বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

রোজা পালন ও উপকারী উপদেশ

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

রোজা পালন ও উপকারী উপদেশ

মাহে রমজানের আজ ২৩তম রোজা। হাদিসে বর্ণিত নাজাতের তৃতীয় দিন। বাকি আছে আর মাত্র কয়েকটি দিন। এরই মধ্যে পবিত্র লাইলাতুল কদরের মতো বড় ফজিলতের রাতও সামনে আমরা পেয়ে যেতে পারি। তাই পূর্ণ ধ্যান ও খেয়ালের সঙ্গে ইবাদতের মাধ্যমে বাকি দিনগুলো কাটানো উচিত। সময় চলে গেলে আফসোস করতে হবে। কিন্তু কোনো লাভ হবে না। ইখলাসের সঙ্গে ইবাদত করার জন্য প্রয়োজন খাঁটি ও সঠিক নিয়ত; যা হজরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসের মাধ্যমে আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। ইমাম বুখারি (রহ.) বুখারি শরিফের শুরুতে নিয়ত সম্পর্কিত হাদিসটি উল্লেখও করেছেন। সঠিক নিয়ত করার জন্য প্রয়োজন বিশুদ্ধ আকিদা ও বিশ্বাস। সঠিক আকিদা ও বিশ্বাস স্থাপন করার জন্য সুরা লোকমানের উপদেশগুলো জানা খুব জরুরি। এই উপদেশগুলো অনুসরণে আমরা পাব পরিশুদ্ধ ও নেককারের জীবন। খুঁজে পাব আত্মশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিকতার পথ। আসুন জেনে নেই হজরত লোকমান (আ.) সুরা লোকমানে তাঁর পুত্রকে কী উপদেশ দিয়েছিলেন। সুরা লোকমান পবিত্র কোরআনের ৩১তম সুরা। সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ। এতে ৪ রুকু, ৩৪ আয়াত। যারা ইমান আনার পর নামাজ পড়ে, জাকাত দেয়, রোজা রাখে ও হজ ফরজ হলে হজ করে, পরলোকে বিশ্বাস করে তাদের জন্য পবিত্র কোরআন একটি একক কিতাব ও পথনির্দেশক। এ সম্পর্কে ইরশাদ হচ্ছে, রমজান মাস, যে মাসে পবিত্র কোরআন নাজিল করা হয়েছে, যা সমগ্র মানবজাতির জন্য হিদায়াতস্বরূপ। (সুরা বাকারা : ১৮৫) হজরত লোকমান (আ.) একটি পরিচিত নাম। তিনি স্বীয় পুত্রের প্রতি আল্লাহর একত্ববাদ বা তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার, মা-বাবার সেবা, নামাজ আদায়, জাকাত প্রদান ও বিপদে ধৈর্যধারণ তথা সঠিকভাবে ইবাদত করার জন্য যেসব উপদেশ দিয়েছিলেন, তা উল্লেখ করা হয়েছে। উপদেশগুলো নিম্নরূপ। উপদেশ-১ : আল্লাহর কোনো শরিক কোরো না। আল্লাহর শরিক করা তো চরম সীমালঙ্ঘন। উপদেশ-২ : নামাজে দাঁড়ালে অন্তরের হেফাজত করা। মৌলিকভাবে নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। নামাজ পড়তে হয় পূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে। যেভাবে নামাজ পড়েছেন হজরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন, তাবে তাবিয়িন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন, পীর ও আউলিয়ায়ে কেরাম ও হক্কানি ওলামায়ে কেরামগণ। নামাজে দাঁড়ালে শয়তান মনকে স্থির থাকতে দেয় না। নামাজে দাঁড়ালেই সারা দিনের হিসাব মনে পড়ে যায়। নামাজে দাঁড়ালে কাজের রুটিন তৈরি করে। তাই তো হজরত লোকমান (আ.) উপদেশ দিয়েছেন যে, নামাজের সময় অন্তরের হেফাজত কর, যাতে কোনোভাবে মন নামাজের বাইরে যেতে না পারে। অনুরূপ রোজা রাখতে হবে আল্লাহর ভয়কে সামনে রেখে, যাতে শয়তান কোনোভাবে রোযা নষ্ট করতে না পারে। উপদেশ-৩ : খাবার ধীরেসুস্থে খাওয়া। তাড়াহুড়ো করে খাবার খেতে গিয়ে গলায় আটকে যায় অথবা খাবার ওপরে উঠে নাক জ্বালাপোড়া করে। একটু অসতর্কতায় বড় বিপদ ডেকে নিয়ে আসতে পারে। এ জন্য তিনি খাওয়ার সময় তাড়াহুড়ো করতে নিষেধ করেছেন। হজরত রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাবার গ্রহণের সুন্নাহ পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছেন। সেভাবে খাবার গ্রহণ করলে খাবার শারীরিক ও মানসিক উপকারী হবে। উপদেশ-৪ : সর্বাবস্থায় চোখের হিফাজত করা। যাতে চোখের গুনাহ থেকে বাঁচা যায়। অন্যের ঘরে গিয়ে এদিক-ওদিক না তাকানো। এ অভ্যাস থাকলে দূর করা। হজরত লোকমান (আ.) বললেন, অন্যের ঘরে গিয়ে চোখের হেফাজত কর। মেহমানের জন্য মেজবান যেন লজ্জিত না হয়। মেহমান নিজেও যাতে লজ্জিত না হয়। সেদিকে পূর্ণ খেয়াল রাখা। উপদেশ-৫ : কথা বলা বা ভাষণ দেওয়ার সময় নিজেকে সংযত রাখা। অসতর্কভাবে কথা বললে বিপদ হতে পারে। বেশি কথা বললে নিজের মর্যাদার হানি হয়। হজরত রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মান সামাত নাজা’ যিনি চুপ থেকেছেন তিনি মুক্তি পেয়েছেন। উপদেশ-৬ : মৃত্যুকে এক মুহূর্তের জন্যও না ভুলে যাওয়া। মৃত্যুর কথা স্মরণ রাখা। কারণ যে কোনো সময় মৃত্যু চলে আসতে পারে। উপদেশ-৭ : আল্লাহকে স্মরণ করা। আল্লাহ বলেন, তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫২)। যার অন্তরে সবসময় আল্লাহর জিকির থাকবে, তাঁর জবান সবসময় আল্লাহর জিকিরে ব্যস্ত থাকবে। সুবহানাল্লাহ। আল্লাহ তাঁকে প্রিয় বান্দাদের কাতারে শামিল করে নেবেন। ইনশাআল্লাহ। উপদেশ-৮ : কারও উপকার করলে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা। কারণ কেউ কারও কাছে সহজে হাত পাতে না; অভাবে পড়ে কিংবা বিপদে পড়ে মানুষ সাহায্য চায়। উপকার করলে তা নিয়ে খোঁটা দেওয়া যাবে না। উপদেশ-৯ : কেউ আঘাত দিয়ে থাকলে ভুলে যাওয়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা উচিত। মহান রব্বুল আলামিন উল্লিখিত উপদেশগুলো মান্য করে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করার তৌফিক দান করুন। আমিন

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর