাজার থেকে চাল, ডাল, চিনি, দুধ, আটা-ময়দা, সেমাইসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী কিনে দিয়ে যান। আর নরওয়ে থেকেও মেয়ে এলিজাবেথ যেন মাকে দেখতে পারেন সেজন্য একটি মোবাইল ফোন কিনে দেবেন বলে জানান। হৃদয় নাড়া দেওয়া এ ঘটনার প্রেক্ষাপটে কেউই কারও ভাষা বুঝতে পারেননি। কেবল আবেগ-অনুভূতি দিয়ে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিকালে ঢাকায় ফিরে যান এলিজাবেথ ফিরোজা ও তার স্বামী হেনরি। এলিজাবেথ ফিরোজা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে নরওয়েতে বড় হয়েছি। নরওয়ের বাবা-মা নাম রাখেন এলিজাবেথ। বড় হয়ে জানতে পারি আমার জন্ম বাংলাদেশে। মায়ের নাম ফিরোজা বেগম। তার পর থেকেই আমি ফিরাজো নামটা আমার নামের সঙ্গে যুক্ত করি। তবে ২২ বছর বয়সে প্রথম সন্তান প্রসবের পর ওখানকার ডাক্তার আমার হিস্টোরি জানতে চান। তখন থেকেই আমি আমার পরিবারকে খুঁজতে চেষ্টা করি। এ ব্যাপারে আমার স্বামী হেনরি ও সন্তানরা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। আমার এখন তিন ছেলে ও এক মেয়ে এবং নাতিনাতনি রয়েছে।’

সর্বশেষ খবর