রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

ব্রাজিল বাণিজ্যে বড় বাধা উচ্চ শুল্ক

♦ বন্ধ হয়ে গেছে পাটপণ্য ও হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি ♦ তৈরি পোশাকে কর দিতে হয় ৬০ শতাংশ ♦ মুক্তবাণিজ্যে সম্ভাবনা দেখছে বাংলাদেশ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ব্রাজিল বাণিজ্যে বড় বাধা উচ্চ শুল্ক

ল্যাটিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে পণ্য রপ্তানির যত সমস্যা তার চেয়েও বেশি সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের। দেশটিতে বাণিজ্য সম্প্রসারণে প্রধান বাধা হচ্ছে উচ্চ শুল্কহার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পর্যালোচনা করে দেখেছে, এই বাধা দূর করে দেশটিতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করা দরকার। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওরো ভিয়েরার ঢাকা সফরে সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। দুই দিনের সফরে আজ ঢাকায় আসার কথা রয়েছে তাঁর।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিরিক্ত শুল্কারোপের কারণে দেশটিতে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এন্টি ডাম্পিংয়ের কারণে ১৯৯২ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে পাটজাত পণ্য রপ্তানি। তৈরি পোশাক রপ্তানির সম্ভাবনা থাকলেও এতে প্রধান বাধা শুল্ক সমস্যা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে ব্রাজিলে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে ৩৫ ভাগ আমদানি শুল্কসহ প্রায় ৬০ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। এত বেশি শুল্ক দিয়ে দেশটির বাজারে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরে শুল্ক প্রত্যাহারসহ দেশটির সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হবে।

সূত্র জানায়, ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের লক্ষ্য বাংলাদেশে তাঁদের বাণিজ্য সম্প্রসারণ। ভোজ্য তেল ও চিনি রপ্তানির পাশাপাশি গরুর মাংস ও তুলা রপ্তানির দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে দেশটি। বাংলাদেশে তুলা রপ্তানির জন্য একটি ওয়্যারহাউস স্থাপন করতে চায় ব্রাজিল। বাণিজ্য সম্প্রসারণে দ্বিপক্ষীয় এই আলোচনায় বাংলাদেশের মনোযোগ থাকবে শুল্কবাধা দূর করার দিকে। এ জন্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশের লাভ মুক্ত বাণিজ্যে : ব্রাজিলের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনায় লাভ দেখছে বাংলাদেশ। দেশটি দক্ষিণ আরেমিকার বাণিজ্য জোট মারকোসারের সদস্য। এই জোটের গুরুত্বপূর্ণ অন্য তিন সদস্য আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে ও প্যারাগুয়ে। মারকোসার জোটভুক্ত দেশগুলোর ৩০ কোটি ক্রেতা রয়েছে। প্রায় চার ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার জিডিপির এ অঞ্চলে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার তৈরি করতে পারলে ইউরোপ-আমেরিকার ওপর নির্ভরশীলতা কমবে; বাড়বে রপ্তানি বাণিজ্য, স্ফীত হবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ২০১৯ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলসহ ল্যাটিন আমেরিকার মারকোসার জোটভুক্ত চারটি দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করলে লাভবান হবে বাংলাদেশ। এতে বাংলাদেশের আমদানি শুল্ক বাবদ বছরে রাজস্ব ক্ষতি হবে প্রায় ১১ মিলিয়ন ডলার। বিপরীতে যে পরিমাণ রপ্তানি বাড়বে তাতে লাভ হবে প্রায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ওষুধ, পাটজাত পণ্য, হিমায়িত পণ্য ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, ল্যাটিন আমেরিকার দেশ বিশেষ করে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনায় বাণিজ্য বাড়াতে গত এক দশকে বেশ কয়েকবার আলোচনার সূত্রপাত করা হয়। ২০১৩ সালে তখনকার বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদের নেতৃত্বে একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল ব্রাজিল, চিলি ও কলম্বিয়া সফর করেন। ২০১৯ সালে তখনকার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির নেতৃত্বে আরেকটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল ল্যাটিন আমেরিকা সফর করেন। বাজার সম্প্রসারণে লক্ষ্য ছিল মারকোসার জোটভুক্ত ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে ও প্যারাগুয়ে। তখন ওই দেশগুলোর নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনায় মুক্তি বাণিজ্যেও বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছিল। এরপর করোনা মহামারির কারণে ওই আলোচনা আর বেশি দূর আগায়নি। এখন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরে এ বিষয়ে আলোচনা শুরুর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, মারকোসার জোটে সবচেয়ে প্রভাবশালী সদস্য রাষ্ট্র হচ্ছে ব্রাজিল। আমরা যদি ব্রাজিলকে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে রাজি করাতে পারি তবে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণের পথ খুলে যাবে।

সর্বশেষ খবর