বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

১৪ বাসে আগুন নাশকতা সন্দেহে চলছে তদন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর ডেমরায় গ্যারেজে থাকা লন্ডন এক্সপ্রেসের ১৪টি ভলভো বাস আগুনে পুড়ে গেছে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা তা খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একাধিক সংস্থা মনে করছে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি নাশকতা। তবে পুলিশের ওয়ারী বিভাগ বলছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত। বাতাস থাকার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় সোমবার রাতেই যাত্রাবাড়ী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন লন্ডন এক্সপ্রেসের তত্ত্বাবধানকারী নুরুল হক মৃধা। বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন এমন একটি সংস্থার কর্মকর্তা বলছেন, দুর্ঘটনা হলে এক থেকে দুটি বাস পুড়ে যেত। সারিবদ্ধভাবে থাকা ১৪টি বাস পুড়ে যাওয়ায় সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। নেপথ্যে অবশ্যই কিছু না কিছু রয়েছে। গতকাল বসুন্ধরা সিটি শপিং মল পরিদর্শন শেষে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এখনো আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি। এটি কোনো দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস, র‌্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ইউনিট তদন্ত করছে। গতকাল ডেমরায় ধার্মিকপাড়ার গ্যারেজটি ঘুরে দেখা যায়, ভাড়া করা গ্যারেজটির চারপাশে টিনের বেড়া দিয়ে সীমানা তৈরি করা। এই গ্যারেজের ভিতরেই পুড়ে যাওয়া ১৪টি বাস তিন সারিতে রাখা ছিল। প্রথম সারিতে তিনটি, দ্বিতীয় সারিতে পাঁচটি ও তৃতীয় সারিতে ছয়টি বাস ছিল। আগুনে তৃতীয় সারির ছয়টি ও দ্বিতীয় সারির পাঁচটি বাস সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। আর সামনের সারির তিনটি বাস তুলনামূলক কম পুড়েছে। গ্যারেজের ভিতরে গাড়ির তিনটি ইঞ্জিন ও বিভিন্ন যন্ত্রাংশ এবং টিনের বেড়ার পাশ দিয়ে বৈদ্যুতিক তার পড়ে থাকতে দেখা যায়। গ্যারেজের ভিতরের নিরাপত্তার রুমটি অক্ষত রয়েছে। সেখানে রান্নার কাজে ব্যবহৃত গ্যাসের সিলিন্ডার, চুলাসহ বিভিন্ন মালামাল অক্ষত রয়েছে। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে গ্যারেজের পেছনে দক্ষিণ দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তের মধ্যে আগুন পুরো গ্যারেজে ছড়িয়ে পড়ে। একে একে পুড়তে থাকে ১৪টি বাস। খবর পেয়ে ডেমরা ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে গ্যারেজের ১৪টি বাস সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। লন্ডন এক্সপ্রেস লিমিটেডের বাসগুলো ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে চলাচল করত। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ওয়ারী) ইকবাল হোসেন বলেন, বাসগুলো সদ্য রং করা ছিল। রংয়ে ব্যবহৃত তারপিন খুবই দাহ্য। আগুনের সময় ওই এলাকায় বাতাসও ছিল। হয়তো এ কারণেই দ্রুত আগুন ছড়িয়েছে। ব্রিটেন প্রবাসী নুরুল হকের হয়ে কোম্পানি দেখভাল করেন নুরুল হক মৃধা। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, যে বাসগুলো পুড়েছে, মালিক পক্ষ এখনো কোনো নাশকতার সন্দেহ করে অভিযোগ করেনি। তারপরও আমাদের গোয়েন্দারা কাজ করছে। এটা স্বাভাবিক ঘটনা নাকি নাশকতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তদন্ত কমিটি গঠন : লন্ডন এক্সপ্রেসের ১৪টি বাস পুড়ে যাওয়ার বিষয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক মো. ছালেহ উদ্দিনকে। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর