শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

চলছে উপজেলা ভোটের কর্মযজ্ঞ

♦ প্রস্তুত ভোট কেন্দ্রের তালিকা ঈদের পর শুরু প্রশিক্ষণ ♦ প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র জমা শেষ ১৫ এপ্রিল ♦ দ্বিতীয় ধাপে মনোনয়নপত্র দাখিল শেষ ২১ এপ্রিল

গোলাম রাব্বানী

চলছে উপজেলা ভোটের কর্মযজ্ঞ

সংসদ নির্বাচনের চার মাসের মাথায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে উপজেলা নির্বাচন। এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কর্মযজ্ঞ চলছে নির্বাচন কমিশনে। ইতোমধ্যে দুই ধাপের ভোটের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন আয়োজনের সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ হয়েছে। এবারে দেশের ৪৮১টি উপজেলা পরিষদ চার ধাপে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় ১৫ এপ্রিল; ইতোমধ্যে অনেক প্রার্থী অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল বিষয়ে খোঁজখবর দিচ্ছেন। এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোট কেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করেছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। নির্বাচনের বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন এমন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ঈদের পরে ২০ এপ্রিলের পর শুরু হবে।

এদিকে প্রথম ধাপে দেশের ১৫২টি উপজেলা পরিষদে ভোট গ্রহণ হবে ৮ মে। দ্বিতীয় ধাপে ১৬১ উপজেলা পরিষদে ভোট গ্রহণ হবে ২১ মে। এ ছাড়া তৃতীয় ধাপে ২৯ মে ১১১ উপজেলায় এবং চতুর্থ ধাপে ৫ জুন ৫২টি নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট হবে।

ইসির একজন কর্মকর্তা বলছেন, তফসিল ঘোষণার সময় কোন উপজেলায় ইভিএম এবং কোন উপজেলায় ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণ হবে সেই তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে। তবে যেখানেই ব্যালটে ভোট হবে, সেই উপজেলার ভোট কেন্দ্রে সকালে যাবে ব্যালট পেপার। দেশে ৪৯৫টি উপজেলা পরিষদ রয়েছে। সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ১০ মার্চ। পাঁচ ধাপের ওই ভোট শেষ হয় গত জুনে। আইন অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদের মেয়াদ শুরু হয় প্রথম সভার দিন থেকে। পরবর্তী পাঁচ বছর নির্বাচিত পরিষদ দায়িত্ব পালন করেন। মেয়াদপূর্তির আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

প্রথম ধাপে ভোট ৮ মে : প্রথম ধাপে দেশের ১৫২টি উপজেলা পরিষদে ভোট গ্রহণ হবে ৮ মে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ হবে। এক্ষেত্রে ২২ উপজেলায় ভোট হবে ইভিএমে; বাকি ১৩০টি উপজেলায় ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণ করবে ইসি। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় ১৫ এপ্রিল, বাছাই ১৭ এপ্রিল, প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ২৩ এপ্রিল এবং ভোট গ্রহণ হবে ৮ মে।

দ্বিতীয় ধাপে ভোট ২১ মে : দ্বিতীয় ধাপে ১৬১ উপজেলা পরিষদে ভোট গ্রহণ হবে ২১ মে। দ্বিতীয় ধাপের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিল ২১ এপ্রিল শেষ সময়, মনোনয়নপত্র বাছাই ২৩ এপ্রিল, আপিল ২৪-২৬ এপ্রিল ২৭ থেকে ২৯ এপ্রিল। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৩০ এপ্রিল, প্রতীক বরাদ্দ ২ মে। আর ভোট গ্রহণ হবে ২১ মে। দ্বিতীয় ধাপে ১৬১ উপজেলায় ভোট হবে। নয়টি জেলায় ইভিএমে ভোট হবে।

প্রস্তুত হচ্ছে ভোট কেন্দ্রের তালিকা : উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট কেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করতে মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব রৌশন আরা বেগম নির্দেশনাটি জেলা ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে- আগামী ৮ মে অনুষ্ঠেয় প্রথম ধাপের উপজেলাসমূহের ভোট কেন্দ্রের তালিকা সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা/জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে অনুরোধ করা হলো। এ ছাড়া দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়ের নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোটার তালিকা লিঙ্ক পাওয়ার পর উক্ত তিন পর্যায়ের চূড়ান্ত ভোট কেন্দ্রের তালিকা পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সব সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা/জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে অনুরোধ করা হলো। উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র স্থাপনে প্রার্থীর মালিকানাধীন কোনো স্থানে ভোট কেন্দ্র নির্ধারণ না করতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া প্রার্থীর অধীনে চাকরিরত বা অতীতে অধীনস্ত ছিলেন, এমন কাউকে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা পদে নিয়োগ না দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন।

