বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

সাড়ে তিন মাসের ব্যবধানে বাড়ল হার্ট রিংয়ের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাড়ে তিন মাস আগে কার্ডিয়াক স্টেন্টের (হার্ট রিং) মূল্য কমিয়ে সুনাম কুড়িয়েছিল ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। কিন্তু সেই দাম বাস্তবায়নের আগেই বাড়ানো হলো জরুরি এই মেডিকেল ডিভাইসের দাম। গত ২ এপ্রিল ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর কার্ডিয়াক স্টেন্টের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর নতুন করে হার্টের রিংয়ের দাম নির্ধারণ করায় রিং ভেদে দাম ২ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর ডিজিডিএ এলেক্স প্লাস স্টেন্টের দাম নির্ধারণ করেছিল ৫৩ হাজার টাকা। সাড়ে তিন মাস পর ২ এপ্রিল সেই স্টেন্টের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। ডিসেম্বরে আল্টিমাস্টার টেনসেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬০ হাজার টাকা, নতুন করে সেই স্টেন্টের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৬ হাজার টাকা। ৫৫ হাজার টাকার ডিরেক্ট স্টেন্ট সিরো এর নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৬ হাজার টাকা। ২ এপ্রিল ইউরোপীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ২৩ ধরনের হার্ট রিংয়ের দাম নির্ধারণ করেছে ডিজিডিএ। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, হার্টের রিংয়ের মূল্য হ্রাসে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ডিজিডিএ নতুন নির্ধারিত দামের সঙ্গে তুলনা করেছে ২০২১ ও ২০২২ সালের রিংয়ের দামের সঙ্গে। সে হিসেবে রিংয়ের দাম কমেছে। কিন্তু গত বছরের কমানো দামের বিষয় উল্লেখ করা হয়নি। হার্টের রিংয়ের দাম বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, আমরা জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছি। ওষুধ কিংবা মেডিকেল ডিভাইসের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। হার্টের রিংয়ের দামের বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। গত ১২ ডিসেম্বর ২৭টি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ৪৪ ধরনের হার্টের রিংয়ের দাম কমিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর ১৬ ডিসেম্বর থেকে হার্টের রিংয়ের এই নতুন দাম কার্যকর করার কথা ছিল। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দিন থেকেই ইউরোপীয় স্টেন্ট আমদানিকারকরা দাম পুনর্নির্ধারণের দাবি জানিয়ে হাসপাতালগুলোকে তাদের রিং ব্যবহার না করার জন্য চিঠি দেয়। পরে দাম পুনর্নির্ধারণের দাবিতে হাই কোর্টে রিটও করে ইউরোপীয় আমদানিকারকেরা। দাম পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে ডিজিডিএর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ১০ জানুয়ারি রিট প্রত্যাহার করে নেয় ইউরোপীয় স্টেন্ট আমদানিকারকেরা। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য সচিব জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় সরকার নির্ধারিত দামেই হার্টের রিং বিক্রির নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু আবার পরিবর্তন হলো সে সিদ্ধান্ত। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মীর জামাল উদ্দিন বলেন, গত বছরের ডিসেম্বরে হার্ট রিংয়ের দাম কমানো হলে ইউরোপিয়ান রিং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল। রিটের মীমাংসা হওয়ার পরে তাদের প্যারেন্ট কোম্পানিদের নিয়ে আমরা বসেছিলাম। ওই দামে রিং বিক্রি করলে তাদের ক্ষতি হচ্ছে বলে তারা জানিয়েছে। তাদের পক্ষে ওই দামে রিং সরবরাহ করা সম্ভব না বলে জানিয়েছে। বাজারে ৫০ শতাংশ রিং সরবরাহ করে ইউরোপিয়ান প্রতিষ্ঠান আর ৫০ শতাংশ আমেরিকান প্রতিষ্ঠান। দাম না বাড়ানোয় তারা ধর্মঘট ডাকলে বাজারে সংকট তৈরি হয়েছিল। শুধু আমেরিকান রিং দিয়ে রোগীদের সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব না। এ জন্য খুব অল্প পরিমাণে দাম বাড়ানো হয়েছে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক সালাহউদ্দিন বলেন, ‘হৃদরোগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, হৃদরোগ চিকিৎসক ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করে রিংয়ের দাম সমন্বয় হয়েছে। সব হাসপাতালে রিংয়ের দামের তালিকা টানিয়ে দিতে বলা হয়েছে যাতে রোগী ও স্বজনরা নতুন দাম সম্পর্কে জানতে পারেন।’

সর্বশেষ খবর