শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

চিঠি চালাচালির প্রতিষ্ঠান ইউজিসি

আকতারুজ্জামান

চিঠি চালাচালির প্রতিষ্ঠান ইউজিসি

সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মিলে দেশে ১৬৯টি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের তদারকির দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরি কমিশন (ইউজিসি) এখন শুধুই চিঠি চালাচালির প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। স্বতন্ত্র একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে উচ্চশিক্ষার বিস্তারে কাজ করার কথা থাকলেও ইউজিসি এখন অনেকটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। তাই ইউজিসি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়মেই কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না, শুধু ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করে থাকে। সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ স্বপ্রণোদিত হয়ে তদন্তও করতে পারে না ইউজিসি। শুধুমাত্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলে সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে তদন্ত করে মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন দিয়ে থাকে। আর বেশির ভাগ প্রতিবেদনে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হলেও তা কার্যকর হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সক্ষমতা বাড়াতে দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চশিক্ষা কমিশনের দাবি করে আসছিলেন শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্টরা। সরকারও উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে। এ-সংক্রান্ত আইন গঠনের জন্য সচিব কমিটি একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছিল। এই প্রস্তাবের পরই থমকে গেছে উচ্চশিক্ষা কমিশন। কারণ শিক্ষাবিদরা বলছেন, এ প্রস্তাবনা অনুযায়ী কমিশন গঠন করা হলে তা হতো আমলাদের পুনর্বাসন কেন্দ্র। তাই এই প্রক্রিয়া এগোয়নি। উচ্চশিক্ষা কমিশন প্রক্রিয়া থেমে যাওয়ার পর সরকার উদ্যোগ নিয়েছিল ইউজিসির সক্ষমতা বাড়ানোর। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রস্তাবনা ইউজিসিতে আসার পর এই প্রক্রিয়াও থমকে গেছে। কারণ ইউজিসি সূত্র জানিয়েছে, শীর্ষ পদগুলোতে এতদিন শুধু শিক্ষকদের নিয়োগ করা হলেও এ প্রস্তাবনায় শিক্ষকদের পাশাপাশি আমলাদেরও রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তাই প্রস্তাবনায় মতামতের জন্য ইউজিসিতে এলেও ইউজিসি কর্তাব্যক্তিরা তাতে আগ্রহ দেখাননি। এই প্রক্রিয়াও থমকে গেছে সেখানে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউজিসির এক কর্তাব্যক্তি জানান, ইউজিসির বর্তমানে আসলে তেমন কোনো ক্ষমতা নেই। ডাকঘরের মতো এটি শুধু চিঠি চালাচালির প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলে উচ্চশিক্ষা কমিশন বা ইউজিসির সক্ষমতা বৃদ্ধি- দুই ক্ষেত্রেই যেসব প্রস্তাব করা হয়েছিল তার যেকোনো একটি চূড়ান্ত হলেও ইউজিসির স্বায়ত্তশাসন নিয়েই শঙ্কা ছিল। কারণ ইউজিসি তখন শিক্ষক নয় বরং আমলাদের দ্বারা পরিচালিত হওয়ার শঙ্কা ছিল। এভাবে প্রস্তাবনা পাস হলে ইউজিসি আরও অকার্যকর হয়ে পড়ত। শিক্ষাবিদদের হাতে ইউজিসি রেখেই এর সক্ষমতা বাড়ানোর দাবি জানান তিনি। সূত্র জানায়, মানসম্মত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর ইউজিসি গঠন করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির ১০ নম্বর আদেশের মাধ্যমে এটি উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিধিবদ্ধ হয়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় ছিল মাত্র ছয়টি। ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে ইউজিসি গঠন করা হয়েছিল সেই ইউজিসি এখন দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় তদারকির কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর প্রতিবেদককে বলেন, ইউজিসির সক্ষমতার অভাব রয়েছে একথা সত্য, তবে যেটুকু ক্ষমতা আছে সেটুকুও আমরা প্রয়োগ করতে পারি না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আইন না মানলে তাদের বাজেট বন্ধ করার ক্ষমতা ইউজিসির রয়েছে। কিন্তু সেটাও করা যায় না। ব্যবস্থা নেওয়ার যে সংস্কৃতি তা চালু হয়নি এখানে। তিনি বলেন, ইউজিসির এমন ক্ষমতায়ন হওয়া দরকার যেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনিয়ম করলেই তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ইউজিসি মন্ত্রণালয়ের অধীন কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। এটি একটি বিধিবদ্ধ পর্ষদ। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করে ইউজিসি তাদের অধীন প্রতিষ্ঠান। আর ইউজিসিও নিজেদের স্বতন্ত্র ভাবতে কুণ্ঠাবোধ করে। তাই ইউজিসির সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই, তারা শুধু মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিতে পারে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, শিক্ষকদের নেতৃত্বে উচ্চশিক্ষা কমিশন আমরা পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে দেখছি। পাকিস্তানের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশেও উচ্চশিক্ষা কমিশন রয়েছে, কিন্তু আমাদের দেশে এটি করা সম্ভব হয়নি। সাবেক এ চেয়ারম্যান বলেন, ইউজিসির বর্তমান যে ক্ষমতা রয়েছে তা দিয়ে উচ্চশিক্ষার তদারকি করা অসম্ভব।

সর্বশেষ খবর