প্রার্থীর মালিকানাধীন স্থানে ভোট কেন্দ্র নয় : উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রার্থীর মালিকানাধীন কোনো স্থানে ভোট কেন্দ্র নির্ধারণ না করতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান এ সংক্রান্ত নির্দেশনা মাঠপর্যায়ে পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে : (ক) কমিশন ভোট গ্রহণের তারিখের অন্যূন ১৫ (পনেরো) দিন পূর্বে উক্ত চূড়ান্ত তালিকা সরকারি গেজেটে প্রকাশ করবে এবং প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে যে সব এলাকার ভোটাররা ভোটদান করবেন সে সব এলাকার নামও চূড়ান্ত তালিকায় উল্লেখ করতে হবে; তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরও, বিশেষ পরিস্থিতিতে কমিশন যে কোনো ভোট কেন্দ্র পরিবর্তন করতে পারবে; (খ) রিটার্নিং অফিসার প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোট কেন্দ্রের তালিকা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট উপজেলার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট কেন্দ্রের ব্যবস্থা করবেন। (গ) সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয় এরূপ স্থানকে ভোট কেন্দ্র হিসেবে নির্ধারণ করা যাবে না। (ঘ) পুরুষ ও মহিলা ভোটাররা যাতে পৃথকভাবে ভোট প্রদান করতে পারেন তদুদ্দেশ্যে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট কক্ষের ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং প্রতিটি ভোট কক্ষে ভোট চিহ্ন প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্থান রাখতে হবে। (ঙ) কোনো প্রার্থীর মালিকানাধীন বা নিয়ন্ত্রণাধীন কোনো স্থানে কোনো ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা যাবে না। (চ) প্রার্থিতা চূড়ান্তকরণের পর কোনো প্রার্থীর মালিকানাধীন বা নিয়ন্ত্রণাধীন কোনো ভোট কেন্দ্র স্থাপিত হয়ে থাকলে কমিশন তা পরিবর্তন করতে পারবে। (ছ) প্রত্যেক ভোট কেন্দ্রের প্রতিটি ভোট কক্ষে ভোট চিহ্ন প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক গোপন কক্ষ থাকবে।

চলছে প্রশিক্ষণ : উপজেলা নির্বাচনে বিভিন্ন কর্মকর্তাদের যারা প্রশিক্ষণ দেবেন; সেই প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে গত ১১ মার্চ। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ (টিওটি) চলমান রয়েছে। আগারগাঁওয়ের নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) এই কার্যক্রম চলছে। ধাপে ধাপে এই প্রশিক্ষণ চলবে।

এবারে অনলাইন মনোনয়নপত্র দাখিল সহজ করতে প্রতিটি উপজেলা ও জেলা অফিসে হেল্প ডেক্স চালু করেছে কমিশন। এ জন্য হেল্ড ডেক্সের কর্মকর্তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়েছে কমিশন। প্রার্থীরা চাইলেও হেল্প ডেক্স থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা নিতে পারবেন।

২০ এপ্রিলের পর কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ : উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন এমন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ২০ এপ্রিলের পর শুরু হবে। এতে প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলার মাঠপর্যায়ে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা অংশ নেবেন। গতকাল নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

ইসির জনসংযোগ শাখার পরিচালক মো. শরিফুল আলম জানান, ইসির নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারসহ সব নির্বাচন সংশ্লিষ্ট এবং ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ সংক্রান্ত বিধি-বিধানের ওপর নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই) প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এর আওতায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের জন্য ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের তফসিলে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ২০ এপ্রিলের পর এই প্রশিক্ষণ শুরু হতে পারে। আবার ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে নতুন করে যোগ দেওয়া এবং সদ্য পদোন্নতি পাওয়া প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণও চলমান রয়েছে।

সর্বশেষ খবর