বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

রূপপুরেই দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র

♦ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রোসাটম মহাপরিচালকের সাক্ষাৎ ♦ নির্মাণে থাকবে রাশিয়া, দ্রুত শুরু কারিগরি সমীক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রূপপুরেই দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গতকাল সাক্ষাৎ করেন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ -পিআইডি

পাবনার রূপপুরে নির্মিত হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম পারমাবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৮৫ শতাংশ নির্মাণকাজ এরই মধ্যে শেষ। এবার দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিও নির্মাণের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। আর এটিও রূপপুরে নির্মাণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গতকাল রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে রূপপুর প্রকল্প এলাকায় নতুন দুটি ইউনিট স্থাপনের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে কারিগরি সমীক্ষা পরিচালনার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বিপরীতে আলেক্সি লিখাচেভ নতুন দুটি ইউনিটের নির্মাণকাজ শুরু করতে কারিগরি সমীক্ষা দ্রুততম সময়ে শুরু করার প্রস্তাব করেন। রোসাটমের দায়িত্বশীল সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানায়, আলেক্সি লিখাচেভ তার রুটিন ভিজিটে রূপপুর প্রকল্পের অগ্রগতি দেখতে বাংলাদেশ পরিদর্শনে নিয়মিত আসেন। তবে এবার তার বাংলাদেশ সফরে আসা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে আলোচনার অন্যতম প্রধান ইস্যু ছিল রূপপুরে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রসঙ্গ। গত সোমবার বাংলাদেশে এসেই রোসাটম মহাপরিচালক রূপপুর প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে যান। সেখানে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথাবর্তা বলেন। এদিন একই সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়সহ রূপপুর প্রকল্প নির্মাণে জড়িত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাজধানীর একটি হোটেলে বৈঠক করেন। আর গতকাল সকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। মূলত রোসাটম বাংলাদেশে তাদের সহযোগিতার আওতা বাড়াতে আগ্রহী। এর আওতায় তারা নিউক্লিয়ার সেন্টার ও নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর করতে চাচ্ছে। রূপপুর প্রকল্প যখন বাস্তবায়ন শুরু হয় তখন থেকেই পরিকল্পনা ছিল যে এই জায়গায় চারটি ইউনিট নির্মাণ করা হবে। সে হিসেবে বর্তমান রূপপুর প্রকল্প এলাকায় আরও দুটি ইউনিট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলে সেখানে সমস্যা হওয়ার কথা না। আর এই প্রকল্প এলাকায় প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণকাজ চলমান থাকায় অন্য দুটি ইউনিট করার নির্মাণব্যয়ও অনেক কমে আসবে। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারও দেশের বিভিন্ন স্থানে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জায়গা দেখলেও সেগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য উপযুক্ত ছিল না। আর রূপপুরের প্রকল্প এলাকাটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য অনেক আগে থেকেই উপযুক্ত প্রমাণিত। এজন্য এ স্থানেই সরকার দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এজন্য রোসাটম কর্তৃপক্ষকে রূপপুর প্রকল্প এলাকায় জরিপকাজ শুরু করতে বলেছেন। জরিপের ফলাফল ইতিবাচক হলে তখন রূপপুরে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেবে বাংলাদেশ। রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, চলতি বছর শেষের আগেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের ফিজিক্যাল স্টার্টআপ হবে। বর্তমানে আমরা নতুন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করছি। রূপপুর এনপিপি সাইটে আরও দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিট নির্মাণের ব্যাপারে বাংলাদেশ গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মাল্টিপারপাস গবেষণা রি-অ্যাক্টর নির্মাণের বিষয়টিও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। গবেষণা রি-অ্যাক্টর বিজ্ঞান ও নিউক্লিয়ার মেডিসিন ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমাধান দিতে সক্ষম। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ মার্চ তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে বলেন, রূপপুরে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ চলছে। আমরা চেয়েছিলাম দক্ষিণ বঙ্গে দ্বিতীয়টি করতে। কিন্তু সেখানকার মাটি অনেক নরম। সে কারণে পাবনাতেই দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে। প্রথমটির সঙ্গে দ্বিতীয়টির কাজও যাতে শুরু করতে পারি সে ব্যাপারে আলোচনা চলছে।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রোসাটম মহাপরিচালকের সাক্ষাৎ : রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প এলাকায় নতুন দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিট নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়ার সরকার। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গতকাল সৌজন্য সাক্ষাৎকালে রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ রাশিয়ান সরকারের পক্ষে এ প্রস্তাব করেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী রূপপুরে নতুন দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিট (ইউনিট-৩ এবং ইউনিট-৪) রাশিয়ান ফেডারেশনের সহায়তায় নির্মাণের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। নতুন দুটি ইউনিট স্থাপনের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে কারিগরি সমীক্ষা পরিচালনা করা প্রয়োজন বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। আলেক্সি লিখাচেভ নতুন দুটি ইউনিটের নির্মাণকাজ শুরু করতে ওই কারিগরি সমীক্ষা দ্রুততম সময়ে শুরু করার প্রস্তাব করেন। তিনি জানান, এরই মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ। প্রথম ইউনিটের ফিজিক্যাল স্টার্টআপ চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে শুরু হবে। ইউনিট-১ এবং ইউনিট-২ থেকে আগামী ২০২৫ এবং ২০২৬ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। নতুন ইউনিট-৩ এবং ইউনিট-৪ এর নির্মাণকাজ প্রথম দুটি ইউনিটের নির্মাণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু করা প্রয়োজন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী রূপপুর প্রকল্পের প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিটে ব্যবহৃত পারমাণবিক জ্বালানি রাশিয়ায় ফেরত নিতে সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার জন্য নির্দেশ দেন।

সর্বশেষ খবর